নোয়াখালীর মেয়ে ফাহিমা সুলতানা, জন্ম ও বেড়ে উঠা সাভারে। ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্সের পাশাপাশি আইন বিভাগেও পড়াশোনা করেছেন। এরপর একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছিলেন প্রায় চার বছর।
ফাহিমার কল্পনাতেও ছিল না যে তিনি কখনও একজন উদ্যোক্তা হবেন। তবে সব সময়ই তিনি মনে মনে ভাবতেন নিজে কিছু করবেন, নিজের একটা পরিচয় থাকবে। বিয়ের পর স্বামী, সংসার নিয়েই ছিল তার জীবন। এর মধ্যে শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে তাদের বিশেষ সন্তান “রাইয়ান” আসে পৃথিবীতে।
সেই বিশেষ সন্তানের নামেই তার প্রতিষ্ঠান “রাইয়ান’স ভ্যারাইটিস কালেকশন”।
শুরু প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উদ্যোক্তা ফাহিমা বলেন: শুরু করেছিলাম ৬, ০০০ টাকা দিয়ে। সন্তানের থেরাপির জন্য, যা আমার পরিবার দিতো সেখান থেকে বাঁচিয়ে শুরু করেছিলাম আমার উদ্যোগ। ২০২০ সালের জুন মাসে পুরোপুরি কাজ শুরু করি। তার আগে কিছু একটা করবো তা নিয়ে ভাবছিলাম। সবসময়ই মন খারাপ করে থাকতাম সন্তান স্পেশাল শিশু হওয়াতে। নিজের মৃত্যু কামনা করতাম। ছোট বোনের সাথে যখন শেয়ার করতাম সে বলত, কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে। চিন্তা করতে থাকলাম কী নিয়ে কাজ করা যায়। সে -ই আমাকে উই গ্রুপে যুক্ত করে দেয়। সেখান থেকে জিরো লেভেল থেকে শিখতে শুরু করি, এতো অল্পতেই এতো কিছু শিখতে পারবো নিজেও বুঝতে পারিনি ।
বিছানার চাদরের প্রতি বরাবরই দুর্বলতা ছিল ফাহিমা সুলতানার। নিজে উদ্যোক্তা হবার পূর্বে অনলাইনে প্রচুর কেনাকাটা করতেন, ঘর সাজাতে ভীষণ পছন্দ করতেন, বিশেষ করে বিভিন্ন রকমের বিছানার চাদর দিয়ে রুম সাজানোটাই ছিল তার পছন্দের বিষয়। ‘তাই বিছানার চাদর নিয়েই কাজ শুরু করলাম,’ বলে জানান উদ্যোক্তা ফাহিমা সুলতানা।
তিনি বলেন: শুরু করেছিলাম বিছানার চাদর দিয়ে। পরবর্তীতে এর পরিধি বাড়িয়ে ম্যাচিং পর্দা, জামদানি আইটেম, শতরঞ্জি, টেবিল রানার ম্যাট, শাল, মশারি ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছি।নারায়ণগঞ্জ এবং যশোর থেকে পণ্যের কাজ করিয়ে থাকি।
ছয হাজার টাকা দিয়ে শুরু করা উদ্যোগ ছয় মাসে দাঁড়ায় আড়াই লাখ টাকায়। আড়াই বছরে এই পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ২০ লাখ টাকার মতো। দুজন কর্মী নিয়ে অনলাইনেই ফাহিমা তার উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। কাষ্টমারের প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করেন তিনি। দেশের ভেতরে সর্বত্র তার পণ্য পাওয়া যায়। দেশ ছাড়াও জার্মানি, সিঙ্গাপুর এবং আমেরিকাতে তার পণ্য যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
সামাজিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ফাহিমা বলেন, “প্রতিদিনই অনেক কষ্ট করেছি। ছেলের থেরাপি, স্কুল যাতে বন্ধ হয়ে না যায় স্বামীর পাশাপাশি নিজেও কিছু করার চেষ্টা করেছি। প্রথম দিকে সবার বাধা পেয়েছি। কারো সাহায্য বা সাপোর্ট পাইনি। সন্তান যেহেতু স্পেশাল শিশু সে ক্ষেত্রে শিশুটির পুরো দেখাশোনা আমাকেই করতে হয়। তাকে সময় দিয়ে আমি আমার কাজ চালিয়ে গিয়েছি এবং এখনো যাচ্ছি। এখন আর কারও কাছ থেকে হাত পেতে খরচ নিতে হয় না। উদ্যোক্তা হয়ে নিজের শখ, ইচ্ছে নিজেই পূরণ করতে পারি।”
তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য ফাহিমা বলেন: আপনি যা নিয়ে কাজ করতে চান তা নিয়ে পড়াশোনা করুন। অন্যের দেখাদেখি কাজ না করে নিজের জ্ঞান, নিজের মেধাকে কাজে লাগান। কোনো কিছুতেই কপি না করে নিজের আইডিয়া নিয়ে নিজের মতো করে এগিয়ে চলুন। আর ধৈর্য্য বাড়ান, পরিশ্রম করুন তাহলেই সাফল্যে আপনার হাতের নাগালের মধ্যেই থাকবে।
উদ্যোক্তা ফাহিমা সুলতানা তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানান: “রাইয়ান’স ভ্যারাইটিস কালেকশন” এর প্রোডাক্ট একটা ব্র্যান্ড হবে যা এক নামে সবাই চিনবে। একটা শোরুম নিতে চাই যেখানে বিভিন্ন ধরনের নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকবে। বিশেষ করে স্পেশাল বাচ্চার মায়েরা যেন ঘরের কোণে লুকিয়ে না থেকে তাদের বাচ্চাদের নিয়ে উদ্যোগের পথে এগিয়ে আসতে পারেন, সেই প্রচেষ্টা করে যাব।
সেই স্বপ্নই তিনি দেখেন।
আফসানা অভি
উদ্যোক্তা বার্তা