তরুণ উদ্যোক্তা ড চিং চিং মারমা

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের মেয়ে ড চিং চিং রাজধানীর ইডেন কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর শেষে চাকরির বাজারে ঢুঁ মারেননি তা নয়। বরং বেশ শ্রম ঢেলেছেন যুতসই একটা চাকরি পেতে। কিছুদিন চাকরিও করেছেন। কিন্তু দিন শেষে প্রাপ্তির খাতা খুলে দেখেন সেখানে শূন্যতাই যেন বাসা বেঁধেছে। ঠিক সেসময় থেকেই ড চিং এর ভাবনা চাকরি খুঁজবো না চাকরি দিবো।

কিন্তু কি করবেন, এসব ভাবতে গিয়ে একসময় মনে হয়েছে নিজের শখকেই কেন কাজে লাগাচ্ছেন না। বলে রাখা ভালো, বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে বেশ আগ্রহবোধ করতেন তিনি। যেমনটা বলা যেতে পারে, বাড়ির দেয়াল থেকে শুরু করে মেঝে, রঙিন আলপনায় রাঙিয়ে দেয়া, কখনো বা বাড়ির ফেলনা জিনিসপত্র, পুরনো সংবাদপত্র ইত্যাদি দিয়ে নতুন কিছু তৈরি, রঙ-তুলির ছোঁয়ায় পুরনো কোনো আসবাবপত্র অথবা গৃহস্থালি সরঞ্জামকে নতুন রূপ দেয়া তার ভালো লাগার কাজ।

রঙ-তুলির ছোঁয়ায় ফেলনা জিনিসপত্রের নতুন রূপ

সেই সূত্র ধরেই পুরনো কাগজ দিয়ে গহনা, ঘর সাজানোর সামগ্রী ইত্যাদি তৈরি করেছেন, কখনো কখনো পুরনো কোনো কিছুর ওপর রঙ দিয়ে করেছেন বৈচিত্র্যময় নকশা। সেসব দেখে পরিচিতরা সবসময় বাহবা দিতেন তাকে। যেহেতু এসব কাজে পারদর্শিতা রয়েছে, তাই এই কাজগুলো নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াসেই শুরু করেন ‘ফিনারি’।

উদ্যোক্তা বার্তাকে ‘ফিনারি’র শুরুর দিককার কথা জানাতে গিয়ে ড চিং বলেন, “সম্পূর্ণ শূন্য থেকেই শুরু করেছিলাম। সে সময় পুঁজি বলতে ছিল আমার আগ্রহ আর শখ। কেননা শুরুতে পুরনো আর ফেলনা জিনিস থেকেই নতুন কিছু তৈরি করেছি”।

২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে ফেসবুকে ‘ফিনারি’ নামে একটি পেজ খোলেন ড চিং চিং। সেখানেই তার তৈরি পণ্যগুলোর ছবি তুলে আপলোড দিতেন। কাঁচের বোতলের ওপর আস্ত একটা রিকশা কিংবা শখের কাঠের জুয়েলারি বাক্সটির উপরে লাল, হলুদ, সবুজে আঁকা ফুল লতাপাতা ক্ষণিকেই যেন বদলে দেয় পণ্যের ম্যাড়মেড়ে ভাব। এখানেই শেষ নয়, কখনোবা দৈনন্দিন ব্যবহারের পণ্যের ওপর শোভা পায় নান্দনিক নকশা।

‘ফিনারি’র পণ্য ক্রয় করছেন ক্রেতাগণ

ধীরে ধীরে ‘ফিনারি’র গ্রাহকদের চাহিদা বাড়তে থাকে, সঙ্গে বাড়তে থাকে ড চিং এর ব্যবসার পরিধিও। শূন্য থেকে শুরু হওয়া ফিনারির এখন নিজস্ব কারখানা রয়েছে। নকশাকার থেকে শুরু করে ডেলিভারি ম্যানসহ মোট ১৫ জন কর্মী কাজ করছেন ড চিং চিং মারমার তত্ত্বাবধানে।

তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, “মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে পড়তাম। কিন্তু মনোবল হারাইনি। বারবার ভেবেছি আমাকে পারতেই হবে। যারা উঠে দাঁড়াতে চান, তাদের বলবো ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু’, যেখান থেকে বিফল হও, সেখান থেকেই শুরু করো।

ড চিং চিং তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানান, ‘ফিনারি’কে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চান যেখানে ছোট বড় সকলে বাংলার সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে রঙ তুলির ছোঁয়ায় আঁকতে শিখবে।

জেবুননেসা প্রীতি
এসএমই করেস্পন্ডেন্ট ,উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here