ছাতুতেই উদ্যোক্তা রিপানুরের বাজিমাত

0
উদ্যোক্তা-রিপানুর ইসলাম

রিপানুর ইসলামের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ। যেহেতু ঢাকার পাশেই তাই নাড়িরটানে বেশিরভাগ সময়ই গ্রামে ঘুরতে যান। আর সেখান থেকেই জীবনে অনেক কিছুর অভিজ্ঞতা হয়। তিনি যখন গ্রামে যেতেন তখন বিভিন্ন মেলায় ঘুরে বেড়াতেন। সেখানকার বিভিন্ন দেশিয় পণ্য তাকে আগ্রহী করে তুলতো। কিন্তু বেশিরভাগ ক্রেতার আগ্রহই বিদেশি পণ্যের প্রতি। তিনি খেয়াল করেছেন, তার বন্ধুরা কোনো বিদেশি পণ্য কিনলে সেটা নিয়ে খুব গর্ব করতো। এমনকি খাদ্যপণ্য নিয়েও। যেমন বিদেশি চকলেট কিনে। যদিও সেগুলো আদৌ বিদেশি ছিল কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তিনি এগুলো ঠিক মেনে নিতে পারতেন না। মেলায় দেখেছি তার বয়সী অনেকেই দোকান দেয়। নিজেদের পণ্য নিয়ে আসে। বিশেষ করে মাটির জিনিসপত্র। এগুলো তাকে খুব আগ্রহী করে তুলতো। তিনিও মনে মনে ভাবতেন, ‘একদিন আমিও এসব দেশি পণ্য বিক্রি করবো’।

রিপানুরের বয়স তখন ৮ কী ৯ বছর। নানু বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। নানু তাকে ছাতু খাওয়ালেন। প্রথমবার অদ্ভুত এক জিনিস খেয়ে খুবই মজা পেলেন। এ সম্পর্কে নানুর কাছ থেকে বিস্তারিত জানলেন। সেই থেকে ছাতুর প্রতি তার একটু দুর্বলতা তৈরি হলো। এসএসসি শেষ করার পর অজান্তেই ছাতু নিয়ে ইন্টারনেটে একটু ঘাটাঘাটি করেন। দেখলেন ছাতু দিয়ে হরেক রকমের পণ্য তৈরি করা সম্ভব। সিদ্ধান্ত নিলেন ছাতু নিয়েই কাজ করবেন। পরিবারকে জানালেন। অনুমতিও মিললো। সেই থেকে ছাতু নিয়েই তার উদ্যোক্তা জীবন শুরু। আর এর সবচেয়ে বড় সহযোগী ছিল তার পরিবার, বিশেষ করে বাবা-মা। এমনকি তার প্রথম ক্রেতাও তার বাবা-মা।

দেশে যখন করোনা মহামারী শুরু হয় তখনই মূলত তার ছাতু নিয়ে উদ্যোগ বাস্তবে রূপ নেয়। চারপাশে লকডাউন, দেশের অবস্থা তেমন ভালো না। তিনি তখন উই এবং ডিএসবি নামে গ্রুপের সন্ধান পেলেন এবং উই গ্রুপের মাধ্যমে ছাতু সম্পর্কে পোস্ট দিতে শুরু করলেন। সেখান থেকে তাকে অনেকে চিনে তার কাছে অর্ডার করে। এভাবে আস্তে আস্তে কয়েকদিন চলতে থাকল। তারপর ভাবলেন, শুধু ছাতুপণ্য নিয়ে যেহেতু টিকে থাকা যাবে না তাই এর পাশাপাশি আরও কয়েকটা পণ্য যোগ করলেন। এরমধ্যে রয়েছে আখের গুড়, ঘি, সরিষার তেল, তিলের তেল, মধু ইত্যাদি। ধীরে ধীরে পণ্য সম্ভার বাড়তে থাকলো।

কেবলমাত্র ছাতু দিয়েই হরেক রকমের পণ্য প্রস্তুত করছেন তিনি। উদ্যোক্তা নিজে ক্রিয়েটিভ আইডিয়া থেকে ২০ ধরনের ছাতুর ইনোভেশন, ৪ ধরনের ছাতুর লাড্ডু, ছাতুর পিঠা, ছাতুর চিপস এবং ছাতুর আরও ইনোভেশন আনার চেষ্টা করছেন। মহামারীর সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশীয় কৃষি পণ্য এনে প্রসেসিং করে উদ্যোক্তার জীবন শুরু করেন। দেশীয় উদ্যোক্তাদের মধ্য এতোগুলা ছাতুর ক্রিয়েশন তিনিই প্রথম শুরু করেছেন। যা এখনো কেউ আনতে পারেনি।

প্রথমে ২ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে উদ্যোগ শুরু করেন রিপানুর। তার পণ্য দেশিগ্রোসারি ডট এক্স ওয়াই জেড নামে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রি করেন। এক বছর তিনি ২০০ কেজির উপরে ছাতু বিক্রি করেন এবং অন্যান্য পণ্যগুলো ৫০-১০০ কেজির উপরে বিক্রি করেছেন। যেহেতু ছাতু একটি ফুড আইটেম সেহেতু অনেক প্রসেসিং করে এবং প্যকেজিং করে বাজারজাত করতে হয়। ফুড আইটেমের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। তবে তিনি এখনো এ সম্পর্কিত কোনো প্রশিক্ষণ নিতে পারিনি। এজন্য সব সময় সঠিক মান রক্ষা করতে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তিনি যতটুকু এগিয়েছেন সব কিছু নিজের প্রচেষ্টায়। তার দৃঢ় বিশ্বাস প্রশিক্ষণ পেলে তার পণ্যের গুনগত মান আরও উন্নত করা সম্ভব হবে।

ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট-এর ২য় বর্ষের ছাত্রী উদ্যোক্তা রিপানুর ইসলামের জন্ম এবং বেড়ে উঠা ঢাকাতেই। ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয় রিপানুর। উদ্যোক্তা বার্তার সাথে দীর্ঘ আলাপচারিতায় উদ্যোক্তা তার উদ্যোগ সম্পর্কে বলেন, ‘আমার অল্প বয়স ও ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা তবুও আমি মনে করি, কোনো কিছু করতে হলে দরকার অনেক পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়। কোনো ভালো কাজ করতে গেলে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতেই হবে। আমিও হয়েছিলাম। সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয়েছে পণ্য ডেলিভারি নিয়ে। প্রথম দিকে ডেলিভারি পাঠাতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে এগুলোকে জয় করে ও ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ। আমি চাই একদিন আমার পণ্য সম্পর্কে পুরো দেশের মানুষ জানুক এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমার পণ্য ছড়িয়ে পড়ুক’।

সাইদ হাফিজ
উদ্যোক্তা বার্তা
, খুলনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here