স্কুল পড়ুয়া আবু জাফর জুয়েলের স্বপ্ন ছিলো বড় হয়ে উদ্যোক্তা হবার। দারিদ্রতার চপেটাঘাতে পরিবার যখন দিশেহারা তখনই দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া জুয়েলের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। পরিবারের কথা চিন্তা করে মাত্র ১৫ বছর বয়সেই ২০০২ সালে রিজেন্ড অ্যালুমিনিয়াম নামে একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ শুরু করেন জুয়েল।
প্রথমে হেলপার হিসেবে কাজ শিখে পরবর্তীতে নিজে মিস্ত্রী হয়ে তাদের অধীনে সিলভারের হাড়ি পাতিল তৈরি করতে থাকেন জুয়েল। সেখানে ৪ বছর কাজ করার পর বেশ কিছু টাকা জমা হয় তার কাছে। মোক্ষম সময় এসে যায় ছোটবেলার সেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নটা পূরণের। সিদ্ধান্ত নিলেন জমানো টাকা দিয়ে একটি অ্যালুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি দিবেন।
২০০৭ সালে ৫০ হাজার টাকায় দুটি সিলভারের হাড়ি তৈরির মেশিন কিনে রাজশাহীর সপুরা এলাকার মালদাহ কলোনীতে মাত্র একজন কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন উদ্যোক্তা আবু জাফর জুয়েল।
একজন কর্মী নিয়ে নিজে সঙ্গে থেকে দুই থেকে তিন রকমের হাড়ি, কড়াইয়ের ঢাকনা, সিলভারের গামলা তৈরি করতে থাকলেন। তিন মাস পর এলো কাজের প্রথম অর্ডার। ২০ কেজি হাড়ি বানানোর অর্ডার পেলেন উদ্যোক্তা। তারপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
উদ্যোক্তা বার্তাকে তিনি জানান , “ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল আমি উদ্যোক্তা হবো। স্বপ্ন ছিলো আমার নিজের বড় একটি প্রতিষ্ঠান থাকবে। পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমার সেই স্বপ্নটি ভেঙ্গে যায়। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম এবং অগাধ আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করে আজ আমি উদ্যোক্তা হতে পেরেছি”।
২০১৫ সালে এসে মালদাহ কলোনীতে ‘জি এস’ নামে একটি শো-রুম দেন জুয়েল। সেখানে নিজের তৈরি দুই থেকে তিন রকমের হাড়ি, কড়াইয়ের ঢাকনা, সিলভারের গামলা এবং ক্রোকারিজের জিনিসপত্র বিক্রি করতে থাকেন। ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটি বড় হতে থাকলো। বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলেন তিনি। ২০১৭ সালে এসে বিসিক শিল্প নগরী এলাকায় একটি জায়গা ভাড়া নিয়ে আরো ৪টি মেশিন বসিয়ে একটি ওয়ার্কশপ দেন উদ্যোক্তা।
মেসার্স ‘জি এস মেটাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের সেই ওয়ার্কশপে ৮ জন কর্মী নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। মাত্র একজন কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে ১৬ জন কর্মী নিয়ে ৩টি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে যাচ্ছেন উদ্যোক্তা আবু জাফর জুয়েল।
রাজশাহী থেকে রাইদুল ইসলাম শুভ
এসএমই করেস্পন্ডেন্ট ,উদ্যোক্তা বার্তা