হকার থেকে বিশ্বসেরা ইনভেস্টর ওয়ারেন বাফেট

0
উদ্যোক্তা ওয়ারেন বাফেট

ওয়ারেন বাফেট যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্যের ওমাহাতে ১৯৩০ সালের ৩০ আগষ্ট জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম হাওয়ার্ড বাফেট ও মায়ের নাম লিলা বাফেট। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকত্তোর পাশ করেন। ওয়ারেন বাফেট একজন মার্কিন ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী এবং জনহিতৈষী ব্যক্তি। তাকে বিংশ শতকের সবচেয়ে সফল বিনিয়োগকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাফেট বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী।

একজন ব্যতিক্রমী বিশ্ব ব্যক্তিত্ব। জীবনের শুরুতে ছিলেন হকার। বিক্রি করেছেন সংবাদপত্র। মাত্র ৬ বছর বয়সে পত্রিকা বিলি করে মাসে আয় করেন ১৭৫ ডলার। এক সময় মুদি দোকানেও কাজ করতেন এ উদ্যোক্তা। তিনি মনে করেন, জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য নিজেকে আগে স্থির করতে হয় তার লক্ষ্য। তিনি এমনই এক লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যান। মাত্র ১১ বছর বয়সে ৩৮ ডলারে সিটি সার্ভিসের ৬টি শেয়ার কিনেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ১৯৪৩ সালে তিনি জমা দেন আয়কর রিটার্ন। সেখানে তিনি নিজেকে সংবাদপত্র বিলিকারী হিসেবে পরিচয় দেন। পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি তার কাজ চালিয়ে গেছেন। সংবাদপত্র বিক্রি করা অর্থ দিয়ে তিনি মাত্র ১৪ বছর বয়সে ছোট্ট একটি ফার্ম কেনেন।

১৯৪৫ সালে তিনি হাই স্কুলে থাকতেই এক বন্ধুর সঙ্গে ব্যবহার করা একটি পিনবল মেশিন কেনেন মাত্র ২৫ ডলারে। মেশিনটি বসানোর মতো জায়গা ছিল না তাদের। তারা এক নাপিতের দোকানের ভেতরে তা বসিয়ে দিলেন। এর মাত্র কয়েক মাসের মাথায় তারা বিভিন্ন স্থানে বসালেন একই রকম তিনটি মেশিন। এভাবেই তার ব্যবসায় যাত্রা শুরু। তিনি ১৯৫১ সালে তার স্নাতকোত্তর শেষ করে ১৯৫১ থেকে ’৫৪ পর্যন্ত বাফেট-ফক অ্যান্ড কো.-তে ইনভেস্টম্যান সেলসম্যান হিসেবে চাকরি করেন।

পরবর্তী সময়ে তিনি নিউ ইয়র্কে সিকিউরিটি এনালিস্ট হিসেবে ২ বছর দায়িত্ব পালন করেন এছাড়া তিনি বাফেট পার্টনারশিপ লি. বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে ইনস্যুরেন্সসহ বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি করেছেন। এর বেশির ভাগই তার নিজের। ১৯৬২ সালে তিনি পরিণত হন মিলিয়নিয়ারে। বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে হলো একটি টেক্সটাইল কারখানা। ১৯৭০ সালে তিনি শেয়ার হোল্ডারদের কাছে বিশেষভাবে পরিচিত চিঠি লেখা শুরু করেন। শেয়ারহোল্ডারদের কাছে এ চিঠি ভীষণ জনপ্রিয়তা পায়। এ সময়ে বেতন হিসেবে তিনি বছরে পেতেন ৫০ হাজার ডলার। ১৯৭৯ সালে তার বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে প্রতি শেয়ারের জন্য ৭৭৫ ডলার দিয়ে ব্যবসা করতে থাকে। এই শেয়ারের দাম ১৩১০ ডলার পর্যন্ত ওঠে। এ সময়ে তার নিট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬২ কোটি ডলার। এর ফলে ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রথমবারের জন্য তিনি ফোর্বস ৪০০-তে স্থান পান। ২০০৬ সালের জুনে তিনি ঘোষণা দেন যে, তিনি বার্কশায়ার হোল্ডিংয়ের শতকরা ৮৫ ভাগ বার্ষিক উপহার হিসেবে পাঁচটি ফাউন্ডেশনে দিয়ে দেবেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ দেয়া হয় বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনকে।

