উদ্যোক্তা- শিরিন ইসলাম

জীবনের গতিবিধি মুহুর্মুহু বদলায়। ক্ষণেক্ষণে সিদ্ধান্ত বদলে পাল্টে দিতে হয় জীবনের মোড়। এই সিদ্ধান্ত নেবার সময়ে কেউ সহযোগী হিসেবে পান তার প্রিয়জনকে, কেউ বা পুরো সময়টাকে একা হাতে সামলে নিতে হন দিশেহারা। এই সময়টায় লক্ষ্যে যারা থাকেন স্থির এবং আত্মকর্মে বলীয়ান ও একনিষ্ঠ জীবনে সফলতার মুখ দেখেন তারাই।

উদ্যোক্তার সন্তান রণ মায়ের সহযোগী যোদ্ধা

শিরিন সুলতানা, একজন মাঠকর্মী হয়ে এশিয়া ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে কাজ শুরু করেন ১৯৮৪ সালে। সেখানে একসময় পদোন্নতি আসে। সুপার ভাইজার হিসেবে কাজ করেন দীর্ঘদিন। কো-অর্ডিনেটর হিসেবে একসময় মনীষা নামের একটি প্রতিষ্ঠানেও কাজ করেন। ১৯৯৬সালে একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকুরী শুরু করেন। ১৩ বছর চাকুরীর বয়সে ঘরে বসে রাতের অবসরে নিজে নিজে বাচ্চাদের জামা বানাতেন, শাড়িতে নকশা করতেন, রংতুলিতে রাঙাতেন কাপড়। সেই পণ্যগুলো নিয়ে যেতেন সহকর্মীদের কাছে, বিভিন্ন উৎসব পার্বনে অফিসের মেলাগুলোতে স্টল দিতেন। লক্ষ্য বাড়তি কিছু আয়-রোজগার। অফিসের সময়টুকুতে নিজের ব্যস্ততায় স্টলের কাছে আসতে পারতেন না। জীবনের খুঁটি হয়ে লক্ষ্মী দুটো সন্তান ছিল পাশে। মায়ের ব্যস্ততায় ছেলেমেয়ে দুজন স্টলে থাকতেন পণ্য কেনাবেচায়।

উদ্যোক্তার ডিজাইন করা শাড়ী

একসময় সন্তানেরা বড় হলেন। মা যেন আরো আস্থা পেলেন নিজের উপর। সন্তানরা হাল ধরলো মায়ের ছোট্ট ব্যবসার। ২০০৫ সাল থেকে নিজের ব্যবসা উদ্যোগটি প্রতিষ্ঠা করলেন শিরিন সুলতানা। সেসময় মেয়ে রেজওয়ানা সবে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়েন। নিজের জমানো টাকা নিয়ে মায়ের ব্যবসার মূলধন জোগালেন। মায়ের উৎপাদিত পণ্যের ডিজাইনার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো কিশোরী মেয়ে। মায়ের ব্যবসা ঘুরে দাড়ালো। সেদিনের ছোট্ট মেয়ে রেজওয়ানা আজ ফ্রিল্যান্সিং ডিজাইনার আর ছেলেটি আজ একজন প্রকৌশলী। ছেলেমেয়ে বড় হলেও আজও মায়ের কাজে সেদিনের মতোই সহযোগিতা নিয়ে পাশে আছেন। কথায় কথায় একসময় ছেলে রণ জানালেন, “মায়ের জন্য আমি এক কায়িক শ্রমিক। মায়ের ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে আমি পণ্য কাঁধে কুলি হয়ে আজীবন মায়ের সাথে থাকবো।” মায়ের সকল কাজ সামলে নিতে ছেলেমেয়ের এমন সতঃস্ফুর্ততার কথা বলতে গিয়ে একসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন সফল উদ্যোক্তা শিরিন সুলতানা। একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সবসময়ের জন্য পাশে থাকা সন্তান হলো মায়ের সবচেয়ে বড় শক্তি।

মেলা স্টলে উদ্যোক্তা-ক্রেতা

বিসিক থেকে ট্রেনিংটিও উদ্যোক্তা জীবনে অনেকটা এগিয়ে নিয়েছে শিরিন সুলতানা। নিজের উদ্যোগ ‘পরিধান’ কে দেশব্যাপী সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চান এই সফল উদ্যোক্তা। বর্তমানে পরিধানে নিয়মিত কাজ করছেন ১০জন মহিলা কর্মী ও ২০জন পুরুষ কর্মী। সকল উদ্যোক্তাদের প্রতি শিরিন সুলতানা অনুরোধ, “যে উদ্যোগ নিয়েই সামনে আগান না কেন, ধৈর্য্যশক্তি হারানো যাবে না। ধৈর্য্য নিয়ে ক্লায়েন্টকে বিনয়ের সাথে মানিয়ে নেওয়াও উদ্যোক্তার অন্যতম বড় গুণ”।

 

 

সাদিয়া সূচনা
ছবি- বিপ্লব আহসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here