পার্বত্য জেলা সাংস্কৃতিক পরিষদের মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো চারদিনব্যাপী পার্বত্য মেলা। রবিবার (১৫ জানুয়ারি) বিকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত চার দিনব্যাপী পার্বত্য মেলার সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি। সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাসন্তী চাকমা এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংশুই প্রু চৌধুরী ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংশুই প্রু চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম।
মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন সাংবিধানিকভাবে একজন বাঙালি যে অধিকার ভোগ করবে, সে অধিকার পার্বত্য অঞ্চলের মানুষদেরও দিতে হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে যারা পশ্চাৎপদ তাদের সামনে নিয়ে আসার জন্য আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। সংবিধানে বলা হয়েছে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। পাশাপাশি অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীকে সমতাভিত্তিক জায়গায় আনার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ায় কথাও সংবিধানে বলা হয়েছে। সেভাবেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষরা এগিয়ে যাচ্ছেন, সফলভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।’
মন্ত্রী বলেন, বিস্ময়কর সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ পরিবেশ যে অঞ্চলে বিরাজমান সেটা পার্বত্য অঞ্চল। এ কারণে বাংলাদেশকে বলা হয় সৌন্দর্যের লীলাভূমি। পাহাড়ের মানুষ-সমতলের মানুষ, পাহাড়ের সংস্কৃতি-সমতলের সংস্কৃতি একাকার হয়ে আছে আমাদের এ বাংলাদেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ভেতর। পার্বত্য অঞ্চলের নিজস্ব সংস্কৃতি অবশ্যই ধরে রাখতে হবে। তাদের ভাষা, প্রচলিত প্রথাগত জীবনযাপন, তাদের জীবন বৈশিষ্ট্য এগুলোকে ধরে রাখা না গেলে অপূর্ব সৌন্দর্যের সমন্বিত এক বাংলাদেশ এক সময় থাকবে না।
তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের মানুষদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ভাষা, জীবনবোধ, চালচলন সবকিছু সংরক্ষণ করার জন্য যা যা করা দরকার রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সেটা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে আরও বেশি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কোন অঞ্চলকে অনুন্নত রেখে, পেছনে রেখে গোটা দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয় না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, পাহাড়ী মানুষদের নেতৃত্ব সমতলের মানুষদের নেতৃত্বের সঙ্গে সমন্বিতভাবে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়নে সমভাবে সমদৃষ্টি দিয়ে বর্তমান সরকার কাজ করছে। পাহাড়ে আজ বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ– কী নেই। সকল উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ পার্বত্য অঞ্চলে চলছে। শেখ হাসিনা সরকার ছাড়া দেশের পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নে এভাবে অতীতে কেউ পদক্ষেপ নেয়নি।
সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, পার্বত্য অঞ্চল দেশের জন্য সম্পদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায় এ অঞ্চলে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। এ অঞ্চল খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়েছি আগামীতে পার্বত্য অঞ্চল হবে এ দেশের সবচেয়ে সম্পদশালী এলাকা।
পার্বত্য অঞ্চলের কৃষিজ পণ্য, ফল-ফসলের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য, প্রচারের জন্য, জনগণের কাছে তুলে ধরার জন্য প্রতিবছর পার্বত্য মেলার আয়োজন করা হয় বলে জানান পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী।
পরে বক্তব্য সেরা স্টল ও সেরা কৃষি পণ্যের জন্য ৬ জন উদ্যোক্তাকে ক্রেস্ট এবং চেক প্রদান করা করা হয়। সব শেষে ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন।
চারদিনব্যাপী পার্বত্য মেলায় ১০৩টি স্টল ছিল। মেলার স্টলে তিন পার্বত্য জেলায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য, হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী কোমর তাঁতে বোনা পণ্য, ঐতিহ্যবাহী পার্বত্য খাবার দ্রব্য প্রদর্শন ও বিক্রয় করা হয়।
শেষদিন মেলা ছিল উৎসবমুখর।
মেহনাজ খান,
উদ্যোক্তা বার্তা