গল্পটা একটু অন্যরকম। রোগ ব্যধি জ্বরা শরীরের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকে। তবুও মানুষ বাঁচে। তবুও এগিয়ে যেতে হয়। তিনিও অদম্য। বলছিলাম রোকেয়া পারভিন সুমনার কথা।
দেশে নিজ উদ্যোগে যারা পাটজাত পণ্য প্রস্তুত করছেন তাদের একজন রোকেয়া পারভীন সুমনা। রাজধানীর শেখেরটেক এলাকায় রয়েছে সুমনা`র বৈচিত্র্য নামের পাট ও চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান।
কৈশোরোত্তীর্ণ হতেই বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। সেটা ২০০৫ সালের কথা। তারপরও তিনি নিজের ইচ্ছে শক্তিতে কাজে লাগিয়ে অনার্স শেষ করলেন। সাথে করলেন ইন্টেরিয়র ডিপ্লোমা। চাকরিও জুটে গেল একটা ইন্টেরিয়র ফার্মে। সবকিছু চলছিল গোছালো ভাবে। হঠাৎই কিছুটা ছন্দ পতন! তার শরীরে বাসা বাঁধে ক্যান্সার। কিন্তু জীবনের কাছে তিনি হার মানবেন কেন! সংগ্রাম শুরু করেন রোগের বিরুদ্ধে। অদম্য ইচ্ছে শক্তিতে এগিয়ে চলেন তিনি।
অদম্য এই নারী উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাজের চিন্তা করতাম। জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে যায় চিকিৎসার কাজে। কিছুটা সুস্থ হয়ে ডুবে থাকতাম কাজের ভেতর। ‘প্রজাপতি বুটিক’ নামে একটি রিসাইক্লিং হ্যান্ডমেড প্রোডাক্টের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললাম ২০১৩ সালের দিকে। পুঁজি মাত্র তিন হাজার টাকা। বড় বোন ও ননদের কাছ থেকে নেন দুটো সেলাই মেশিন। পাটের চট কিনে বানালেন ব্যাগ। বাসার ডাইনিং রুমেই হলো শুরুটা। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে কাজের পরিধি। এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে
চামড়া শিল্পের উদ্যোক্তা তানিয়া ওয়াহাবের হাজারিবাগের কারখানায় প্রশিক্ষণ নিলাম।
তানিয়ার কাছে অনুরোধ করে চামড়ার টুকরো ওয়েস্টেজ অংশ সংগ্রহ করে তৈরি করেন পেন্সিল বক্স, মানিব্যাগ সহ নানা ধরনের ব্যবহার্য সামগ্রী। যেহেতু পুঁজি কম তাই ছুটে যেতেন শাহজাহানপুরের বস্তিতে। সেখান থেকে কিছু দক্ষ নারী শ্রমিককে কাজে লাগালাম।
ব্যবসার পাশাপাশি সুমনা জেডিপিসি থেকে পাটের পণ্য তৈরির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বিসিক ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকেও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন উৎপাদন শুরু করলেন।
যেমন প্লাস্টিকের ফেলনা বোতল, কাঠের ডিজাইনের গহনা, কাঁচের বোতলের ফেলনা সিপির নানা ধরনের শোপিস, কাগজের তৈরি টিস্যু বক্স, জরি ও কাপড়ের বটুয়া।
সুমনা বললেন, এসব পণ্য তৈরি করেন নিজের করা ডিজাইনে। কাঁচামাল সংগ্রহের জন্য লোক রয়েছে তার। কাজের পাশাপাশি বাড়তে থাকে পরিচিতি। প্রচুর অর্ডার আসতে থাকে। কাজের পরিধিও বেড়েছে। যেহেতু নানামুখি কাজ করেন। বৈচিত্র্যময় কাজ রয়েছে তাই ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানের নামটি পরিবর্তন করে রাখলেন ‘বৈচিত্র্য ‘।
তিনি প্রায় পাঁচ হাজার নারীকে প্রশিক্ষণও দিয়েছেন। নিজে একটি পার্লার চালু করেছেন। সেখানে সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান।
সুমনা বলেন, আসলে কাজ নিজেকেই সৃষ্টি করতে হবে। নিজের ইচ্ছে শক্তিতে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
ইমরান পরশ
উদ্যোক্তা বার্তা, ঢাকা