নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও আর্থিক সাক্ষরতা বৃদ্ধিতে দেশব্যাপী সম্পৃক্ত ডিজিটাল সেন্টারের নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে নারী উদ্যোক্তা সম্মেলন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এটুআই এর ‘সাথী’ নেটওয়ার্কের নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে বুধবার (১৫ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারের বিসিসি অডিটোরিয়ামে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বছরব্যাপী প্রান্তিক নারীদের আর্থিক সেবার আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনজন নারী উদ্যোক্তাকে ‘শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা সম্মাননা’ প্রদান করা হয় অনুষ্ঠানে। প্রধান অতিথি হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মোঃ সামসুল আরেফিন, ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবুল বশর, ট্রাস্ট ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়রা আজম এবং বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার ও জেন্ডার অ্যাডভাইজার স্নিগ্ধা আলী। এটুআই যুগ্ম-প্রকল্প পরিচালক নাহিদ সুলতানা মল্লিকের সভাপতিত্বে নানা সেশনের মধ্য দিয়ে সম্মেলন সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী।
আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিলো আর্থিক সেবা (এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং) সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি; প্রান্তিক নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও আর্থিক সাক্ষরতা বৃদ্ধিতে নারী উদ্যোক্তাদের করণীয় বিভিন্ন বিষয়ে অবহিতকরণ, সাথী নেটওয়ার্কের আওতায় নারী উদ্যোক্তাদের কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ করা।
সাথী নেটওয়ার্কের উদ্যোক্তারা অগ্রাধিকার পাবেন
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, গত ১৪ বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আমাদের নারী উদ্যোক্তাদের কখনো ব্যর্থ হতে দেখিনি। একটি উদ্যোগ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও নতুন অন্য একটি উদ্যোগ নিয়ে নারী উদ্যোক্তারা সফল হয়েছেন। উদ্যোক্তাদের অসামান্য অবদানের ফলে এটুআই, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও আইসিটি বিভাগের সহযোগিতায় আমরা দেশে এবং প্রবাসে অনেকগুলো ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, একজন সন্তানের পরিচয়ের ক্ষেত্রে বাবার আগেও প্রয়োজন মায়ের পরিচয়। আমাদের দেশের অন্য কোনো সরকার প্রধান এটা চিন্তা করেননি। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, আধুনিক বাংলাদেশ স্থপতি এবং নারীদের কর্মসংস্থানের বিপ্লবসাধনকারী শেখ হাসিনা যেকোনো নাগরিকের পরিচয়পত্রে বাবার সঙ্গে মায়ের নাম সংযুক্ত করেছেন। এই একটা সিদ্ধান্ত প্রজন্মের পর প্রজন্ম একটি অসম্প্রদায়িক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবদান রাখবে।
পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী আরেকটি সিদ্ধান্ত ছিল প্রতিটি ডিজিটাল সেন্টারে এক পুরুষ উদ্যোক্তার পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাকে যুক্ত করা। আজকে এমন বৈপ্লবিক পরিবর্তন এই সিদ্ধান্তেরই ফল। বাড়ছে সেবার বহর, গ্রাম হবে শহর এই স্লোগানকে সামনে নিয়ে গ্রামকে শহরের নাগরিক সেবা পৌঁছে দেয়ার কাজটি করছেন সাথী নেটওয়ার্কের সব স্মার্ট নারী উদ্যোক্তারা। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ডিজিটাল সেন্টারগুলো মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে, একইভাবে আমরা দেখতে চাই সারাদেশের প্রতিটি গ্রামে সাথী নেটওয়ার্কের সফল উদ্যোক্তারা একেকজন স্মার্ট নারী উদ্যোক্তা হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তৈরি হবে।
তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের সফল হওয়ার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি খুব অল্প পুঁজিতেও তারা নিজেদের এগিয়ে নিতে পারেন। এজন্য আমরা অনেক নারীকে আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছি, সামনের দিনগুলোতেও আমরা এ ধরনের প্রণোদনা দেওয়ার কথা ভাবছি। আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে ট্রেনিং, ইন্টার্নশিপ এবং ইনকিউবেশনের ব্যবস্থা করবো। এইসব ক্ষেত্রে সাথী নেটওয়ার্কের উদ্যোক্তারা অগ্রাধিকার পাবেন।
সাথী নেটওয়ার্ক
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাস্তবায়নাধীন ও ইউএনডিপি’র সহায়তায় পরিচালিত এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিভিন্ন উদ্ভাবনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের ১৪ মার্চ ‘সাথী’ নেটওয়ার্ক আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। সাথী নেটওয়ার্কের আওতায় ইতোমধ্যে ২০০ জন নারী উদ্যোক্তা তৈরি করা হয়েছে, যাঁরা প্রান্তিক পর্যায়ে নারীদের হাতের মুঠোয় বিভিন্ন আর্থিক সেবা (ব্যাংকিং ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস) পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ নিশ্চিতে কাজ করছেন।
গত এক বছরে ৪৫ হাজারের বেশি প্রান্তিক নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের আওতায় আনা হয়েছে। নারীদের আর্থিক সাক্ষরতা বৃদ্ধিতে প্রান্তিক পর্যায়ে দু’টি আর্থিক সাক্ষরতা প্রচারাভিযান ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়েছে। এই ক্যাম্পেইনের আওতায় প্রায় এক লক্ষ নারীর মাঝে প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক সেবা বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে প্রতিটি উপজেলায় অন্তত একজন এবং ২০২৬ সালের মধ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে অন্তত একজন করে নারী উদ্যোক্তা তৈরি করার লক্ষ্য ‘সাথী’ নেটওয়ার্কের।
আয়োজনে সম্মানিত শ্রেষ্ঠ তিন নারী উদোক্তা হলেন সিরাজগঞ্জের রায় দৌলতপুর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মোছাঃ মারুফা ইয়াসমিন, সুনামগঞ্জের আটগাঁও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের শেফালী খাতুন এবং কুমিল্লার আগানগর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার মোসাঃ শামছুন্নাহার।
মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা