৩ হাজার টাকায় উদ্যোগের শুরু

0
উদ্যোক্তা ফাতেমা আক্তার

স্বামী তার আর ১০ দশটা মানুষের মতো সুস্থ ছিলো না। তাই বিয়ের পর স্বামীর কাছ থেকে টাকা চাইতে ভালো লাগতো না। তখন থেকেই কিছু একটা করবেন ঠিক করেন। যাতে পরিবারের কাছে টাকা না চেয়ে নিজের খরচগুলো চালাতে পারেন এবং প্রয়োজনে তাদেরকেও সাহায্য করতে পারেন। বেশ কয়েক বছর হলো ফাতেমা আক্তার তার সমস্ত খরচ নিজেই চালাচ্ছেন।

পড়াশোনার মধ্যেই বিয়ে। মাস্টার্স পড়াকালীন সময়ে গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩ বছর চাকরি করেন। পরে বেবি হওয়ার কিছুদিন পর চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর নিজের প্রয়োজন থেকেই উদ্যোক্তা হয়েছেন ফাতেমা আক্তার।

শুরুতে ৩,০০০ টাকা নগদ দিয়ে ও বাকিতে ১০,০০০ টাকার কিছু থ্রিপিস কেনেন। কাপড় বিক্রি হওয়ার পর সব টাকা শোধ করে দেন। এতে সাহায্য করেছিলো তার খালাতো বোন শাপলা। মূলত খালাতো বোন শাপলাকে কাপড় নিয়ে বিজনেস করতে দেখে উদ্যোক্তা ফাতেমা ও তার বড় বোন রোকসানা ঠিক করেন বাসায় কিছু কাপড় এনে বিক্রি করে দেখবেন কেমন সাড়া পান। ভালো হলে পারে আবার আনবেন। ফাতেমা মনে করলেন তারও কিছু করা দরকার। তার নিজের প্রতি সবসময়ই প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস ছিলো, ‘আমি পারবো’।

বর্তমানে তিনি থ্রিপিস, বেডসিট, বোরকা, শাড়ি, শীতের নানান রকম দেশীয় শাল ও মনিপুরী ওড়না নিয়ে কাজ করছেন। থ্রিপিসের মধ্যে আছে সুতি জামদানি ও হাফসিল্ক জামদানি থ্রিপিস, বাটিকের থ্রিপিস, বুটিক্সের থ্রিপিস, কুর্তি বা ওয়ানপিস ও গাউন। তিনি একাই তার ব্যবসা পরিচালনা করেন।

‘পূর্ণতা ফ্যাশন হাউজ’ নামে অনলাইনে তার একটি পেইজ আছে। আসলে তিনি যখন কাজ শুরু করেন তখন অনলাইন ছিলো না। গত বছর তার ভাগ্নে রিফাত তাকে একটি ফেসবুক পেজ খুলে দেন। এভাবেই অনলাইনটা শুরু। আস্তে আস্তে শিখে নিয়েছেন।

উদ্যোক্তা ফাতেমার পণ্য এখনো আনুষ্ঠানিক ভাবে বিদেশে রপ্তানি হয়নি। তবে তার একজন আত্মীয়র মাধ্যমে তার পণ্য আমেরিকায় পৌঁছেছে। এছাড়া তার পেইজ থেকে অনেক প্রবাসীর পণ্যের অর্ডার দেন। দেশের মধ্যে মিরপুর, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সিদ্ধেশ্বরী, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ সহ আরো কিছু জায়গায় তার পণ্য গিয়েছে। প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেন ফাতেমা আক্তার। উৎসব-অনুষ্ঠানে এ পরিমাণ আরও বাড়ে।

উদ্যোক্তা বার্তার সাথে একান্ত আলাপচারিতায় ফাতেমা আক্তার জানান, ‘জীবনে কিছু করার প্রবল ইচ্ছে থেকেই উদ্যোক্তা হয়েছি। যাতে মানুষকে সাহায্য করতে পারি। অসহায় মানুষের পাশে দাড়াতে পারি। আমি যেহেতু মেয়ে তাই মেয়েদের পোশাক নিয়েও শুরু করি। আর বেডসিটের চাহিদা দেখে বেডসিট সংযোজন করি।

আর এ বছর শীতের শাল নিয়ে কাজ করছি এখন পর্যন্ত আমার ৬০টি দেশীয় শাল বিক্রি হয়েছে। আমি কোনো বিদেশী শাল বিক্রি করি না। দেশি শাল ব্যবহারে মানুষকে উৎসাহিত করে এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে দিতে চাই। যাতে মানুষ দেখে ও বোঝে আমাদের দেশীয় শালগুলো কতো সুন্দর। আমার ইচ্ছে আমার নিজের একটি ইন্ডাস্ট্রি হবে। অনেকের কর্মসংস্থান হবে। সেখানে দেশীয় পোশাক তৈরি হবে। আর বিদেশেও রপ্তানি হবে আমাদের দেশিয় পণ্যগুলো। বিশ্বের দরবারে একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে মাথা উঁচু করে দাড়াতে চাই’।

উদ্যোক্তা ফাতেমা আক্তারের বাবা গাজীপুর ক্যান্টনমেন্টের একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। ৪ বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম, রংপুর। কিন্তু বাবার চাকরিসূত্রে জন্ম ও বেড়ে ওঠা গাজীপুর ক্যান্টনমেন্টে। গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি আর গাজীপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন। এরপর ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন।

সাইদ হাফিজ ,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here