মাহি রহমান ধ্রুব ছোটবেলা থেকে ছবি আঁকাআঁকিতে পারদর্শী ছিলেন৷ ক্লাস ফোরে পড়বার সময় মায়ের মুঠোফোনে বসে ফেসবুকে একটা অনলাইন পেজ খুললেন। বাচ্চামনের খেয়ালে নিজেই পেজের নাম দিলেন “ধ্রুবর খেলাঘর”। খেলাঘরে মানেই ধ্রুবর কাছে রঙতুলি আর ক্যানভাস। সেই ক্যানভাস সময়ের আবর্তনে কখনো হয়েছে কাগজ কখনো মায়ের কপাল। মা নাকি ছোটবেলা থেকেই টিপ পড়তে ভীষণ ভালোবাসেন। মায়ের কপালে এক রঙা টিপকে রাঙিয়ে দিলেন প্রথমবার। মা সেই টিপ পরে যেখানেই যান সেখানেই সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। মায়ের কপালের টিপটি শহরের কোন গলির দোকান থেকে কেনা তা জানতে উন্মুখ সবাই৷
একটানা কয়েক বছর শখের বসে মায়ের কপালের টিপটায় কেবল নিয়মিত আঁকা হলো। একসময় মায়ের টিপের জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে ধ্রুব সিদ্ধান্ত নিলেন টিপগুলো সেই ফেসবুকের পেজ ধ্রুবর খেলাঘরে ছড়িয়ে দেয়া গেলে কেমন হয়? নান্দনিকতার ছোঁয়ায় কচি হাতে আঁকা সেই টিপগুলো কেনার জন্য বার্তা পাঠাতে শুরু করলেন অনেকেই। প্রথমে মায়ের বন্ধুরা অর্ডার করল, তারপর আশেপাশের মানুষজন। এভাবেই খুব কম সময়ের মাঝেই জনপ্রিয়তা পেয়ে গেল ক্ষুদে শিল্পীর টিপ বিক্রির ব্যবসা।
মাধবীলতা, সূর্যমুখী, আকাশের মেঘ, বৃষ্টি, গোধূলী, সবুজের আনাগোনায় আঁকানো টিপগুলোতে কেবলই ধ্রুবর ছোঁয়া। ৩.৫ মিলিমিটারের টিপে যেন প্রকৃতি আর চরিত্রগুলো কথোপকথনে জড়িয়ে থাকে সবসময়। ধ্রুবকে প্রশ্ন করা হলো, নিজেকে শিল্পী নাকি উদ্যোক্তা বলে পরিচিত করতে চান? ক্লাস নাইনে পড়ুয়া ধ্রুব’র উত্তর, “আমি বোধ হয় শিল্পী উদ্যোক্তা। নিজেকে শিল্পী বলেই পরিচয় দিতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করবো আর ব্যবসা আমার শিল্পকে নিয়েই এগিয়ে যাবে।”
গোধূলী নামের একটি টিপ ধ্রুবকে দিয়েছে সবচেয়ে বেশি পরচিতি। ক্রেতাদের মতে এতো ছোট একটা টিপে গল্প তুলে ধরার কাজটি ধ্রুব খুব সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছেন। যা সকলের মন ছুঁয়ে যাবে।বর্তমানে ধ্রুব তার টিপ বিক্রির টাকা দিয়ে নিজের পড়াশোনা চালানোর পাশাপাশি আরো দুজন পশ্চাদপদ শিশুর পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছেন। ধ্রুবর এই উদ্যোগে ধ্রুবকে সবসময় সহযোগিতা করেন তার মা তামান্না সেতু এবং বাবা মেহেদী হাসান শোয়েব ও বড় ভাই আরাফ। যেহেতু ধ্রুব এখনো স্কুলছাত্র তাই পড়াশোনার ফাঁকে যেটুকু সময় অবসর থাকে সেই সময়েই টিপ আঁকিয়ে ফেলেন। একটানা প্রায় ১০০টি টিপ আঁকতে পারেন ধ্রুব। দাম কম এবং টিপের মান ভাল হওয়ার তার পণ্যের চাহিদা দেশজোড়া।
সাদিয়া সূচনা
ছবি- বিপ্লব আহসান









