কৌশলেন্দ্র

বর্তমান সময়ে এমবিএ পাশ করে ভালো চাকরির স্বপ্ন সবাই দেখে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করে বড় বড় করপোরেট অফিসে চাকরি করছে এই তরুণেরা।

জায়ান্ট করপোরেট অফিসগুলো সব সময় বসে থাকে এমবিএ’র শিক্ষার্থীদের জন্য। আবার সেই শিক্ষার্থী যদি হয় ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের (আইআইএম) স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত, তাহলে সেখানকার কর্পোরেট অফিসের অবস্থা কেমন হবে ভাবুন!

ভারতের করপোরেট অফিসগুলোর কি অবস্থা হবে সেটা না হয় বাদ দিলাম কিন্তু বাইরের দেশের করপোরেট হাউজগুলোতে চাকরির প্যাকেজ নিয়ে আসবে।

তবে সব জায়গায় এমন কিছু মানুষ জন্মায় যারা খুবই দুর্লভ। তারা চাকরি করতে চায় না, নিয়োগকর্তা হতে চায়। দেশের জন্য কিছু করতে চায়, সমাজের পরিবর্তন আনতে চায়।

কৌশলেন্দ্র ঠিক তাই করেছিলেন। বিহারের নালন্দা জেলার মোহাম্মদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ভাই বোনদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন। বাবা-মা দুইজনই শিক্ষক ছিলেন। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালীন তাদের বাসা পরিবর্তন করা হয়। যেটি স্কুল থেকে প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে ছিল।

তবে মজার কথা হচ্ছে স্কুলে যারা মেধাবী ছিলো তাদেরকে কতৃপক্ষ খাবার, পোশাক, থাকার জায়গা এবং লেখাপড়া সামগ্রীর খরচ বহন করতেন।

স্কুল শেষ করার পর তিনি আইআইটি থেকে বি.টেক করতে চেয়েছিলেন কিন্তু সেটা কার্যকর করতে পারেননি, পরে তিনি গুজরাটের ভারতীয় কৃষি গবেষণা কাউন্সিল থেকে বি.টেক করেন।

এই সময়ে তিনি বুঝতে পারেন যে শহরের মানুষেরা গ্রামের মানুষদের থেকে অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। তখন থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন নিজের শহর বিহারকে নিয়ে কিছু করার।

তিনি ২০০৩ সালে বি.টেক সম্পন্ন করেন, এরপর কিছুদিন চাকরি করেন। পরবর্তীতে আইআইএম থেকে তিনি স্বর্ণপদক প্রাপ্ত হয়ে পড়াশোনা শেষ করেন।

ম্যানেজমেন্ট পড়া শেষ করার পর ২০০৭ সালে তিনি বিহারে চলে যান।  কারণ তিনি কখনও চাননি চাকরি করতে, চেয়েছিলেন অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে।

সেখানে গিয়ে ভাইদের সহায়তায় কৌশলেন্দ্র ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম দিকে মূলধনের ঘাটতির জন্য সমস্যার সম্মুখীন হন।

মানুষেরা তাকে নিয়ে মজা করতো কেননা তিনি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে সবজির ব্যবসা করছে, নিজে সবজি বিক্রি করছে। কিন্তু এতে তিনি কখনও পিছিয়ে পড়েননি। বর্তমানে সময়ে তার ফাইন্ডেশনে ২০ হাজার কৃষক এবং সাত’শ জন কর্মী নিয়োজিত আছে।

যেহেতু তিনি সবজির ব্যবসা করেন তাই এই সবজিকে সতেজ রাখা নিয়ে সমস্যার মধ্যে পড়তেন। বড় বড় ব্যবসায়ীরা যখন সবজি নিতো সেটা সতেজ করে রাখাটা কঠিন কাজ ছিল।

পরে তিনি পুসকার্টের ব্যবস্থা করেন। এতে প্রায় ৪-৫ দিন সবজি সতেজ রাখা যেত। খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য এই পুসকাটগুলো খুবই সহায়তা করেছিলো। একটি পুসকাটের দাম ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা।

এছাড়াও তিনি কৃষক এবং বিক্রেতাদের মধ্যকার ব্যবসায়ী হয়ে কাজ করেছিলেন। এতে করে কৃষকেরা ভালো দাম পেত।

প্রথম দিন কৌশলেন্দ্রর ব্যবসায়  লাভ হয়েছিলো ২২ রুপি, কিন্তু বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি বার্ষিক লাভ ৫ কোটি রুপি। প্রথম দিকে তার কর্মীদের প্রায় ১৪ ঘন্টা কাজ করতে হত। কিন্তু এখন প্রতিদিন তাদের ৪ ঘন্টা কাজ করতে হয়।

কৌশলেন্দ্র তার সাফল্যের কৃতিত্ব তার শিক্ষক এবং আইআইএম এর বন্ধু-বান্ধবদের দেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে তিনি সফল হয়েছেন তার সাহস এবং মানসিক শক্তির কারণে।

তার এই উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে বিহারের শাক-সবজি উৎপাদনকারী এবং বিক্রেতাদের অবস্থাকে পুনরুদ্ধারের এক বাস্তব উদাহরণ।

একই সঙ্গে, এটি তাদের জন্য অনুপ্রেরণা যারা মনে করেন কৃষি খাতে কোনো সুযোগ নেই। সবার প্রয়োজন কৌশলেন্দ্রের মতো ইচ্ছাশক্তি ও সংকল্পের। তাহলেই সফলতা আসবে।

হৃদয় সম্রাট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here