উদ্যোক্তা- সৈয়দ মামুন রশীদ

শিল্পকলার ইতিহাসে মৃৎশিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। মৃৎশিল্প আমাদের দেশের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারক ও বাহক, এর বিশ্বজনীন স্বীকৃতি রয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত সমাজ ও সংস্কৃতির জটিল বিবর্তনের সাক্ষী হয়ে আছে আমাদের পোড়ামাটির সামগ্রী বা মৃৎশিল্প; এর রয়েছে ঐতিহাসিক পরম্পরা। একই সঙ্গে আদি প্রস্তর যুগ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক কাল অবধি এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর সমাজ-সংস্কৃতি ও জীবনচর্চার বহু নিদর্শন পাওয়া যাবে আমাদের পোড়ামাটির শিল্পে।

বাংলার মাটি নাকি সোনার চেয়েও খাঁটি। তাই এই মাটিকে নিয়ে আমি সারা জীবন কাটাতে চাই। বিশ্বের কাছে বাংলার মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি বলে মনে হয়, সে লক্ষ্য নিয়ে আমি কাজ করছি। কাজের কথা উঠতে এভাবেই বললেন উদ্যোক্তা সৈয়দ মামুনার রশিদ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা বিভাগে গেলে দেখা মেলে এ মানুষটির। চুপ করে একমনে কাজ করছেন দুই হাত কাদায় মাখামাখি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের গর্ব, সুকুমার মৃৎশিল্পের চর্চাকারী উদ্যোক্তা সৈয়দ মামুন রশীদের দীর্ঘ ২৫ বছরের পুরোদস্তুর শিল্পীজীবন ও অভিজ্ঞতামন্ডিত কর্মপ্রচেষ্টার আরেক নাম “রাঢ়”।

মামুন রশীদ একজন আত্মনিবেদিত ও নিভৃতচারী শিল্পী; আধুনিক টেরাকোটা তথা পোড়ামাটির শিল্পের সৃজনশীলতার বিকাশে ও একে রুচিসম্মতভাবে সাধারণ মানুষের ব্যবহার উপযোগী করতে নিরলস পরিশ্রম ও সাধনা করে আসছেন দীর্ঘ ২ যুগ ধরে।

ঢাকাই কর্পোরেট ও সিন্ডিকেটসর্বস্ব শিল্প-ব্যাপারীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তিনি মৃৎশিল্প তথা পোড়ামাটির শিল্পের পরম্পরা রক্ষায় নিজের স্বতন্ত্র মেধা ও মৌলিকতার সাক্ষর রেখে এসেছেন অত্যন্ত সুনামের সঙ্গেই।

যার নিদর্শন ছড়িয়ে আছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে, কর্পোরেট ভবনে কিংবা শিল্পানুরাগী মানুষের বাড়ির দেয়ালে, অন্দরমহলে তার নির্মিত ছোট-বড় অসংখ্য শিল্পকর্মের মধ্যে।

তিনি বলেন, ‘গঙ্গার তীরবর্তী রাঢ় অঞ্চল’; যার অর্থ ‘লালমাটির দেশ’। রাঢ় শব্দটির আরেকটি অপ্রচলিত অর্থ “অসভ্য” (!)। তবে আমরা রাঢ় শব্দটিকে ব্যবহার করছি নিছক একটি চিত্তাকর্ষক ও মাটি কামড়ানো শব্দ হিসেবে যা আমাদের শিল্পকর্মগুলোকে একটি পরিচিতিমূলক শিরোনাম বা ব্র্যান্ডনাম দেবে। আধুনিক স্থাপত্য শৈলী ও ইনটেরিয়র ডিজাইনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে টেরাকোটা। আর বাংলাদেশে সৃষ্টিশীল ও সুষমামন্ডিত টেরাকোটা শিল্পের আরেক নাম রাঢ়।

রাঢ়-এ কি পাবো? ‘মূলত গ্রাহকমুখী শিল্পপণ্য সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠান গ্রাহক তথা কাস্টমার (ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান হতে পারে) তাদের রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন মিডিয়ার নান্দনিক শিল্পকর্মের অর্ডার করেন এবং সে অনুযায়ী তা প্রস্তুত করে সরবরাহ করি’।

এছাড়াও তিনি জানান, ‘স্টুডিওতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উপায়-উপকরণের সাহায্যে বিচিত্র সব শিল্পকর্মের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তৈরির কাজ চলছে। টেরাকোটা বা পোড়ামাটি আমাদের অন্যতম একটি বহুল ব্যবহৃত শিল্প মাধ্যম। দেয়াল টেরাকোটা রাঢ় এর সবচেয়ে প্রচলিত ও বিপুল সাড়া জাগানো একটি শিল্পপণ্য। ক্রেতারা ঘর, বাসা, ভবনের ইনডোর কিংবা আউটডোর দেয়ালের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে যে কোন মাপের মধ্যে ছোট-বড় নানা সাইজের দৃষ্টিনন্দন পোড়ামাটির টালী অর্ডারের কাজ করি। অনেকে ঘরের ভেতরে জীবিত প্রাণীর ছবি অপেক্ষা প্রকৃতি-গাছ-ফুল-নদী সম্বলিত দৃশ্যপট পছন্দ করেন। ডিজাইনটি পছন্দ হলে পরবর্তীতে ওয়ার্কঅর্ডার ও অ্যাডভান্স পেলে আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাঙ্খিত শিল্পকর্মটি দেয়ালে বা নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করে দিয়ে থাকি’।

আজকাল অনেকেই তাদের কাছে টেরাকোটার পরিবর্তে ফাইবার-গ্লাস কিংবা ঢালাই কংক্রিট নির্মিত দেয়াল শিল্পকর্ম ও অন্যান্য ইনডোর-আউটডোর স্কাল্পচার-ভাস্কর্য্য বানিয়ে নিতে আগ্রহ পোষণ করেন। প্রত্যেকটি ভিন্ন ভিন্ন মিডিয়া বা উপকরণ দ্বারা নির্মিত শিল্পকর্ম ভিন্ন ভিন্ন শিল্প সম্ভাবনা তৈরি করে থাকেন। এসবের স্থায়িত্ব ও দৃষ্টিসুখও ভিন্ন ভিন্ন হয়।

রাঢ় নিত্যনতুন ডিজাইনের অনেক রকম গিফট আইটেম উপহার সামগ্রী তৈরি করে। টেরাকোটা, কাঠ-খোদাই উড-কার্ভিং, মেটাল আর্ট কিংবা মিক্স মিডিয়ায় তৈরি এসব শিল্পপণ্যের নানাবিধ দৃষ্টিনন্দন ব্যবহার ও উপযোগীতা রয়েছে। তৈরিকৃত সর্বাধিক চাহিদাসম্পন্ন শিল্পপণ্যগুলোর মধ্যে আছে- স্টুডিও পটারি, ছোট-বড় মটকা, বনসাই ট্রে, টব, কলমদানি (পেন পট), খেলনা পুতুল, মিরর ফ্রেইম, বিভিন্ন ধরনের মাছ ও মুখোশ ইত্যাদি।

মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা, ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here