রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে কুর্শা ইউনিয়নে গ্রামটির অবস্থান। গ্রামটির অসংখ্য সবুজ আদা, মরিচ আর বেগুনের খেত নজর কাড়ে। অনেকেই ব্যস্ত সেই খেত পরিচর্যা করতে। ভোরে সূর্য ওঠার আগেই গ্রামের অনেকে আদাখেতের বেগুন, মরিচ তুলতে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খেত থেকে তোলা বেগুন–মরিচ নিয়ে কৃষকেরা ছোটেন বাজারে।
একসময় যে গ্রামের মাঠজুড়ে দেখা যেত ধানখেত, এখন সেই মাঠজুড়ে আদা, বেগুন আর মরিচের খেত। এখানে আদার সাথি ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে বেগুন ও মরিচ। দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় ধান ছেড়ে গ্রামটির অনেকেই আদা চাষে ঝুঁকছেন। এই আদা চাষই ভাগ্য বদলে দিয়েছে অনন্তপুর গ্রামের মানুষদের।
ইউপি সদস্য মনির উদ্দিন বলেন, ১৫ বছর আগেও এভাবে অনন্তপুরে আদার চাষ হতো না। অন্য এলাকার মতোই সবাই পড়ে থাকতেন ধান নিয়ে। কিন্তু বেলে দোআঁশ মাটির এ এলাকায় আদার চাষ যে অনেক বেশি লাভজনক, সে বিষয়টি প্রথম ধরতে পারেন গ্রামের মোলায়েম খান। প্রথম তিনি বাণিজ্যিকভাবে আদার চাষ শুরু করেন। ফলন ভালো হওয়ায় এবং বেশি দামে বিক্রি করতে পারায় তিনি আরও বেশি জমিতে আদা চাষ করেন। তাঁর সাফল্য দেখে অন্য কৃষকেরাও ধানের বদলে আদা চাষে নেমে পড়েন।
কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আফজালুল হক জানান, আগে গ্রামটির মানুষ শুধু ধান চাষ করতেন। কিন্তু আদা চাষ শুরু হওয়ার পর ১০-১২ বছরের মধ্যে এখানকার অনেক কৃষক ধান চাষ ছেড়ে দিয়েছেন। আদাখেতে সাথি ফসল হিসেবে বেগুন, মরিচ, কচু, ঢ্যাঁড়স চাষ করছেন। এসব সাথি ফসল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন এখানকার চাষিরা।
গ্রামটিতে ঢোকার মুখে কৃষক রূপলাল চন্দ্রের বাড়ি। একসময় তিনি শুধু ধানের চাষ করতেন। এখন আদা আর বেগুনের চাষ করেন। তিনি বলেন, ধানের চেয়ে আদা চাষে লাভ দ্বিগুণ। এক একর জমিতে ধান চাষ করতে ব্যয় হয় ২৮-৩০ হাজার টাকা। উৎপাদিত ধান বিক্রি হয় ৪২-৪৫ হাজার টাকায়। এতে লাভ হয় ১২-১৫ হাজার টাকা। কিন্তু এক একরে আদা চাষ করতে ব্যয় হচ্ছে ৯০ হাজার টাকা। উৎপাদিত আদা বিক্রি হয় তিন লাখ টাকার বেশি। মুনাফা হেরফের হয় মূলত আদার উৎপাদন ও বাজারদরের কারণে।
সেখানকার একজন কৃষক বলেন, ‘আগোত মুই খালি ধানের আবাদ করছুনু। গত বছর খালি পাঁচ শতক জমিত আদা চাষ করি ১০ হাজার টাকা লাভ করছুন। হিসাব করি দেখছু, ৫০ শতকে ধান চাষ করি যে লাভ, পাঁচ শতক জমিত আদা চাষ করি তার থাকি দ্বিগুণ লাভ। ওই জন্য এবার ৭০ শতক জমিত আদা নাগাছুন। আদাখেতোত নাগা মরিচ, বেগুন বেচেয়াও ভালো টাকা পাওছুন।’
জানা যায়, গত মৌসুমে ৭০ শতক জমির ৫০ শতক জমিতে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে ধান চাষ করেছিলেন। এতে খরচ বাদ দিয়ে ৭ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। কিন্তু পাঁচ শতক জমিতে আদা চাষ করে ১০ হাজার টাকা লাভ করেন। এ কারণে এবার তিনি ৭০ শতক জমিতেই ধানের বদলে আদার চাষ করেছেন।
ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা