উদ্যোক্তা ফাতেমা সাইয়েদার এফএফ ফ্যাশন। করোনাকালীন সময়ে ২০২০ এ যাত্রা শুরু করেন উদ্যোক্তা। নিজের তৈরি মিষ্টি দিয়ে যাত্রাপথের সূচনা হলেও এখন সেখানে মেয়েদের পোশাক নিয়ে কাজ চলে পুরোদমে। শুধু তাই ই নয় বর্তমানে থ্রীপিস, শাড়ী, হিজাব, বিছানার চাদর নিয়ে কাজ করে নিজের উদ্যোগের সম্প্রসারণ করছেন তিনি।
কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে অনার্স শেষ করেছেন। এরপর পড়াশোনার টানে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এ এমবিএ করেন তিনি। খুব ছোটবেলায় বাবা মারা যায় উদ্যোক্তার। যাত্রার বীজ টা তখনই বোপিত হয়েছিল বলা যায়। বাবাহীন সংসারে নিজের ছোট ছোট শখ আহ্লাদ পুরন করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপারই ছিল বলা চলে ফাতেমার। ছোটবেলায় শিখে গিয়েছিলেন টাকা উপার্জন কতটা দরকার বেঁচে থাকার জন্য। তার কাছে ছোটবেলার এই স্বাবলম্বীতা অর্জনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ক্লাস ফোর, ফাইভে থাকতেই বাড়ির আসে পাশের ছোট বাচ্চাদের নিয়ে পড়াতাম।স্কুলের বৃত্তি পরীক্ষা দিতাম।ছোট থেকেই সামলম্বী হবো,এই চিন্তা মাথায় খুব ভালো ভাবে গেঁথে গিয়েছিল।”
দশ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট ও আদরের ফাতেমা। খুবই আদুরে ভাবে বেড়ে ওঠা ফাতেমা যে একদিন আদর আরাম আয়েশ ছেড়ে লেগে যাবে নিজের পরিচয় গড়তে তা কেউই ভাবে নি কখনও। তবে পরিবারের সহযোগিতা সবসময় ছিল তার এই যাত্রায়। দুই মেয়ে রয়েছে ফাতেমার। তাদের চিন্তায়ও কখনও আসে নি যে তাদের মা উদ্যোক্তা হয়ে উঠবে।
শুরু থেকেই চাকুরী করেছেন ফাতেমা। তবে মেয়েদের দেখাশোনা করাটা কিছুটা কঠিন মনে হওয়া এবং মেয়েদের যত্নে আপোষ না করে কর্পোরেট ছেড়ে স্কুলে চাকরি শুরু করেছেন তিনি। তার কাছে আমরা জানতে চাই তার কর্পোরেট থেকে এসে উদ্যোক্তা জীবনে আসার গল্প। তিনি এই ব্যাপারে বলেন, “করোনায় যখন বেতন বন্ধ হলো তখন মন খুব খারাপ, ভাবছি কি করবো আমার বড়ো মেয়ে বললো আম্মু তোমার মিষ্টি খুব ভালো , এটা থেকেই না হয় ব্যবসা করা শুরু করো।” মেয়ের এই কথা বেশ নাড়া দেয় তার মনে। এরপর থেকেই আগ্রহ পান মিষ্টি নিয়ে কাজ করার।
পরবর্তীতে ভাবনার মুলে ছিল ক্রেতা সংগ্রহ করা। উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের কাজকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া বেশ কঠিন ছিল প্রথমে তার কাছে।প্রথম অর্ডার টা আসে বিল্ডিংয়ের পাশের বাসার ভাবীদের কাছে থেকেই। কথায় কথায় যখন তিনি তাদের জানালেন উদ্যোগের কথা উনারাও উৎসাহ দিলেন। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয় নি তাকে। কিন্তু বাসা বদলের পর ডেলিভেরি সমস্যা প্রকট হলো আর তার নিজের হাতেও কিছু সমস্যা হওয়াতে মিষ্টি বাদ দিয়ে মেয়েদের থ্রীপিস নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। খুব ভালো সাড়া পান সেখান থেকে।
তারপর আর পথ চলা থেমে নেই উদ্যোক্তার। স্বামী, মা, মেয়েরা পুরো দমে সাহায্য করলো তার এই পথচলায়। এরপর শুধু পণ্য বেড়েছে আর সাথে কাজ বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দেশীয় সব পোশাক সংগ্রহ করেন তিনি। পাশাপাশি তার রয়েছে নিজস্ব কালেকশনও।
“চাকরি না করে উদ্যোক্তা হয়েছি, আমার শ্বশুর শুরু থেকেই বলেন যে, যেই কাজে তোমার ভালো লাগে করো।সামনে এগিয়ে যাও।” পরিবারের ব্যাপক সমর্থন লাভের কথা বলতে গিয়ে বলেন উদ্যোক্তা। তার পরবর্তী পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি জানান, “আশাকরি এই পথচলা থামবেনা।এগিয়ে যাবো আপন গতিতে।সব বাধা, সমালোচনাকে পিছনে ফেলে জয়ী হবো।”
নতুন উদ্যোক্তা বা তরুন উদ্যোক্তাদের ব্যাপারে ফাতেমার রয়েছে দারুন মনোভাব। তাদের ব্যাপারে তিনি বলেন, “আমি অনেক তরুণ উদ্যোক্তাদের চিনি যারা খুব পরিশ্রমি ও খুব ভালো কাজ করছে।একটাই কথা লেগে থাকতে হবে।সামনে এগিয়ে যেতে হবে।তবেই লাল সবুজের সূর্যটা আমাদের হবে।”
উদ্যোক্তা ঠোঁটের কোনায় মৃদু এক চিলতে হাসি এনে বলেন, “উদ্যোক্তা হিসেবে চাই যারা নিজে কিছু করতে চায়,তাদের সেই সুযোগ দিন দেখবেন তারা যা ফেরত দেবে তা আপনার কল্পনার থেকেও বড়।”
সাকিব মাহমুদ,
উদ্যোক্তা বার্তা।