দ্বিতীয় ধাপে পুরস্কার বিতরণীতে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জনাব মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল এমপি মহোদয় এর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। তারা হলেন-
১. কর্মসংস্থান সৃজন ও আত্মকর্মসংস্থানে গৌরবোজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মোহাম্মদ ওমর ফারুক বিভাগীয় কোটায় ঢাকা বিভাগ থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। মাদারীপুর জেলার শিবচর নিবাসী মোঃ ওমর ফারুক মাদারীপুর যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে তিন মাস মেয়াদি গবাদিপশু, হাঁস-মুরগী পালন, প্রাথমিক চিকিৎসা, মৎস্য চাষ ও কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে যুব ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে ২০০৬ সালে একটি পোলট্রি খামার স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ডেইরি ফার্ম, মৎস্য চাষ এবং ফলের বাগান স্থাপনের মাধ্যমে প্রকল্পটি সম্প্রসারিত করেন। বর্তমানে তার মূলধন দেড় কোটি টাকা এবং ১২ জন স্থায়ী কর্মী বিদ্যমান।
২. জনাব সমুন মীর বিভাগীয় কোটায় ঢাকা বিভাগ থেকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার বাসিন্দা সুমন মীর ২০০৫ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে মৎস্য চাষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ‘সাজ এগ্রো’ নামে একটি প্রকল্প স্থাপন করেন। খামারে মুরগি পালন, মৎস্যচাষ, লিচুসহ অন্যান্য ফলমূল-শাকসবজি উৎপাদন হচ্ছে। তার বাৎসরিক নীট আয় প্রায় ২৪ লাখ টাকা।
৩. জনাব মশিউর রহমান বিভাগীয় কোটায় চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার ওয়াছিউর রহমান ২০১৪ সালের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স মাস্টার্স পাস করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি ২০০৯ সালে স্বল্প পরিসরে মৎস্য চাষ এবং পোল্ট্রি খামার স্থাপন করেন। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠান ‘রহমান এগ্রো ফার্ম এন্ড ফিশারিজ’ এর মূলধন প্রায় ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং বাৎসরিক নীট আয় ৩৯ লক্ষ।
৪. জনাব মোঃ বেলাল হোসেন বিভাগীয় কোটায় চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন। লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলাইয় ১৯৯৭ সালে ফুলগাজী যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গবাদিপশু হাঁস-মুরগী পালন, প্রাথমিক চিকিৎসা, মৎস্য চাষ এবং কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে পোল্ট্রি খামার স্থাপন করেন। পরবর্তীতে মৎস্য চাষ এবং গরু মোটাতাজাকরণ খামার স্থাপন করে প্রকল্পটি সম্প্রসারণ করেন। বর্তমানে তার মাসিক নীট আয় প্রায় ১৩ লক্ষ এবং ৩০ জন বেকার যুবক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
৫. জনাব মোছাঃ সাজেদা খাতুন রাজশাহী বিভাগ থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। তিনি জয়পুরহাটের সদর উপজেলার বাসিন্দা। ২০০৮ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে পোলট্রি, ছাগল পালন এবং মৎস্য চাষের খামার প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তার মাসিক নীট আয় দেড় লক্ষ টাকা এবং ১৬ জন স্থায়ী এবং অস্থায়ী কর্মী আছেন।
৬. জনাব মোঃ উজ্জল কাজী রাজশাহী বিভাগ থেকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন। ২০০৬ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে মৎস্য চাষ প্রশিক্ষণ এবং ঋণ গ্রহণ করে মৎস্য চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি মৎস্য চাষের পাশাপাশি পোল্ট্রি ফার্ম, মালটা এবং পেয়ারা চাষ করছেন। তার বাৎসরিক আয় ৩৭-৩৮ লক্ষ টাকা।
৭. জনাব কাজী নাসরিন আক্তার শান্তা খুলনা বিভাগ থেকে বিভাগীয় কোটায় প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। খুলনার সদর উপজেলার মেয়ে তিনি। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে বিউটিফিকেশন ট্রেডের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং এর পাশাপাশি রান্না, দর্জি, ব্লক বাটিক, এম্বুস/এপ্লিক এসব বিষয়ের উপর কাজ করেন। এ যাবত ১৫৪০ জনকে বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, বর্তমানে তার মাসিক নীট আয় ৬০ হাজার টাকা।
৮. জনাব মোঃ মহিদুল ইসলাম খুলনা বিভাগ থেকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন। যশোরের ছেলে মহিদুল ২০১৫ সালের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ৬ মাস মেয়াদী বেসিক কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০১৫ সালের বিজয় দিবসে তিনি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপন করেন। বর্তমানে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে তার একটি সফটওয়্যার কোম্পানি আছে। মোট ১৭ জন কর্মী এবং বেশ কিছু ফ্রিল্যান্সার কর্মরত আছেন।
৯. কর্মসংস্থান সৃজন ও আত্ম-কর্মসংস্থানের গৌরবোজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জনাব মোছাঃ শিল্পী বেগম বিভাগীয় কোটায় সিলেট বিভাগ থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। সুনামগঞ্জ সদরের মেয়ে শিল্পী বেগম ২০০১ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে পোশাক তৈরি প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ বাড়িতে ব্যবসা শুরু করেন। এছাড়া বিউটি পার্লার ও গ্রোসারি শপ এর ব্যবসার মাধ্যমে তিনি স্বাবলম্বী।
