তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে কম্পিউটার ট্রেনিং দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে মাত্র একটি কম্পিউটার, একটি প্রিন্টার আর ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে একটি তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর ‘শিক্ষা পরিবার’ গড়ার যাত্রা শুরু করেছিলেন স্বপ্নবাজ তরুণ সৈয়দ আহমদ জাকি।
শুরুতে দু একজন করে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ শিখতে আসলেন, দিন দিন যেমন আগ্রহী বাড়তে থাকল ঠিক তেমনি কম্পিউটারের সংখ্যা বেড়ে হলো ১০।
২০০০ সাল পর্যন্ত কম্পিউটার বেসিক কোর্সে পাঁচ’শ জনকে কম্পিউটার ট্রেনিংয়ের বেসিক কোর্স কমপ্লিট করালেন তরুণ উদ্যোক্তা সৈয়দ আহমদ জাকি।
কম্পিউটার খাতে উচ্চ শিক্ষায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের অনুমোদন নিয়ে আসলেন স্বপ্নবান উদ্যোক্তা বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে। ছাত্ররা এবার ৪ বছর মেয়াদী কোর্সের সনদ গ্রহণ করতে পারবে ট্রেনিং শেষে।
২০০২ সালে অনুমতি মিললো। গড়লেন বাংলাদেশ পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট। অনুমতি মিলেছে, এবার নিজের পরিবারের কাছে এবার দাবি তরুণ উদ্যোক্তার নিজেদের বাড়িতেই তিনি প্রতিষ্ঠান শুরু করতে চান। বুক ভরা স্বপ্ন। শতশত ছাত্র-ছাত্রী আসবে শিখবে তৈরি করবে দক্ষ জনশক্তি কম্পিউটার শিক্ষা খাতে।
পুরো পরিবারের অনুমতি মিললো। ইতিমধ্যেই উদ্যোক্তা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। ১০ হাজার স্কয়ার ফিটে এক নতুন যাত্রা হলো শুরু বাংলাদেশ পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট। ২০০২-২০০৩ সেশনে কম্পিউটার টেকনোলোজি প্রথম কোর্স ৪ বছর মোট ছাত্র ২১ জন। এই সেশনে ইলেক্ট্রনিক্স টেকনোলোজিতে দ্বিতীয় কোর্সে ৬৬ জন ছাত্র আসলো।
২০০৪-২০০৫ সালে ৮৮ জন কম্পিউটার এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স এ ভর্তি হলো ছাত্র-ছাত্রীরা বিপিআই তে। ২০০৫-২০০৬ দুটি নতুন ডিপার্টমেন্ট সংযুক্ত হলো অনুমোদন পাবার পর। সিভিল টেকনোলোজি ও ইলেক্ট্রনিক্স এ ১৭৩ জন ছাত্র-ছাত্রীর সরব উপস্থিতি মুখরিত করে তুললো ক্যাম্পাস। বাংলাদেশ পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট তরুণ উদ্যোক্তার শিক্ষণীয় উদ্যোগের। উদ্যোক্তা স্বপ্নের স্বার্থকতা খুঁজে পান। পেছনে ফিরে থাকানোর সময় আর নয়। বাংলাদেশের শিক্ষা খাতেই নিজের মেধা মনন, পরিশ্রম আর ঐকান্তিক নিষ্ঠা নিয়ে এগিয়ে যাবার সকল ব্রত নিয়ে নিয়োজিত করলেন তার নিজেকে।
সফলতার সোনার হরিণ দেখা দেবেই। তা শুধু নিজেকে নিয়েই নয়। দেশের শিক্ষা খাতে নিজকে সেবায় নিয়োজিত করে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা সম্পন্ন করলো বাংলাদেশ পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট থেকে। শিক্ষার শহর, সিল্ক সিটি, আমের দেশ পদ্মার বাতাসে শিক্ষার উদ্যোগ নিয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবার যুগ সন্ধিক্ষণে দাঁড়ায় সেই তরুণ উদ্যোক্তা।
বাংলাদেশ পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটের ভুবনে যোগ হলো টেক্সটাইল টেকনোলোজি। রাজশাহী বিভাগ, রংপুর বিভাগ অর্থাৎ যমুনার ঐ পাড়ে প্রথম বারের মত পরিচয় হলো ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, বাংলাদেশ পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটে। যেহেতু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি বা ফ্যাক্টরি বেইজ পড়াশোনা সেহেতু ইন্ডাস্ট্রি লিঙ্কেজের অংশ হিসেবে বিসিক রাজশাহীতে উদ্যোক্তা তার দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ৯৫০০ স্কয়ার ফিটে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ব্যবহারিক ক্লাসের শিক্ষণে স্থাপন করলেন গার্মেন্টস ল্যাব তথা ইন্ডাস্ট্রি।
