কোরবানির পশু: দেশে চাহিদার চেয়ে বেশি আছে সাড়ে ২৩ লাখ

0

চাকরি নয়, গরুর বড় খামারী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন টাঙ্গাইল সরকারি সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স করা হামিদা আক্তার। বড় খামারী হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে লেখাপড়ার পাশাপাশি গত পাঁচ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের গাভীসহ ষাঁড় গরু লালন পালন করেছেন তিনি। বর্তমানে তার খামারে আছে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের তিনটি গরু। দেশীয় পদ্ধতিতে লালন-পালন করে এরইমধ্যে বড় করে তুলেছেন পাঁচ বছর বয়সী বিশালাকৃতির একটি ষাঁড়। ষাঁড়টি নাম দিয়েছেন মানিক। ঈদুল আযহায় বিক্রির জন্য প্রস্তুত ৪৫ মণ বা ১৮০০ কেজি ওজনের ষাঁড়। যার দাম হাঁকাচ্ছেন ১৫ লাখ টাকা।

হামিদা বলেন, আমি পড়ালেখা করছি, চাকরি করার জন্য নয়। আমার স্বপ্ন আমি একজন বড় গরুর খামারী হবো।

দেলদুয়ার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বাহাউদ্দিন সারোয়ার রিজভী জানান, এ উপজেলায় হামিদার ষাঁড়টিই সবচেয়ে বড়। আমাদের অনলাইন হাটে তার ষাঁড়টির ছবি, ওজন ও দাম উল্লেখ করে বিক্রির জন্য প্রচারণা চালানো হবে। এছাড়াও আমাদের কাছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বড় ষাঁড় কেনার জন্য গ্রাহক যোগাযোগ করেন। আমরা সেই সকল ক্রেতাকেও হামিদার ষাঁড়টির বিষয়ে অবগত করবো।

শুধু যে হামিদার ষাঁড়টিই অনলাইনে বিক্রি হবে এমন নয়। সারাদেশেই অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশু। নতুন উদ্যোক্তারা এতে আরও বেশি উৎসাহিত।

বরিশালে একাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও খামারী অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু করেছেন। সফল খামারী ছাড়াও অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি করছেন এমন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানগুলো মধ্যে আছে বাবুগঞ্জ উপজেলার এমইপি এগ্রো, সদর উপজেলার কড়াপুর প্রমোজেন এগ্রো, দোয়ারিকা রেইট্রিতলা কেমিস্ট এগ্রো।

প্রতিষ্ঠান বা খামারীরা অ্যাপস, ফেসবুক ও বিভিন্ন ওয়েব সাইটের মাধ্যমে পশুর নির্ধারিত মূল্য, ছবি, ওজন (সম্ভব্য মাংস) ও নিজ মোবাইল নম্বর দিয়ে দিচ্ছেন। ক্রেতারা তা দেখার পর যোগাযোগ করে পশু ক্রয় করছেন। অনলাইনে পশুর জাত, বয়স ও ওজন সংক্রান্ত সব প্রয়োজনীয় তথ্যের পাশাপাশি থাকছে খাদ্য তালিকা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা সংবলিত বিস্তারিত তথ্য।

অনলাইনের পাশাপাশি সরাসরি পশু সরবরাহ করছেন খামারীরা। তাদের একজন নাটোরের গরু মহিষের খামারী রেকাত আলী। গরু আর মহিষের সৌখিন খামার গড়ে সফল তিনি। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শণার্থী খামারে থাকা দুই শতাধিক গরু-মহিষ দেখতে ভিড় করছেন।

নাটোর সদর উপজেলার ডালসড়ক এলাকাতে ড্রিমল্যান্ড ফ্যাটেনিং এন্ড ডেইরি নামে বৈচিত্র্যময় এই খামারের অবস্থান। খামারে বিভিন্ন জাতের বিদেশী গরু রয়েছে- আমেরিকার বাহামা ও জিবিআর, অস্ট্রেলিয়ার ফ্রিজিয়ান ও হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান, নেপালী গীর, পাকিস্তানের শাহীওয়াল, ভারতের রাজস্থান, গুজরাট, উলুবাড়িয়া জাতের। লাল, সাদা, কালো রঙের এসব এক একটি গরু লম্বায় ৯ ফুট আর উচ্চতায় ৬ ফুটের বেশি। ওজনে কোন কোনটি ১ টন ছাড়িয়ে গেছে। এক্ষেত্রে আমেরিকার বাহামা অগ্রগামী। রাজস্থানের রাজকীয় সিং-ও অসাধারণ। একটির গায়ের রঙ তো খানিকটা হরিণের মত। অতিকায় এসব গরুর পাশাপাশি আছে পাহাড়ের গোয়াল আর ক্ষুদ্রকায় সুস্বাদু মাংসে অনন্য ভুটানের ভুট্টি। এই খামারে শুধু গরু নয়, আছে বিহারী ও আফ্রিকান জাতের বিশাল মহিষ। জাফরাবাদী, নিলিরাভী, মুররা জাতের মহিষও আছে। আকৃতিতে কেউ কারো চেয়ে কম নয়। আকর্ষণীয় এসব মহিষ ওজনে ১৫ মণ ছাড়িয়েছে। ব্যতিক্রমী সাদা রঙের এলবিনো মহিষ নিমিষেই নজর কাড়ে।

ঈদের আগে এভাবে প্রস্তুত সকল খামারী। এজন্য দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাদের।

একসময় কোরবানির পশুর জন্য বাংলাদেশকে প্রতিবেশীদের উপর নির্ভর করতে হতো। বেশ কয়েক বছর ধরেই অবস্থা পাল্টে গেছে। কোরবানির পশুতে বাংলাদেশ এখন উদ্ধৃত্ত।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে উঠা ছোট-বড় খামারিদের হাতে এখন এক কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি পশু আছে। আসন্ন ঈদুল-আযহায় দেশে চাহিদা ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার, চাহিদার চেয়ে প্রায় সাড়ে ২৩ লাখ পশু বেশি আছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এই তথ্য জানিয়ে আরো বলেছেন, অনলাইনে পশু ক্রয়-বিক্রির ক্ষেত্রে হাসিল আদায় করা যাবে না। এমনকি বাজারের বাইরে বাড়িতে বা রাস্তায় কেউ পশু বিক্রি করলে তাদের কাছ থেকেও হাসিল বা চাঁদা আদায় করা যাবে না।

ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here