বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে ‘শীতল পাটি’ অন্যতম একটি শিল্প। বাঙালির রোজকার জীবনে শীতল পরশ বোলানো শীতল পাটি এখন প্রায় বিলুপ্ত। হারিয়ে গেছে এই পাটি বানানোর প্রধান অনুষঙ্গ ‘বেত’ ‘মুর্তা’ বা মোস্তাক গাছ।
ঝালকাঠির রাজপুরের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান পাটিকর, তাপস কুমার। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর আর পড়াশুনা করার সৌভাগ্য হয়নি তার। পারিবারিক সূত্র ধরে এই শিল্পের দ্বায়িত্ব নিতে হয় তাকে। পরিবারের সদস্যদের সাথে শীতল পাটি তৈরি করে আশে পাশের গ্রামের হাট-বাজারে বিক্রি করতেন কিন্তু খুব একটা লাভের মুখ দেখেননি সেই সময়।
একটি শীতল পাটি তৈরিতে সময় লাগে প্রায় ১০-১২ দিন। এই কাজে যে পরিমাণ শ্রম দেয়া হয় সে পরিমান মূল্য পাওয়া যায় না। গ্রামের স্থানীয় হাটগুলোতে সাড়া কম পাওয়ায় গ্রাম থেকে শহরে যাওয়ার উদ্যোগ নেন তাপস কুমার।
২০০০ সালে প্রথম ঢাকা আসেন এবং ফেরি করে শীতল পাটি বিক্রি করতেন তাপস কুমার। তাপস কুমার ঢাকা, চট্রগ্রাম, খুলনা এবং সিলেটে তার পাটি গুলো নিয়ে যান বিক্রির উদ্দেশ্যে। সেখানে এলাকাভিত্তিক কিছু মেলায় স্টল দিয়ে নিজের পরিচিতি বাড়ানো এবং পাটি বিক্রি করতেন। উপজেলার হাইলাকাঠি ও সাংগর গ্রামের দেড় শতাধিক পরিবারের প্রায় চার শতাধিক মানুষের পেশা পাটি তৈরি করে বিক্রি করা। এলাকার বাসিন্দারা অন্যের অধীনে কাজ করেন না, নিজেরাই পাটি তৈরি করেন নিজেরাই বিক্রয় করেন।
নিজের ব্যবসার উন্নতির উদ্দেশ্যে ২০১৭ সালে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের মতামতে তাপস কুমার একটি সংগঠন তৈরি করেন। ৭৮ জন সদস্যকে নিয়ে সংগঠনটির নাম দেন শীতল পাটি উন্নয়নমূলক সমবায় সমিতি।
সম্প্রতি তিনি জাতীয় এসএমই মেলা ২০১৯ এ অংশগ্রহন করেন। সেখানে এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে ই-কমার্স বিষয়ে এবং এ শিল্পের গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত করেন। এতে তিনি আারও অনুপ্রানিত হন শীতল পাটি শিল্প নিয়ে কাজ করার।
তাপস কুমার ইউবি প্রেসকে জানান, “বর্তমানে অনেকে এ শিল্পকে ছেড়ে অন্য ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। এই কাজের ন্যায্য মূল্য তারা পাচ্ছেন না। ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এ শিল্পটি। সরকার আমাদের এ শিল্পের প্রতি যদি কোন সহযোগিতা করতো আমরা এ শিল্পকে বাচিয়ে রাখতে পারব নয়তো অচিরেই এ শিল্পকে হারিয়ে ফেলবো আমরা”।
উদ্যোক্তা তাপস কুমার এ শিল্পকে বিলীন হতে দিতে চান না। বাংলাদেশের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
রাইদুল ইসলাম শুভ
উদ্যোক্তা বার্তা