আরএমজি সেক্টর বা গার্মেন্টস সেক্টর যা বাংলাদেশের রপ্তানির মোট ৭৫ ভাগ অবদান রাখছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সর্বোচ্চ শক্তিশালী খাত সেখানে এই সাবজেক্টটি নিয়ে পড়াশোনায় একটি ছাত্র বা ছাত্রীর জীবনের কর্মপথে চাকরি পাবার নিশ্চয়তায় ৪ বছরের ডিপ্লোমা কোর্সের প্রথম ইনষ্টিটিউশান পীর আউলিয়ার পূণ্যভুমি রাজশাহীতে।
টেক্সটাইল টেকনোলোজি ডিপার্টমেন্ট ৪৮ জন প্রথম সেশনে,গার্মেন্টস ডিজাইন এন্ড প্যাটার্ণ মেকিং। দুর্বার গতিতে শিক্ষার্থীরা এগিয়ে যেতে থাকে উদ্যোক্তার স্বপ্ন বাস্তব থেকে আরও নিবিড় বাস্তবতায় বরেন্দ্র ভূমিতে।
২০১০ সালে বিপিআই যোগ করলো মেক্যানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং, অটো মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং। ২০১১-২০১২ সালে আরও নতুন দুটি ডিপার্টমেন্ট সার্ভেইং এন্ড আর্কিটেকচার নতুন মাত্রা যোগ করে শিক্ষার ভুবনে। যুগপযোগী শিক্ষা এবং তার প্রায়গিক জ্ঞানের যে নতুন জগতে পদার্পণ বর্তমান বিশ্বের সাথে সঠিক গতিতে সময়োপযোগী কথা বলা যেন একটি ইনষ্টিটিউশানে, শিক্ষাকেন্দ্রে। উদ্যোক্তা নিজে এবার তার এমবিএ সম্পন্ন করলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
২০১৪ সাল প্রায় ১৫০০ জন ছাত্র-ছাত্রী। বর্তমানে ১০ টি ডিপার্টমেন্টে বাংলাদেশ পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটে ৮৫ জন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা করছে ২২০০ জন ছাত্র-ছাত্রী। ল্যাব এবং অফিস কর্মীর সংখ্যা ৪৩ জন। ইন্ডাস্ট্রিয়াল মডেলিং সফটওয়্যারে ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যবহার করছে সিমেন্স, এনএক্স এর মত সফটওয়্যার। আরএমজি ল্যাবে আজ বিশ্বের সর্বাধুনিক মেশিনটি স্থাপন করা হয়েছে এবং যে সফটওয়্যারে আজ ছাত্র-ছাত্রীরা শিখছে হাতে-কলমে।
সিঙ্গাপুর, মালেয়শিয়া, বাংলাদেশ যেকোন দেশে পড়াশোনা শেষ করবার সাথে সাথে চাকরি পাবার জন্য গোপনে গড়ে তুলছে দক্ষ জনশক্তি ছাত্রদেরকে। কারিগরি শিক্ষায় বা পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটে বাংলা ভাষার পাশাপাশি প্রায়গিক শিক্ষার বই গুলো ভীষণ ভালোভাবে বুঝতে পারার জন্য দেয়া হচ্ছে ইংরেজী ভাষা শিক্ষা এবং উন্নত বিশ্বের লেখা বইগুলো যাতে ছাত্ররা পড়তে পারে খুব সহজেইমেশিনগুলোকে চিনতে পারে খুব কাছ থেকেই।
২০১৯ সালে আজ বাংলাদেশ পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট শিক্ষা খাতের এক প্রাইভেট হাব। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক স্কিল্ড এন্ড ট্রেনিং ইনহেন্সমেন্ট প্রজেক্ট স্টেপ অ্যাফিলিয়াড। তিনটি ভবন এবং নিজেদের বিশাল ক্যাম্পাসে এডুকেশান ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলাদেশ পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট ইন্ডাস্ট্রি আজ নিকটবর্তী দেশ বাইরের যেকোন দেশ থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের আহবান জানাতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আজ ১ লক্ষ ৫০ হাজার স্কয়ার ফিট একটি কম্পিউটার আজ ৪০০ টি কম্পিউটার। একজন কর্মীকে নিয়ে যাত্রা শুরু করা আজ ১২৮ জনের এক শিক্ষা পরিবার। ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে স্বপ্ন শুরু করা যে উদ্যোগ তা তরুণ সফল উদ্যোক্তা আজ পরিচালনা করছেন সফলভাবে।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা