রুমানা রশীদ মমতা একজন উদীয়মান উদ্যোক্তা। কাজ করছেন ফ্যাশন ও ডিজাইন হাউজ নিয়ে। তার অনলাইন ভিত্তিক পোশাক ব্র্যান্ডের নাম ‘এম এন্ড ডব্লিউ মার্ট’। এই ব্যবসায় স্বাবলম্বী হবার স্বপ্ন দেখছেন উদ্যোক্তা।
গল্পের শুরুতেই তিনি বলেন, রুমানা রশীদ মমতা নামটি দিয়েছিলেন তার বাবা। তিনি পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে আদরের।
তিনি বলেন, ‘আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম তখন থেকেই একজন বেসরকারি কর্মজীবী ছিলাম। যখন ছাত্রী ছিলাম সখ করে কুর্তি বানিয়ে পড়তাম। সে কুর্তি ডিজাইন দেখে বান্ধবীরা অনেক পছন্দ করতো এবং তাদের কেও ডিজাইন করে দিতে বলতো। এভাবেই মূলত কুর্তি ডিজাইন করতে করতে ডিজাইনের হাত আরো বেশি পরিষ্কার হয়ে উঠে। পাশাপাশি চেষ্টা করি দেশীয় ঐতিহ্য তুলে ধরার’।
উদ্যোক্তা রুমানা রশীদ ব্যবসা শুরুর দিক নিয়ে বলেন, ২০১৯ এ যখন প্যানডেমিকের পরিস্থিতি হয়েছিল, তখন তাকে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। সে সময় বান্ধবীরা পরামর্শ দেয় সখকে কাজে লাগিয়ে পেশা বানানো যাক। এরপর গহনা নিয়ে ব্যবসা আরম্ভ করেন।
তিনি জানান, যদিও ব্যবসা ভালোই অতিক্রম করছিল। তবে অনেক সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই গহনার ব্যবসাটি বেশি দিন পরিচালনা করতে পারেননি। এরপর থেকে জয়পুরি কুর্তি, ম্যাচিং প্যান্ট, লিনেন কটন, কাপড়ের তৈরি মাস্ক ইত্যাদি নিয়ে কাজ শুরু করেন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পেজ খোলেন যার নাম দিয়েছেন ‘এম এন্ড ডব্লিউ মার্ট’।
প্রথমে তিনি বান্ধবীদের কুর্তি ডিজাইন করে দেখানো শুরু করেন এবং উদ্যোক্তার বান্ধবীরা তাকে পরামর্শ দেন। যাতে তিনি এই কুর্তি নিয়ে ব্যবসা করেন। এরপর তিনি পেজ শুরু করার পূর্বে আশপাশের পরিচিত মানুষের কাছে বিক্রি করার মাধ্যমে ব্যবসা করে যাচ্ছিলেন। তার কিছু দিন পরেই তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেজটি খোলার ব্যবস্থা করেন। তিনি প্রথমে পাঁচটি জামার ছবি প্রদর্শন করেন পেজটির মাধ্যমে। যা ২০ থেকে ২৫ মিনিটের অনলাইন ক্রেতারা কিনে নেন। এ বিক্রির পর থেকে তিনি এভাবেই ব্যবসা করে যাচ্ছেন বলে জানান উদ্যোক্তা।
তিনি বলেন, জীবনে কিছু সময় আসে যখন খুব শক্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ‘এম এন্ড ডব্লিউ’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেক বাধা পার করে আলোর মুখ দেখতে হয়েছে। কিন্তু পরিবারের অনেক মানুষই তিনি ব্যবসা করবেন, তা মেনে নিচ্ছিলেন না। অন্যের করা কাজ উদ্যোক্তাকে সন্তুষ্ট করতে পারছিল না।
নিজস্ব ডিজাইনের পণ্য নিয়ে উদ্যোক্তা রুমানা রশীদ মমতা বলেন, “দুটো জিনিসের কম্বিনেশন ছিল আমার উদ্যোগ শুরুর ভাবনা। প্রথমটা ছিল, আমাকে কিছু করতে হবে। দ্বিতীয়ত, অন্যের কাজ, অন্যের ভাবনা, অন্যের সৃষ্টিশীলতার উপর ভর করে চলা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। এ কাজে কোনো আত্মতৃপ্তি পেতেন তিনি। যেহেতু সুই-সুতা খুব টানে, কাজটা বুঝেন, তাই এটাকেই উদ্যোগ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এখন তিনি রকমারি মেলাতে অংশগ্রহণ করছেন। সঙ্গে দুজন কর্মচারী নিয়োগ করেছেন’’।
উদ্যোক্তাদের প্রতি পরামর্শ একটাই দেন, কাজের কোনো বয়স নেই, সব বয়সে সব পরিস্থিতিতে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে। কেউ কারো জন্য পথ তৈরি করে দেবে না, নিজেকেই পথ তৈরি করে নিতে হবে। আর কোনো কাজকে ছোট করে দেখা যাবে না। মনে রাখতে হবে, ছোট থেকেই সব বড় হয়। শুধু স্বপ্নটাকে বাস্তবায়ন করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকতে হবে। তাহলেই জীবনে সাফল্য আসবে।
মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা, ঢাকা