অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতকরণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান (এসএমই) সমূহের গুরুত্ব অপরিসীম। স্বল্প পুঁজি ও স্বল্প উৎপাদনকাল নির্ভর এসএমই খাতে সকলের অংশগ্রহণের সমান সুযোগ তৈরির জন্য সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপনে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, গ্রামীণ ও প্রান্তিক পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তা তৈরির জন্য, বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তা ও শিল্প-শ্রমিক তৈরির লক্ষ্যে সরকার অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। সরকার করোনাভাইরাস মহামারিজনিত অর্থনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে মাইক্রো, কটেজ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদানসহ একাধিক প্রণোদনা প্যাকেজ গ্রহণ করেছে, যার সিংহভাগ ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে। এসএমই খাতে সরকারের এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে জাতীয় অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান ২০২৪ সালের মধ্যে শতকরা ৩২ ভাগে উন্নীত হবে মর্মে আশা করা যায়।
চামড়া ও পাদুকা শিল্প সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিসিকের চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পটির মাধ্যমে ঢাকা মহানগরী ও বুড়িগঙ্গা নদীর পরিবেশ দূষণ রোধে রাজধানীর হাজারীবাগস্থ ট্যানারি শিল্পসমূহকে সাভারে পরিবেশবান্ধব স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ প্রকল্পে সাভারে ২০০ একর জমিতে উন্নত প্লট তৈরির মাধ্যমে ট্যানারি শিল্পসমূহ স্থানান্তরের লক্ষ্যে ১৫৫টি শিল্প ইউনিট/প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে এ চামড়া শিল্পনগরীতে মোর্ট কাজের ৯৭ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সাভারে চামড়া শিল্পনগরী সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিসিক এর অধীনে রেজিষ্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি এর মাধ্যমে ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানী গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য শিল্প দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী গুরুত্বপূর্ণ খাত। এ খাতে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৬ লাখ এবং পরোক্ষভাবে আরও ৩ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। বাংলাদেশের মোট রপ্তানির মধ্যে এ খাতের অবদান ৪ শতাংশ। বিশ্বব্যাপী চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা খাত খুব দ্রুত সম্প্রসারিত হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ হতে চামড়া ও বিশ্বব্যাপী চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা খাত খুব ত সম্প্রসারিত হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ হতে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির হার নিম্নমুখী। সে কারণে এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন, হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিসমূহে সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানান্তরিত হয়ে উৎপাদন শুরু করেছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে চামড়া শিল্পনগরী স্থাপন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
পাট শিল্প সম্পর্কে মুস্তফা কামাল বলেন, প্রাকৃতিক ও পরিবেশ সহায়ক তন্ত্র হিসেবে দেশে ও বিদেশে পাটের চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে পাট খাতের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে পূর্ণ মাত্রায় কাজে লাগানোর লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। পাটের ব্যবহার বহুমুখীকরণে সরকার নানামুখী গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রচারণা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সরকার দেশে ও বিদেশে পাট ও পাটজাত পণ্যের মেলা আয়োজন অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, পাট খাতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে রপ্তানি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লোকসানি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলসমূহ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং সেগুলো বেসরকারি উদ্যোক্তাগণের মাধ্যমে চালু করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে বন্ধ ঘোষিত সরকারি পাটকলসমূহের শ্রমিক কর্মচারীগণকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ই-কমার্স সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসার প্রসার ঘটাতে এবং ই-কমার্স খাতে নতুন উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে অধিকতর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে “ই-বাণিজ্য করবো, নিজের ব্যবসা গড়বো” শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো ই-কমার্স বিষয়ে নতুন উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে ই-কমার্স বিষয়ক ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা। এর আওতায় ৫ হাজার নতুন উদ্যোক্তাকে ই-কমার্স বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া, নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেকটিভিটি প্রকল্পের আওতায় কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে মহিলা উদ্যোক্তাদের কাট-ফ্লাওয়ার, এগ্রো-প্রসেসিং ও আইসিটি স্কিল বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা