কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের ব্র‍্যান্ড ম্যানেজার থেকে জামদানির সফল উদ্যোক্তা অভিক জামিল

0
উদ্যোক্তা আতিক জামিল

যশোর ক্যান্টমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করার পর উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীন মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হন কে, এম, অভিক জামিল এবং সেখান থেকেই বিবিএ এবং এমবিএ শেষ করেন। ২০১৭ থেকে ২০২১-এর ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মোট ৫ বছর তিনি বাংলাদেশের স্বনামধন্য কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান প্রাণ আরএফএল গ্রুপে চাকরি করেছেন একজন ব্র্যান্ড ম্যানেজার হিসেবে। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল কোন স্বনামধন্য কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের ব্র‍্যান্ড ডিপার্টমেন্টে কাজ করবেন এবং সেটা তিনি করেছেন দীর্ঘ পাঁচ বছর। তবে এখন একটু বিরতি নিয়েছেন বলা যায়। কারণ এই সময়টায় নিজের উদ্যোগকে একটু গুছিয়ে নিচ্ছেন। তার নিজের একটি দেশীয় পোশাকের বিজনেস থাকবে এই স্বপ্ন তৈরী হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায়। কিন্তু পুঁজিসহ অন্যান্য বিষয়ে বাধার সম্মুখীন হয়ে কাজটা শুরু করা হয়ে উঠেনি তখন।

বাংলাদেশের ঐতিহ্য জামদানি। আর তিনি দেশি জিনিসের ভক্ত। উদ্যোক্তার ইচ্ছা একদিন তার নিজের একটি লাইফস্টাইল ব্র‍্যান্ড তৈরি হবে যার পণ্য থাকবে শুধুই আমাদের দেশের দেশি জিনিস দিয়ে। জামদানি দিয়েই উদ্যোক্তার উদ্যোগের শুরু কারণ তিনি চেয়েছিলেন এমন কিছু দিয়ে শুরু করতে যার মূল উপাদান সম্পর্কে তিনি জানেন। উদ্যোক্তার স্ত্রী এবং বোন দুজন জামদানির অন্ধ ভক্ত। এরা দু’জন নিজেদের জামদানির তৃষ্ণা মেটাতে বহু তাঁতির বাড়ি ঘুরে বেড়িয়েছেন। সাথে সবসময়েই সঙ্গী ছিলেন উদ্যোক্তা অভিক। আর তাদের উৎসাহেই তার এই উদ্যোগের শুরু।

উদ্যোক্তার উদ্যোগ ‘জ-The Story of Handloom jamdani’ এর শুরু হয় ২ আগস্ট ২০২০ সালে। জ- The Story of Handloom Jamdani-এর ফাউন্ডার মূলত উদ্যোক্তার শ্বাশুড়ী। ২০২০ এ করোনাকালীন সময়ে উনি ঢাকায় পুরোপুরিভাবে শিফট করেন। তার ইচ্ছেতেই এবং উদ্যোক্তা ও উদ্যোক্তার স্ত্রীর উৎসাহে শুরু হয় “জ”। উদ্যোক্তা অভিক জামিল উদ্যোক্তা বার্তাকে জানান, “আমার শ্বাশুড়ি যেহেতু ইন্টারনেট সম্পর্কে একটু কম ধারণা রাখেন আর আমিও দেশিয় পোশাক নিয়ে খুব আগ্রহী ছিলাম, তাই আমি উনার কাজের অংশীদার হিসেবে “জ” তে কাজ শুরু করি এবং ক্রেতার সাথে যোগাযোগের কাজটা শুরু করি। বলা যায় এটি ছিল জামাই-শ্বাশুড়ীর যৌথ উদ্যোগ। আর আমাদেরকে ছবি তোলা ও কনটেন্ট রাইটিং-এ সাহায্য করতো আমার স্ত্রী।”

২০২০-এর ডিসেম্বরের দিকে উদ্যোক্তার শ্বাশুড়ীর একটি মেজর অপারেশন হয়। এরপর তিনি “জ”-এর কাজ সম্পূর্ণ ছেড়ে দেন। উদ্যোক্তা চাননি “জ” বন্ধ হয়ে যাক কারণ ততদিনে তিনি “জ” কে অনেক বেশি নিজের অংশ মনে করতে শুরু করেছেন৷ তাই “জ”-এর পুরো দায়িত্ব তখন থেকেই নিজের কাঁধে নিয়ে নেন।

উদ্যোক্তা শুরু করেন অরিজিনাল হ্যান্ডলুম ঢাকাই জামদানি শাড়ি দিয়ে। সম্প্রতি তারা এর সাথে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মনিপুরী শাড়িও যোগ করেছেন। সামাজিক বাধার সম্মুখীন হয়েছেন প্রচুর। জাহাঙ্গীরনগর থেকে বিবিএ ও এমবিএ পাশ করা একটি ছেলে শাড়ির ব্যবসা করবে, এটি আমাদের সমাজ মেনে নিতে পারে না সহজে। আরও ভয়াবহ সমস্যা যেটা সেটা হলো ধরাবাঁধা সামাজিক সমস্যা। অনলাইনে বেশিরভাগ শাড়ির বিজনেস ওনার হলো নারী। এই জায়গাতে তিনি প্রচুর বাজে কথার শিকার হয়েছেন যেহেতু তিনি মেয়েদের পোশাক নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। তাই অনেক কটুবাক্য শুনতে হতো।

তবে বাধার সম্মুখীন হলেও সেগুলোকে এড়িয়ে চলার বিচিত্র ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছেন উদ্যোক্তা । তিনি এসবে একদমই পাত্তা দেননি। আর পরিবারের মানুষকে বুঝাতে চেষ্টা করেছেন। ১৪৮ জন তাঁতি তাদের সাথে নিয়মিত কাজ করছেন এখন। দেশের ভিতরে সকল জেলাতেই তার পণ্য যায় এছাড়াও আমেরিকা, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, ভারত, দুবাই, ওমান, সুইডেন ও নরওয়েতে উদ্যোক্তার পণ্য যায়।

উদ্যোক্তা জানান “আমার স্ত্রীর,পাশাপাশি আমার শ্বাশুড়ী, বাবা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ভূমিকাও মনে রাখবার মতো।” নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে উদ্যোক্তা জানান, আগামী বছর তারা তাদের নিজস্ব শো-রুম স্থাপনের পরিকল্পনা করছেন। ভবিষ্যতে শুধু জামদানি ও মনিপুরী নয়, তখন “জ” কথা বলবে বাংলার বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যবাহী অন্যান্য জিনিসেরও। এ লক্ষ্যেই উদ্যোক্তা কাজ করে চলেছেন।

মাসুমা সুমি,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here