এফ-কমার্সে সফল কাপল

0
উদ্যোক্তা ইসরাত জাহান ও তার স্বামী জাহির হাছান।

‘দেশীয়’ নামেই মিলে কাজের ধরন। এ নামে ফেসবুক ভিত্তিক প্লাটফর্মের মাধ্যমে মানুষের হাতে দেশি পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন তরুণ উদ্যোক্তা ইসরাত জাহান ও তার স্বামী জাহির হাছান।

ইসরাত জাহানের জন্ম ও বেড়ে উঠা বগুড়ায়। ঢাকার নাম করা এক ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন। আর তার স্বামী জাহির হাছান একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।

শুরুটা নিয়ে উদ্যোক্তা ইসরাত জাহান বলেন: ২০১৯ সালে বিয়ের পর আমরা ভারতের সিকিমে ঘুরতে যাই। ঘুরতে গিয়ে উপলব্ধি করি দুনিয়াতে চলতে গেলে, আর একটু ভালোভাবে থাকতে গেলে টাকা পয়সা লাগে, যা চাকরির সীমিত বেতন দিয়ে সম্ভব না। আমাদের দুজনের খুব ইচ্ছা ওয়ার্ল্ড ট্যুর দেওয়ার, চাকরির টাকায় এটা সম্ভব? তাই আয় বাড়ানোর চিন্তা থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন।

জাহির হাছান বলেন, ‘ট্যুর থেকে ফিরে প্রথমে মাশরুম নিয়ে ব্যবসা করার চিন্তা করলাম। কিছুদিন সেটা করেওছিলাম কিন্তু এর ভেতর করোনা শুরু হয়ে যায়, সারাদেশে লকডাউন। তখন মাশরুম প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে যায়। তারপরই মূলত আমার স্ত্রী ইসরাত অনলাইনে কিছু করার চেষ্টা করে।’

সেই শুরু প্রসঙ্গে এবার ইসরাত জানান, “আমার এক কাজিনের বিয়ের প্রোগ্রামের জন্য ১১ পিস শাড়ি লাগবে। আমি তখন পাইকারি দরে ১২ পিস শাড়ি অর্ডার করলাম। শাড়ি প্রতি একশ টাকা লাভে বিক্রি করলাম। এরপর মনিপুরি, ব্লক, বাটিকের শাড়ি, থ্রি পিস এনে প্রাথমিক ব্যবসা শুরু করি। আস্তে আস্তে যখন ব্যবসাটা একটু বুঝে উঠছি, ঠিক তখন এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে শতরঞ্জি নিয়ে কাজ শুরু। এভাবেই শুরু হয় আমাদের উদ্যোক্তা জীবন।”

বর্তমানে ‘দেশীয়’তে পাওয়া যায় মনিপুরি শাড়ি, জামদানি শাড়ি, কামিজ, পাঞ্জাবি, ড্রেস, জুট ব্যাগ, শতরন্জির বাহারি ম্যাট, ব্লক-বাটিক ড্রেস, বেড শিট, টেবিল ও চেয়ার কভার এবং হ্যান্ডপেইন্টসহ নানা দেশীয় পণ্য। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের  কারিগররা পণ্য তৈরি করেন। প্রতিদিন তাদের ৪০ থেকে ৫০ পিস পণ্য সারা দেশে ডেলিভারি দেওয়া হয়। মাসে আনুমানিক বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। কারিগর বাদে উদ্যোক্তাদের সহকর্মী চারজন। সামনে আরো কর্মী নেওয়ার ইচ্ছা আছে তাদের।

সামাজিক প্রতিবন্ধকতা প্রসঙ্গে জাহির বলেন: প্রথম দিকে আমার স্ত্রী ইসরাত অমানুষিক পরিশ্রম করেছে। পণ্য বানাতে দেওয়া, পছন্দমতো ডিজাইন অর্ডার করা, সেগুলো রিসিভ করা, প্যাকিং করা থেকে ডেলিভারি সব ও নিজের হাতে করতো। ‘দেশীয়’ আজকে যে পর্যায়ে শুধুমাত্র তার জন্যই সেটা সম্ভব হয়েছে।

অনেকটা আক্ষেপের সুরে  উদ্যোক্তা ইসরাত বলেন, ‘একটা নারীকে উদ্যোক্তা হতে গেলে পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় স্বামী কোন সাহায্য করতে চায় না। বলবো না যে আমার চলার পথ খুব সহজ ছিল। সব সমস্যা, বাধা অতিক্রম করে, সবার কথার উপরে আমার স্বামী ঢাল হয়ে আমাকে সাপোর্ট করে গেছে। জাহির ছাড়া আমার উদ্যোক্তা হয়ে উঠা কঠিন হয়ে যেতো। এখন যেহেতু আমাদের এই উদ্যোগ একটা পর্যায় চলে এসেছে, এখন পরিবার-পরিজন সবার কাছ থেকেই সাপোর্ট পাচ্ছি, যা শুরুতে পাইনি।’

তরুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে  জাহির হাছান বলেন: কনফিডেন্স আর ওভার কনফিডেন্সের বিষয়টা তরুণ উদ্যোক্তাদের বুঝতে হবে। আমরা অনেক সময় মনে করি, ও করছে– আমিও করবো, ও পারছে– আমিও পারবো, এটা হচ্ছে  কনফিডেন্স। আর যখন একজন মনে করবে, আমি করলেই পারবো, যেটাতে হাত দেবো সেটাতেই সাকসেসফুল হবো, এটা হলো ওভার কনফিডেন্স। এটা ভয়ংকর একটা জিনিস। এটা করা যাবে না। মনে রাখতে হবে একজন উদ্যোক্তাকে ভেতর থেকে সুন্দর হতে হবে। উদ্যোক্তা হতে গেলে মানবিক যে গুণাবলী সেগুলোকে আগে উন্নত করতে হবে।

তিনি মনে করেন যে বাংলাদেশ হচ্ছে ল্যান্ড অফ অপরচুনিটিস, এখানে অনেক কিছুই করার সুযোগ আছে। নিজের উপর আত্ববিশ্বাস রেখে শুরু করতে হবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ইসরাত ও জাহির জানান, দেশীয়কে আরও সামনে এগিয়ে নিতে ম্যানুফ্যাকচারিং-এ জোর দিতে চান যাতে ক্রেতারা কম মূল্যে ‘দেশীয়’ থেকে পণ্য কিনতে পারেন।

আফসানা অভি
উদ‍্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here