করোনাভাইরাসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্প উদ্যোক্তাদের সমস্যা মোকাবিলায় একটি সমন্বিত নীতিমালা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
সম্প্রতি ‘করোনা পরবর্তী কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অবস্থা এবং প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যকারিতা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল নীতি সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সিটিজেন্স প্লাটফর্ম ফর এসডিজিস, বাংলাদেশ এবং বিজনেস ইনিসিয়েটিভ লিডিং ডেভলপমেন্ট যৌথভাবে এর আয়োজন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, সমন্বিত নীতিমালা গ্রহণ করে এর আলোকে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের চাকা সচল রেখে জাতীয় অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুতেই বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।
তিনি বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে কো-লেটারেলের বাধ্যবাধকতা তুলে দিয়ে সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বিবেচনায় প্রণোদনার অর্থ মঞ্জুরের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিল্ডের চেয়ারপারসন আবুল কাশেম খান।
আরও অংশ নেন সিপিডি’র সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, এমসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি সৈয়দ আসিফ ইব্রাহীম, অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, বগুড়ার হালকা প্রকৌশল উদ্যোক্তা হারুনুর রশিদ, নারী উদ্যোক্তা হুমায়রা চৌধুরী, রংপুর উইম্যান্স চেম্বারের সভাপতি আনোয়ারা ফেরদৌসী, আইটি উদ্যোক্তা সৈয়দ আলমাস কবির ও ব্র্যাক ব্যাংকের এসএমই বিভাগের প্রধান সৈয়দ আব্দুল মোমেন।
এর আগে বক্তারা শিল্প খাতের জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে জরুরিভিত্তিতে সমন্বিত ডাটাবেজ গড়ে তোলার দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, দেশের প্রায় ৭৮ লাখ কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) রয়েছে। যার ৯৯ শতাংশ বেসরকারিখাতে গড়ে উঠেছে। এসব শিল্প কারখানা জিডিপিতে ২৫ শতাংশ, রপ্তানিতে ৮০ শতাংশ এবং কর্মসংস্থানে প্রায় ৫০ শতাংশ অবদান রাখছে। করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের সিএমএসএমই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ খাতের জন্য সরকার বিভিন্ন প্যাকেজের আওতায় ৫৯ হাজার ২৯২ কোটি টাকা আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। তবে এখন পর্যন্ত ছাড় করা হয়েছে চার হাজার ১২০ কোটি টাকা। প্রণোদনার ৯৪ শতাংশই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ছাড় করায় নানা ধরনের জটিলতার কারণে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তারা সরকারি সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তারা আরও বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও তাদেরকে ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায় আনার সুযোগ নেই। জাতীয় অর্থনীতি চাঙ্গা করতে বিকল্প উপায়ে ক্ষতিগ্রস্ত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে ভ্যাট ও ট্যাক্সে ছাড় প্রদানের পাশাপাশি বাড়ি ভাড়া, ইউটিলিটি বিলের এক অংশ ঘোষিত প্রণোদনা থেকে বহন করতে হবে।
ব্যাংকগুলোকে সম্পদভিত্তিক অর্থায়নের পরিবর্তে তারল্যভিত্তিক অর্থায়ন, ভ্যাট ও ট্যাক্স আদায় ও অডিট প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং বিসিক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে উদ্যোক্তাবান্ধব ঋণ কর্মসূচি গ্রহণের পরামর্শ দেন বক্তারা।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা