চায়ের ধরন ২০০ এর উপর। অবাক হলেন?

0
উদ্যোক্তা মোকলেস উদ্দিন

ক্লান্তি দূর করতে এক কাপ চায়ের তুলনা হয় না। সেই চা যদি হয় হারবাল তা হলে কোন কথাই নেই। ভাটি বাংলার প্রাণকেন্দ্র নেত্রকোণা শহরের মোক্তারপাড়ায় স্বদেশ হাসপাতালের নিচতলায় ‘কবি মামার চা’ তার সেরা উদাহরণ। টি-স্টলটির মোকলেস উদ্দিন চা বানাতে পারে ২১০ রকমের। বিকেল হলেই চোখে পড়ে চা-প্রেমীদের মিলন মেলা।

লাল চা ও দুধ চা দিয়ে শুরু করলেও এখন তিনি তৈরি করছেন হরেক রকমের চা। প্রতিনিয়তই উপকারী ও সুস্বাদু চা‘র নতুন নতুন রেসিপি তৈরি করে যাচ্ছেন স্ব-শিক্ষিত ‘কবি’ মোকলেস।

ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন কৌতুহলী। নতুন কিছু করতে ভালোবাসতেন। চাইতেন কিছু উদ্ভাবন করতে। সেই কৌতুহল থেকেই তিনি ৬ থেকে ৭ মাসের গবেষণায় তৈরি করেন চা পাতা ছাড়া লাল চা। তার দেড় বছর পর দুধ চা। পর্যায়ক্রমে তালিকায় যুক্ত হয় তেঁতুল চা, মাল্টা চা, লঙ্কা চা-সহ ৬৫টি ধরনের চা।

চা’র নানা ধরনের সঙ্গে তার পরিচিতিও তাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। উদ্যোক্তা বার্তাকে মোকলেস উদ্দিন থেকে ‘কবি মামা’ হয়ে উঠার গল্প বলেছেন তিনি: আমি ছোটবেলা থেকেই একটু দুষ্টু ছিলাম, পাঠ্যবইয়ের চেয়ে গল্পের বই পড়তে বেশি ভালবাসতাম। পাশাপাশি নতুন কিছু আবিষ্কার করতে চেষ্টা করতাম। ছয় ভাইবোনের ৪র্থ আমি। বাবা মাওলানা তমিজ উদ্দিন পেশায় ছিলেন আঞ্জুমান স্কুলের দফতরি। অভাবের কারণেই আমার পড়াশোনা এগোতে পারেনি। তাই ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু লস খেয়ে মামাতো ভাইয়ের পরামর্শে  চায়ের ব্যবসা শুরু করি। মূলধন হিসেবে উনিই আমাকে ৩-৪ হাজার টাকা দেন।

‘মামা লাল চায়ের দোকান’ নাম দিয়ে প্রায় ৩০ বছর আগে পথচলা শুরু। ”আমি ভাবলাম যেহেতু চা ই বিক্রি করবো তাহলে অন্য সবার মতো সাধারণ চা নয়, নতুন কিছু করার চেষ্টা করবো। অনেক গবেষণার পর সফল হই। সাথে সাথে আমার উদ্ভাবিত চা চারদিকে ভালো সাড়া ফেলে। আমি যেহেতু একসময় লেখালেখি করতাম তাই একদিন আমাদের মোক্তারপাড়ার কবি তানভীর জাহান চৌধুরী কতগুলো সাইনবোর্ডে লিখে নিয়ে আসেন ‘কবি মামার চা’ এবং নেত্রকোণা শহরের বিভিন্ন জায়গায় তা ছড়িয়ে দেন। সেই থেকে ‘কবি মামার চা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করি।”

সদালাপী ষাটোর্ধ মোকলেস সবসময় থাকেন হাসিখুশি ও প্রাণচঞ্চল। সবার সাথে মিশে যান এক নিমিষে। সারাদিন কাটে কর্মব্যস্ততায় তার দোকানে যেখানে সবকিছুই “সেল্ফ সার্ভিস”। নিজের দোকানে সহকর্মী রাখতে বরাবরই নারাজ তিনি। শত শত মশলা ও ঔষধিগাছের মিশ্রণে চা বানান। কোন চায়ে কতটা পরিমাণ মশলা দিতে হবে সেটা ভীষণ জরুরি। একটু হেরফের হলেই সুস্বাদু পানীয়টি হতে পারে বিষে পরিণত। সেই ভয়ে একা হাতেই দোকানের সব কাজ সামলান মোকলেস।

কেবল চা নয়, ইদানীং নানা রকমের কফি, লাচ্ছি, শরবতও বানান মোকলেস। তার দোকানের ‘মামা স্পেশাল টি’ বেশ জনপ্রিয়। এটা তার বিশেষ রেসিপি, যা রোজ বদলায়। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সেই দিনের আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে চায়ের রেসিপি বানান তিনি। সারা দিন সেই চা-ই হয় মামা স্পেশাল। বিশেষ এই চায়ের দাম মাত্র ১০ টাকা। তেঁতুল আর লঙ্কার চা সবচেয়ে বেশি চলে। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা দামের চা-ও বিক্রি করেন মোকলেস। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে ৫০০ টাকা দামের এই বিশেষ চা খাওয়া যায় না। যাদের বয়স ৪৫ বছরের বেশি, তারাই মাসে একবার এই চা খেতে পারেন। পুদিনাপাতা, হরতকি, তেঁতুল, বহেরা, থানকুনিপাতা, এমনকি, বাসকপাতাসহ ২১০ রকমের ভেষজ চায়ের হদিস মেলে তার দোকানে। শুধু তাই নয়, বিদঘুটে স্বাদের চিরতা চা-ও পাওয়া যায়। ২১০ প্রকার চায়েই আটকে নেই তিনি, প্রক্রিয়াধীন আছে আরো ১০ রকমের চা। চা গবেষণার সকল কিছু লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন তিনি, তা ছেলের হাতে দিয়ে যেতে চান।

তার হাতের চায়ের যাদু নেত্রকোণা ও আশেপাশের মানুষের মন কেড়ে নিয়েছে। ষ্টলে আসা চা-প্রেমী নাঈম ইসলাম উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ”আমি কাজের প্রয়োজনে বা ঘুরতে দেশের অনেক জায়গায় যাই, স্বভাবতই আমি চা খাই; তবে ‘কবি মামা’র দোকানের চায়ে যে তৃপ্তি সেটা অন্য কোথাও পাই না “ 

মোকলেসের লেখা নাটক ‘কেমন চলছে’ মঞ্চস্থ হয়েছে একাধিকবার। এখনও মনে কষ্ট এলে ফিরে যান বইয়ের কাছে, গল্প পড়েন, কবিতা পড়েন। প্রিয় তালিকায় ম্যাক্সিম গোর্কি, হুমায়ূন আহমেদ, হেলাল হাফিজ ও নারায়ণ গোস্বামী।

হাবিবুর রহমান
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here