উদ্যোক্তা হবার সুপ্ত বাসনা ইয়াসমিনকে চাকরিতে স্থির হতে দেয়নি

0
উদ্যোক্তা- ইয়াসমিন সুলতানা

ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী ছাত্রী ছিলেন ইয়াসমিন সুলতানা। এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স-মাস্টার্স, বিএড ও এলএলবি সবগুলোতেই কৃতিত্বের ছাপ রেখেছেন তিনি।

এতো পড়াশোনার পর চাকরিজীবী পরিবারের মেয়ে চাইলে নিজেও চাকরিতে থিতু হতে পারতেন সহজেই। কিন্তু উদ্যোক্তা হওয়ার সুপ্ত বাসনা তাকে চাকরিতে স্থির হতে দেয়নি। সবটুকু সামর্থ দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে।

বর্তমানে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন উইমেন এন্ড ই-কমার্স (উই)-এর যশোর জেলা কো-অর্ডিনেটর হিসেবে।

কেনো উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে ইয়াসমিন উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘তিন বছর শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে জজকোর্টে প্র্যাকটিস করেছি। বাচ্চা হওয়ার কারণে ২০১৮ সালে প্রাকটিস ছেড়ে দিই এবং তাদের টেক কেয়ারের কারণে চিন্তা করি আর চাকরির ভেতরে বা অন্য কোন পেশায় যাব না। সেই ভাবনা থেকেই ২০১৯ সালে উদ্যোক্তা হবার চিন্তা ভাবনা আসে মাথায়। হঠাৎ করেই শুরুটা করা যেহেতু যশোর হস্ত শিল্পের জন্য বিখ্যাত। আর আমার নিজেরও এটা খুব পছন্দের তো হস্তশিল্প নিয়েই আমার উদ্যোগের শুরু।’

ডিজিটাল মার্কেটিং-এর উপর কৃতিত্বের সাথে বেশ কিছু প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর মাত্র তিন হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে উদ্যোগ শুরু করেন ইয়াসমিন সুলতানা। এখন মাসেই আয় করছেন ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।

কী কী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন জানতে চাইলে উদ্যোক্তা বলেন, ‘হস্তশিল্পের সব ধরনের জিনিস নিয়ে কাজ করছি। যেমন: শাড়ি, পাঞ্জাবি, বাচ্চাদের ড্রেস, থ্রি পিস, ওয়ান পিস, কুর্তি, কুশন কভার, নকশী কাঁথা, টেবিল ম্যাট, ওয়ালম্যাটসহ হাতের কাজের যাবতীয় পণ্য। এছাড়াও নতুন যোগ হয়েছে খাঁটি গাওয়া ঘি এবং খেজুরের গুড়’।

ফেসবুকে ‘নান্দনিক সমাহার’ নামে উদ্যোক্তা ইয়াসমিনের একটি পেজ আছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তার অধীনে ২০জন কর্মী কাজ করছেন। দেশের মধ্যে ঝিনাইদহ, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, মাদারীপুর, ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট ইত্যাদি জায়গায় তার পণ্য বিক্রি হয়। নিজে সরাসরি বিদেশে রপ্তানি না করলেও বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকায় তার পণ্য গিয়েছে।

নিজের কাজ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে উদ্যোক্তা বলেন, “আমি মনে করি প্রতিটি নারীর স্বাবলম্বী হওয়া উচিত। সেই চিন্তা ভাবনা থেকেই নিজের একটা পরিচয় তৈরি করার জন্য উদ্যোক্তা হয়েছি। যেহেতু আমি যশোর জেলার বাসিন্দা আর যশোর হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত। আমি নিজেও হস্তশিল্পের ড্রেস সবসময় ছোটবেলা থেকেই পরে আসছি এবং আমার মাকেও দেখতাম পরতে এবং তিনি নিজেও অনেক ধরনের সেলাই করতেন। এটা থেকেই এর প্রতি একটা ভালোবাসা থেকেই এটা নিয়ে কাজ করার উৎসাহ পেয়েছি। ভবিষ্যতে যশোরের হস্তশিল্পকে আমার নাম ‘নান্দনিক সমাহার’-এর মাধ্যমে একটি ব্র্যান্ডিং করার চিন্তাভাবনা আছে”।

তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে উদ্যোক্তা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, ‘হতাশ হবেন না। প্রত্যেকটা মানুষকে আল্লাহ কিছু না কিছু বিষয়ে দক্ষ করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আগে নিজেকে জানুন যে আপনি কোন বিষয়ে দক্ষ। সেই বিষয়টি নিয়েই আপনি উদ্যোক্তা হবার চেষ্টা করুন। সে বিষয়ের উপরে পড়াশোনা করুন জানার চেষ্টা করুন আর সবচেয়ে বড় কথা যেটা আমি বলবো সেটা হচ্ছে ধৈর্য্য, সততা এবং পরিশ্রমী হলে সে একজন সফল উদ্যোক্তা অবশ্যই হবেন।’

সাইদ হাফিজ
উদ্যোক্তা বার্তা, খুলনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here