তিনি প্রায় ৬৩টি কোম্পানির মালিক। ২০২২ সাল পর্যন্ত বাফেটের মোট সম্পদের পরিমান দারায় ১১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পৃথিবীর দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী হওয়া সত্বেও তার মধ্যে নেই কোন বিলাসিতা। বিশাল প্রাসাদ নয়, ৫ রুমের একটি বাড়ি কিনেছিলেন ৩১ হাজার ডলার দিয়ে।

অনুপ্রেরণার আধার এই সফল ব্যাক্তির জীবন অভিজ্ঞতা দিয়ে গড়া। তার জীবনী থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তিনি প্রায় বিভিন্ন সেমিনারে কিংবা লেখায় উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন। ওয়ারেন বাফেট প্রায়ই বলতেন, সঞ্চয়ের জন্য একটি নিরাপদ কাঠামো তৈরি করতে হবে। তার মতে, একটি সঠিক বিনিয়োগ করার আগে, উদ্যোক্তাকে কমপক্ষে ছয় মাস আগে থেকে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করতে হবে। এর মানে হচ্ছে, যদি হঠাৎ কিছু নগদ প্রয়োজন হয় এবং বিনিয়োগের বিপদে পড়লে আপনি তা পরিচালনা করতে পারেন। বাফেট প্রায়ই উদ্যোক্তাদের জন্য এই ধরনের পরামর্শ দেন।

বাফেট বলেছেন, “আমি মনে করি আমাদের প্রতিদিন কিছুক্ষণ বসে বসে চিন্তা করা উচিত।” যদিও মার্কিন ব্যবসায় খুবই অস্বাভাবিক। আমি অনেক পড়ি এবং ভাবি। আমি ব্যবসায় বেশিরভাগ লোকের চেয়ে কম প্ররোচিত সিদ্ধান্ত নিই। আমি এটা করি কারণ আমি এই ধরনের জীবন পছন্দ করি। ব্যবসার মূল বিষয়গুলি সর্বদা মনে রাখা উচিত। বাফেটের সবচেয়ে মূল্যবান পরামর্শগুলির মধ্যে একটি হল, ন্যায্য মূল্যে একটি ভাল কোম্পানি কেনার চেয়ে ভাল দামে একটি ভাল কোম্পানি কেনা ভাল।

বাফেট সবাইকে স্মার্ট এবং বাস্তববাদী হতে বলেন। এই বিষয়ে তিনি বলেন,”আমি এমন ব্যবসার শেয়ার কেনার চেষ্টা করি যা এত বড় যে একজন বোকাও সেগুলি চালাতে পারে।” যতক্ষণ না আপনি কোনো কাজ করতে পারেন ততক্ষণ কথা বলবেন না। তাই বাফেট বলেন,”কাজ করার আগে অহংকারী হবেন না” মানবতা মানুষের দ্বারা তৈরি এমনটাই মনে করেন তিনি। তার মতে, “মানুষের আধ্যাত্মিক সততা তার কাজের মধ্যেও প্রতিফলিত হয়। আপনি একজন খারাপ ব্যক্তি থেকে একটি ভাল চুক্তি করতে পারবেন না।”

একজন সত্যিকারের ভালো মানুষ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাফেট। বাফেটের একটি অত্যন্ত মূল্যবান মন্তব্য রয়েছে যা বিশ্বের সব সময়ের জন্য প্রযোজ্য বাফেট বলেছিলেন,”সম্মান তৈরি করতে ২০ বছর সময় লাগে, এটি ভাঙতে ৫ মিনিটও লাগে না। আপনি যদি এটি সম্পর্কে চিন্তা করেন তবে আপনি একটি ভিন্ন জীবনযাপন করবেন।”

বাফেট মনে করেন, কোনো কাজ শুরু করার আগে আপনাকে অবশ্যই নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। তিনি বলেন, “আমি সবসময় জানতাম আমি ধনী হব, আমার এটা সম্পর্কে সামান্যতম সন্দেহ ছিল না।”

নানা ধরনের অনুপ্রেরনা এবং কাজের পরামর্শ পাওয়া যায় তার জীবনী থেকে। যা অনুসরণের মাধ্যমে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম তাদের উদ্যোক্তা জীবনকে আরো প্রসারিত করতে পারে। খুবই অল্প বয়সে কাজ শুরু করেন বাফেট। তারপরও তিনি মনে করেন এ ব্যবসায় আসতে তার অনেক দেরি হয়ে গেছে। আরও আগে ব্যবসা শুরু করা উচিত ছিল।

সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here