বেগম রোকেয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত আসমা সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাননি। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্রের বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রামে নামতে হয়েছে তাকে। সেই গত শতাব্দীর ১৯৮৮ সালে সেলাই শিখতে শুরু করেন। লেখা-পড়া এসএসসি পর্যন্ত। ১৯৯০-৯১ সালে সিলেট মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে ১ বছর মেয়াদী দর্জি বিজ্ঞান ট্রেডে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। এর পরপরই শুরু তার উত্থান পর্ব।
নানির কাছ থেকে পাওয়া মাত্র ১৪শ’ টাকা পূঁজি নিয়ে শুরু করেন নিজের ব্যবসা। দোকান নিলেন সিলেট প্লাজা মার্কেটে। নাম দিলেন স্টার প্লাজা টেইলার্স। নানা প্রতিকূলতা মাড়িয়ে এগিয়ে যেতে শুরু করলেন তিনি।
২০১৪ সালে স্টার ফ্যাশন হাউস নামে আরেকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। বর্তমানে সেখানে ৬০ থেকে ৬৫ জন মানুষ কাজ করছেন। তাদের বেশির ভাগই সমাজের অবহেলিত এবং চরম দরিদ্র। জানালেন ভালোই চলছে তার ব্যবসা। ব্যবসায় নেমে অবশ্য ব্যর্থতার ছোঁয়া ও পেয়েছেন তিনি। জিন্দাবাজারের আলহামরায় একটি দোকান করেছিলেন। অজ্ঞাত কারণে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন সেখানে। মৃদু হেসে জানান সেসময় লস হয় ৫ লাখ টাকা।
দুই সন্তানের জননী আসমার স্বামী আবুল খায়েরও একজন ব্যবসায়ী। নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হতে কি কি প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয়েছে আপনাকে? এমন প্রশ্নের জবাবে আসমা যা জানালেন, প্রতিকূলতাতো সব জায়গায়। ঘরে-বাইরে সব জায়গায়, সব সময় নানা বিধি-নিষেধতো আছেই, আছে প্রতিদ্বন্দী ব্যবসায়ীদের প্রতিহিংসামূলক আচরণ।
তবুও এগিয়ে গেছেন আসমা। মোটেও পাত্তা দেননি এসব। নিজের পরিবার থেকে সহযোগিতা তিনি ‘আদায়’ করে নিয়েছেন। ব্যবসা করে তিনি যে কেবল নিজেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তা নয়। আসমার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসা এবং চাকুরীর মাধ্যমে সফল নারীর সংখ্যা ১৯/২০ জনতো হবেই। তারা এই সিলেট শহরে এবং কয়েকজন নিজেদের গ্রামের বাড়িতে, স্থানীয় বাজারে ব্যবসা করছে-বেশ তৃপ্তি নিয়ে। নিজেই ব্লক বাটিকের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশিক্ষক হিসেবে আসমা ‘অঙ্গরুপা’ নামে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে ছিলেন। অনেকেই সেখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
উদ্যোক্তা হিসেবে বেশ কিছু পুরস্কার জমা হয়েছে সফল এই মানুষটির শোকেসে। যেমন, সফল নারী উদ্যোক্তা হিসাবে ২০১৬ সালে পেয়েছেন ওসমানী পদক, মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক, ২০১৫ সালে পেয়েছেন শেরে বাংলা শান্তি পদক। সিলেটে ‘হাসন উৎসব ২০১৭’ উপলক্ষেও পদক পেয়েছেন তিনি। সর্বশেষ, সরকারি স্বীকৃতি ‘জয়িতা’ পুরস্কার।
পিছিয়ে পরা নারীদের সাধ্যমত এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছেন আসমা উল হাসনা। এখন প্রতি বছর নিজের উদ্যোগেই দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। সাথে প্রশিক্ষণ শেষে বিনামূল্যে প্রদান করছেন সেলাই মেশিনও।
প্রায় ত্রিশ বছর পর, আজ তার সবই আছে। বর্তমানে তার আছে ৪টি ফ্যাশন হাউজ, একটি সেলাই কারখানা।
সাদিয়া সূচনা