উদ্যোক্তা মার্চিন ক্লেজনস্কি

মার্চিন ক্লেজনস্কি’র ১৯৮৯ সালে পোল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিন বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে সে চলে যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং শিকাগোতে তাঁর পরিবার বসবাস করতে থাকে। উদ্যোক্তা মার্চিনের বয়স যখন ১৮ বছর, উদ্যোক্তা ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সময়েই তিনি স্টার্ট-আপ কোম্পানি পরিচালনার বড় ঝুঁকি নিয়েছিলেন।

উদ্যোক্তাদের জীবনে কিছু ‘মুহূর্ত’ আসে। আর সেই মুহূর্ত তাদের ভাবতে শেখায় যে তাদের বিশেষ কিছু করার আছে। আর এক্ষেত্রে মার্চিন ক্লেজনস্কি-র সেই সময়টি আসে যখন সে ছাত্র অবস্থাতেই অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়ার নিয়ে কাজ শুরু করেন। ২০০৮ সালে মার্চিনের কোম্পানি ম্যালওয়্যারবাইটের বয়স যখন এক বছরেরও কম সময়, তখনই ম্যালওয়্যারবাইট সাইবার নিরাপত্তার জগতে ব্যাপক সুনাম অর্জন করে।

২০১২ সালে উদ্যোক্তা মার্চিন ক্লেজনস্কি কম্পিউটার সায়েন্সে তার স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এর কয়েক বছরের মধ্যেই সে তার ম্যালওয়্যারবাইটকে কয়েক মিলিয়ন ডলার উপার্জনকারী একটি ব্যবসায় উন্নীত করতে সক্ষম হন। বর্তমানে তার কোম্পানির ম্যালওয়্যারবাইটের বার্ষিক আয় ১২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, আর এর গ্রাহক ছড়িয়ে আছে পুরো বিশ্বব্যাপী।

২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসে ম্যালওয়্যারবাইট চালু করার পর সেটি এত দ্রুত প্রসার লাভ করে যে মার্চিন ঠিক করেছিলেন সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন ম্যালওয়্যারবাইট ধীরগতি করে দেবে। অবশ্য উদ্যোক্তার মায়ের চিন্তাভাবনা ছিলো ভিন্ন।

“ধীরে ধীরে ব্যবসাটি দ্রুত চালু হয়ে উঠছিলো ঠিক সেই সময় উদ্যোক্তা সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি আর পড়ালেখার জন্য স্কুলে যাবেন না। মার্চিন তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথাটি তার মাকে জানানোর পর মাত্র ১৫ সেকেন্ডের মাথায় ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে স্কুলের দিকে যেতে হয়েছিলো”- বলছিলেন উদ্যোক্তা মার্চিন।

আসলে যেটি মার্চিনের মাকে সবচেয়ে বেশি ভাবিয়ে তুলেছিলো তা হলো ব্যবসার অংশীদারকে নিয়ে। তখন উদ্যোক্তা মার্চিনের বয়স ছিলো ১৭ বছর আর অংশীদার ব্রুস হ্যারিসনের বয়স ছিলো ৩৫ বছর। দীর্ঘ দিন ধরেই মার্চিন ও ব্রুস হ্যারিসন কম্পিউটার সফটওয়্যার তৈরি করা নিয়ে একসঙ্গে কাজ করছিলেন।

এই দীর্ঘ সময়ে মার্চিন এবং ব্রুসের মধ্যে কখনো সামনা সামনি দেখা হয়নি। ব্রুস কম্পিউটার সারাইয়ের কাজ করতেন ম্যাসাচুসেটসে। আর মার্চিন কাজ করতেন শিকাগোতে। এমনকি ম্যালওয়্যারবাইট কোম্পানি প্রতিষ্ঠার প্রথম ১২ মাসের মধ্যেও তাদের দুজনের মধ্যে একবারও সাক্ষাত ঘটেনি।

ব্রুস হ্যারিসন বর্তমানে যিনি প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা বিভাগের প্রধান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে থেকে ম্যালওয়্যারবাইটের কাজ করে যাচ্ছেন। সেখানে মার্চিন থাকছেন সিলিকন ভ্যালিতে এর প্রধান কার্যালয়ে। এ মুহূর্তে প্রতি মাসে ১৮৭ মিলিয়ন ভাইরাস স্ক্যান করে ম্যালওয়্যারবাইট। আর প্রতিদিন ২ লাখ ৪৭ হাজারের বেশিবার ডাউনলোড করা হয় এটি। অন্য অনেক অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানির মতোই এটি ‘ফ্রিমিয়াম’ ব্যবসা মডেলে চলে, যার অর্থ মূল সংস্করণ গ্রাহক পাবে বিনামূল্যে তবে সেটির আরো উন্নত সংস্করণের জন্যে গ্রাহককে পয়সা খরচ করতে হবে।

উদ্যোক্তা মার্চিন ক্লেজনস্কি তাঁর শুরুর দিক নিয়ে বলেন, ‘প্রথমদিকে আমি কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলাম। তখনকার সবশেষ কম্পিউটার ভাইরাসটি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে হঠাৎই আমার কম্পিউটার স্ক্রিনে সাদা একটি পৃষ্ঠা ভেসে আসে, সেখানে বলা হয় যে খারাপ কাজের জন্যে স্কুল নেটওয়ার্ক থেকে আমাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তখন আমি বুঝলাম এটি ভাইরাসের আক্রমণ। সঙ্গে সঙ্গে উদ্যোক্তা মার্চিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি হেল্প লাইনে যোগাযোগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তারা আমার চেয়েও বয়সে ছোট একজনকে পাঠালো বিষয়টি ঠিক করার জন্য। সে পুরো বিষয়টি দেখে জানালো যে, আমি বেশ বড় ঝামেলাতেই পরেছি। এরপর ঠিক আমার সামনে বসেই সে আমার প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে গিয়ে ম্যালওয়্যারবাইট ডাউনলোড করলো’।

উদ্যোক্তা মার্চিন এই পরিস্থিতির বর্ণনা করতে গিয়ে আরো বলেন, ‘আমি তাকে কিছুই বলিনি। ছেলেটির পেছনে দাঁড়িয়ে দেখে গেলাম যে সে আমার সফটওয়্যার দিয়েই আমার কম্পিউটারের সমস্যা সমাধান করে দিলো। আমি তাকে জানতে দেইনি আমার পরিচয়। কিন্তু আমি আজ সেই মুহুর্তটিকে পছন্দ করি’।

উদ্যোক্তার ম্যালওয়্যারবাইট কোম্পানিটি খুব চমৎকারভাবে কাজ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু একটা সময় উদ্যোক্তা কিছু কঠিন বিষয় সম্পর্কে শিক্ষালাভ করেন, যা তার ব্যবসাকে ২০১৪ সালে খারাপের দিকে নিয়ে যায়।

উদ্যোক্তা মার্চিন বলেন, ‘আমরা একটি ক্ষতিকর সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করছিলাম যার ফলে আমাদের ভুলে হাজার হাজার কম্পিউটার বন্ধ হয়ে যায়। তখন ৯১১ এর জরুরি সেন্টার বন্ধ হয়ে যায়, সঙ্গে হাসপাতালের কাজও বন্ধ হয়। আর এমন ঘটনা প্রায় প্রতিটি অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানির ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে। এই ধরণের ঘটনায় আপনার প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে যেতে পারে, ফলে আপনি গ্রাহকের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলতে পারেন‘। পরবর্তীতে তারা এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়।

বর্তমানে ২৯ বছর বয়সী মার্চিন তার এই কম বয়সের সুবিধাকে অন্যসব তরুণদের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার জন্য উৎসাহিত করতে পারে।

(তথ্যসূত্র ও ছবি ইন্টারনেট থেকে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here