এক হাজার টাকা দিয়ে শুরু

0
উদ্যোক্তা সোনিয়া আক্তার মেঘলা

ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি ঘরে বসে হাতের কাজ করতে খুব ভালোবাসতেন মেঘলা। অনেকটা নেশার মতো কাজ করতো এটি। স্কুল বা কলেজ ছুটির পর এদিক ওদিক না ঘুরে পড়াশোনা শেষ করে ঘরে বসে হাতের কাজ করতেন। মেঘলার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সবাই উৎসাহ দিতো খুব। সেই উৎসাহ থেকেই আজ উদ্যোক্তা সোনিয়া আক্তার মেঘলা।

ঠাকুরগাঁও-এর গোয়ালপাড়া গ্রামের সফিউল আলমের ছোট মেয়ে মেঘলার জন্ম এবং শৈশব-কৈশোর কেটেছে সেখানেই। কারমাইকেল কলেজ থেকে ফার্স্ট ক্লাস নিয়ে মাস্টার্স শেষ করেছেন তিনি।

২০২০ সালে করোনায় চারদিকে যখন সবকিছু বন্ধ, সেই সময়টাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। তার হাতের কাজের পারদর্শিতা সম্পর্কে আশেপাশের সবাই খুব ভাল জানতেন। তারা সবসময় উৎসাহ দিতেন সামাজিক পাতায় তার কাজগুলোর ছবি তুলে পোষ্ট করতে, এতে যে কেউ নিখুঁত হাতের কাজ পছন্দ করবে। পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব এবং ছোট ভাইবোনরা বলতেন, তোমার শিল্প ঘরের মধ্যে রেখো না, এটা ছড়িয়ে দাও, ভালো সাড়া পাবে।

সকলের অনুপ্রেরণায় করোনার সময় মাত্র এক হাজার টাকা দিয়ে পণ্য উৎপাদন করে সেই পণ্যের ছবি তুলে নিজের ফেসবুক ও পেজ এবং নিজ এলাকা ঠাকুরগাঁওভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপে পোষ্ট করেন। খুব ভালো সাড়া পান তিনি। একটি ওয়ালমেটের অর্ডারের মাধ্যমে শুরু হয় মেঘলার উদ্যোক্তাজীবন।

পাটপণ্যের সব ধরনের আইটেম নিয়েই কাজ করেন তিনি। শোপিস এবং ঘর সাজানোর আইটেমের মধ্যে রয়েছে গরুর গাড়ি, রিক্সা, সাইকেল, নৌকা, কুঁয়া, ঢেঁকি, গিটার, পুতুল, ঝরনা, ওয়ালমেট, রানার, ডোরবেল শিকা, পাপোশ, ছোট বড় আয়না, টিস্যুবক্স, ফুলদানি, কলমদানি, ভিজিটিং কার্ড হোল্ডারসহ অনেক কিছু।

পাট দেশের ঐতিহ্য। দেশপ্রেমের স্মারক ও পরিবেশবান্ধব বিধায় ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু করার ইচ্ছে থেকেই এই উদ্যোক্তা জীবন বেছে নেওয়া বলে জানালেন মেঘলা। পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে কাজ করছেন তিনি। তবে কাজের চাপ বেশি হলে অস্থায়ীভাবে আরও দু’জন সহযোগিতা করেন।

পাটের তৈরি নানা ধরনের শখের পণ্য তৈরি করেন, সেজন্য তিনি তার উদ্যোগের নাম দিয়েছেন ‘রকমারি শখের কাজ’। এই নামে তার একটি অনলাইন প্লাটফর্ম রয়েছে। দেশের প্রায় সব জায়গায় প্রোডাক্ট যায় মেঘলার। ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, রংপুর, পঞ্চগড়, ঢাকা, নীলফামারী, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, বগুড়ায় তার প্রোডাক্টের চাহিদা বেশি।

অর্ডারের উপর ভিত্তি করে মাসে প্রায় ১০ থেকে ১৮ হাজার টাকা আয় হয়।

দেশের অবহেলিত এবং প্রান্তিক নারীদের নিয়ে উদ্যোগের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে চান উদ্যোক্তা মেঘলা।

তিনি বলেন, ‘আমি টাকার দিক দিয়ে সফল কতটা হয়েছি সেটা আমি জানি না, তবে আমি আমার পণ্যের মাধ্যমে মানুষের কাছে অনেক ভালোবাসা ও সম্মান পেয়েছি। এটাই আমার বড় অর্জন।’

উদ্যোক্তা সোনিয়া আক্তার মেঘলা মনে করেন, ধৈর্য্য ধরে সততার সাথে কঠোর পরিশ্রম করলে সফলতা এক দিন না একদিন আসবেই। তাই লেগে থাকতে হবে।

সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here