১০. জনাব মোঃ আকির হোসেন বিভাগীয় কোটায় সিলেট বিভাগ থেকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন। তিনি হবিগঞ্জ সদরের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ২০০৫ সালে হবিগঞ্জ যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গবাদিপশু, হাঁস-মুরগী পালন, প্রাথমিক চিকিৎসা, মৎস্য চাষ এবং কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে যুব ঋণের মাধ্যমে একটি ডেইরি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তার বার্ষিক নীট আয় সাড়ে চার লক্ষ টাকা এবং চারজন যুবক তার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
১১. জনাব ফাতেমা আক্তার জলি দ্বিতীয় কোটায় বরিশাল বিভাগ থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। বরিশাল সদরের মেয়ে ফাতেমা আক্তার জলি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ব্লক-বাটিক, পোশাক তৈরি, মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে ‘জলি বুটিকস এন্ড ফুড কর্নার’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি একজন সফল আত্মকর্মী।
১২. জনাব শিরিন সুলতানা, বরিশাল বিভাগ থেকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন। ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলায় তার বাড়ি। তিনি ২০১৩ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে মুরগী পালন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং ২০১৩ সালেই যুব ঋণের মাধ্যমে পোল্ট্রি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। পাশাপাশি কোয়েল পাখি এবং ছাগল পালন করেন। তার বার্ষিক আয় ৩ লক্ষ টাকা।
১৩. জনাব নাজনীন আক্তার, বিভাগীয় কোটায় রংপুর বিভাগ থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। দিনাজপুরের মেয়ে নাজনিন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে বিউটিফিকেশন, পোশাক তৈরি, ফ্যাশন ডিজাইন, ব্লক বাটিক, হস্তশিল্প, এমব্রয়ডারী এবং ফাস্ট ফুড, চাইনীজ রান্নার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং প্রকল্প স্থাপন করেন। বর্তমানে তার প্রকল্পে ১৬ জন কর্মী কাজ করছেন। তার বার্ষিক নীট আয় ১০ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।
১৪. জনাব মোঃ গোলাম মোস্তফা দুলাল, বিভাগীয় কোটায় রংপুর বিভাগ থেকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন। রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার বাসিন্দা মোঃ গোলাম মোস্তফা দুলাল যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে মৎস্য চাষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ‘আহমেদ’ মৎস্য প্রকল্প গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে ৫০ হাজার টাকা যুব ঋণ গ্রহণ করে একটি মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা করেন। আরো পরে গড়ে তোলেন ডেইরি ফার্ম। তার বার্ষিক আয় ১১ লক্ষ টাকা প্রায়।
১৫. জনাব মোঃ মোজাম্মেল হক, বিভাগীয় কোটায় ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার বাসিন্দা তিনি। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে তিন মাস মেয়াদি গবাদিপশু, হাঁস-মুরগী পালন, প্রাথমিক চিকিৎসা, মৎস্য চাষ এবং কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও যুব ঋণ গ্রহণ করে গড়ে তোলেন কোয়েল পাখির খামার যা বর্তমানে ‘ফকির কোয়েল খামার এন্ড হেচারী’ তে পরিণত হয়েছে। তার কর্মচারীর সংখ্যা ১৫ জন এবং মাসিক নীট আয় ৯০ হাজার টাকা।
১৬. জনাব মোঃ মোকাম্মেল হোসেন বিভাগীয় কোটায় ময়মনসিং বিভাগ থেকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন। শেরপুর নলিতা বাড়ির সন্তান মোঃ মোকাম্মেল হোসেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে মৎস্য চাষ প্রশিক্ষণ এবং যুব ঋণের মাধ্যমে পুকুরে আধানিবিড় পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ প্রকল্প শুরু করেন। তিনি একজন সফল প্রশিক্ষক ও বটে।
১৭. জনাব শাহানা আক্তারকে নারী কোটায় জাতীয় যুব পুরস্কার ২০২০ প্রদান করা হয়েছে। শাহানা আক্তার নেত্রকোনা সদরের মেয়ে। তিনি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ এবং ঋণ নিয়ে গড়ে তোলেন ‘পাখি বুটিকস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার’ আজ তার প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ৩০ থেকে ৩৫ জন মেয়ে কাজ করে।
১৮. ফাতেমা মনিরকে যুব সংগঠক হিসেবে সারা দেশের যুব নারী কোটায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করায় জাতীয় যুব পুরস্কার ২০২০ প্রদান করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার মেয়ে ফাতেমা মনির ১৯৯৮ সাল থেকেই নিজেকে সমাজ সেবায় নিয়োজিত করেছেন। ২০০৫ সালে বেকার যুব মহিলাদের নিয়ে গড়ে তোলেন ‘বাংলাদেশ নারী উন্নয়ন ও হস্তশিল্প ফাউন্ডেশন’। এর মাধ্যমে এলাকার অসহায় ও দরিদ্র বেকার মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলেন।
১৯. জনাব মোঃ ইকবাল হাসান তপু, যুব সংগঠক হিসেবে সারা দেশে যুব পুরুষ কোটায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করায় জাতীয় যুব পুরস্কার ২০২০ প্রদান করা হয়েছে। নেত্রকোনা সদরের ছেলে মোঃ ইকবাল হাসান তপু ১৯৯৯ সালে যুবদের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন ‘অমাস’। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবাধিকার, প্রশিক্ষণ ও আত্মকর্মসংস্থান, আইটি, স্যানিটেশন, গৃহ নির্মাণসহ দুর্যোগকালীন সময়ে জনগণের পাশে থাকা অমাসের লক্ষ্য। এই প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি গড়ে তোলেন ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন কলেজ ও লোক সাহিত্য গবেষণা একাডেমী। অমাস প্রতিষ্ঠা কাল থেকেই যুবদের উন্নয়নের নানাবিধ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা