উদ্যোক্তা - সুরেশ পূজারি

একজন ব্যক্তি যিনি কিনা একজন সাধারণ ওয়েটার হিসেবে মাসিক  ৪ রুপি বেতনে কাজ শুরু করেন। তবে উন্নত জীবনের আশায় তিনি রাস্তার উপর ছোট্ট একটি দোকান দিয়েছিলেন। কয়েক বছরের মধ্যে সেই দোকানকে, ভারতের অন্যতম বিখ্যাত রেস্তোঁরায় পরিণত করেন। আজ বলবো তাঁর কথা-

প্রায় ৫ দশক আগে মাত্র ১০ বছর বয়সে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে পাড়ুকোন নামক একটি ছোট্ট গ্রাম থেকে স্বপ্নের শহর মুম্বাই-এ আসেন সুরেশ পূজারি । প্রতি মাসে ৪ রুপি বেতনে তিনি দক্ষিণ মুম্বাই এর ইটারেতে বাণিজ্যিক কাজের কর্মী হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করেন। এরপর তিনি মুম্বাই বন্দরের ট্রাস্ট ক্যান্টিনে ওয়েটার হিসেবে মাসিক ৬ রুপি বেতনে চাকরি করেন।

সেখানে ওয়েটারের কাজ করার সময় তিনি স্বপ্ন দেখতেন একটি বড় দোকান দেওয়ার। তাই মনে সাহস আর স্বপ্ন পূরণের আশায় ১৯৬২ সালের দিকে সুরেশ মুম্বাই এর পছন্দের খাবার পাভ ভাজি এবং ফলের রস নিয়ে তার নিজস্ব মেনু তৈরি করেন। তিনি চৌপট্টিতে একটি ফুড-কার্ট করে তার খাবারের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তার কার্ট’র মডেল, খাবারের মেনু এবং খাবারের মান তার গ্রাহকদের খুব আকৃষ্ট করেছিল। তিনি মুম্বাই শহরে ফাস্ট-ফুড সংস্কৃতিতে একটি বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন।

যেহেতু তার গ্রাহকরা তার খাবারগুলো পছন্দ করেছিল তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন আরো একটি দোকান দেওয়ার। যেই চিন্তা সেই কাজ, তার এক আত্মীয়ের সহায়তায় নাজ সিনেমা হলের বিপরীতে ল্যামিংটন রোডে সুরেশ আরেকটি দোকান স্থাপন করেন। এটি ছিল একটি তথ্য-প্রযুক্তিময় ব্যবসায়ী অঞ্চল। তিনি বিভিন্ন ধরণের খাবার যেমন পাভ ভাজি, স্যান্ডউইচ, ইডলি, চাইনিজ, ফ্রাইড রাইস ইত্যাদি সহ বিভিন্ন ফলের রস সরবরাহ করতেন। এতে করে তার গ্রাহকের সংখ্যা বেড়ে যায়।

সুরেশ পূজারি এই দোকানের নাম দিয়েছিলেন সুখ-সাগর। এই সফলতার পরে পরিবারের অনুরোধে তিনি দক্ষিণ ভারতের বেঙ্গালুরুতে প্রথম সুখ-সাগর রেস্তোঁরা চালু করার সিদ্ধান্ত নেন।

বর্তমানে সুরেশ পূজারি’র ২২ টি দোকান রয়েছে। তন্মধ্যে মুম্বাইতে রয়েছে আটটি, বেঙ্গালুরুতে সাতটি, মহীশূর-এ একটি, চেন্নাই-এ একটি, দুবাই-এ দুটি, সৌদি আরবে দুটি এবং কাতারে দুটি এবং পাইপলাইন-এ বাকি গুলো।

বর্তমানে জাফরান, কোবে এবং সিটি বারের মতো ব্র্যান্ডগুলি বেঙ্গালুরুতে সবচেয়ে জনপ্রিয়। সুরেশের জ্যেষ্ঠ পুত্র সিদ্ধার্থ দ্বারা এই সব বারগুলো পরিচালিত হয় । বাবার জন্য প্রায় ছয় বছর একই পদে কাজ করার পরে, সিদ্ধার্থকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে তাকে সুখ-সাগরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে তিনি সুখ-সাগর হোটেলস লিমিটেডে’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত আছেন।

প্রায় ৫০ বছর আগে সুরেশ মানুষকে খাওয়ানোর জন্য সুখ-সাগর’র ভিত্তি স্থাপন করলেও বর্তমানে সুখ-সাগর সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ব্যয়ভার বহন সহ তাদের শিক্ষিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত।

সুরেশ পূজারি মত উদ্যোক্তা সকল মানুষের জন্য অনুপ্রেরণীয়।

 

মো:হৃদয় সম্রাট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here