মাসে বিক্রি লাখ টাকার পণ্য

0
উদ্যোক্তা শারমিন সুলতানা বুবলি

হাওড় অঞ্চলের মেয়ে শারমিন সুলতানা বুবলি। জন্ম ও বেড়ে উঠা নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ থানার ছোট্ট একটা গ্রাম মানশ্রীতে। ওখানেই তার বেড়ে উঠা। ডিঙ্গাপুতা হাওড়ের সাথে বাড়ি হওয়ায় হাওড়ের সাথে জড়িয়ে আছে শৈশবের হাজারো স্মৃতি।

গ্রামের প্রাইমারি স্কুল শেষ করে মাঘান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি তারপর মোহনগঞ্জ মহিলা কলেজ থেকে এইচ. এস.সি পাশ করেন। ইডেন মহিলা কলেজ ও বৈবাহিক সূত্রে ময়মনসিংহ থাকায় আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স মাস্টার্স শেষ করেন।

পড়াশুনা শেষ হওয়ার পর ছোট বাচ্চা নিয়ে তেমন ভাবে চাকরির চেষ্টা করা হয়ে উঠেনি। তবে প্রাইমারি স্কুলে কয়েকবার পরীক্ষা দিয়েছিলেন। একবার খুব ভালো রিটেন পরীক্ষা দিয়ে ভাইভাতেও ভালো করার পরও চাকরিটা হয়নি। তখন খুব মন খারাপ হয়। পরের বার রিটেন পরীক্ষা খুব ভালো দেই সেখানেও ভাগ্য কাজ করেনি। সরকারি ভাবে বাতিল করা হয় সেই পরীক্ষাটি। তারপর আর কখনো কোথাও চেষ্টা করেননি।

চাকরির চিন্তা মাথা থেকে বাদ দেন কিন্তু কিছু একটা করার খুব ইচ্ছে ছিলো। কিভাবে কি করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। মনে মনেই স্বপ্নগুলো সাজাতেন আর সেগুলো মাঝে মাঝে স্বামীর সাথে শেয়ার করতেন।

২০১৯ সালের শেষের দিকে হঠাৎ করেই তার স্বামী অফলাইনে তাকে একটা শো-রুম করে দিয়ে স্বপ্নের বীজটা বপন করে দেন। তার স্বপ্নের কথাগুলো স্বামীর সাথে শেয়ার করতেন বলেই হয়তো সে তার স্বপ্নগুলোকে বুজতে পেরেছিলো। মূলত স্বামীর হাত ধরেই তার স্বপ্নের পথে হাটা শুরু।

যেহেতু তার শুরুটা অফলাইনে হয় তাই সবকিছু মিলিয়ে ৭-৮ লাখ টাকা পুঁজি দিয়েই শুরু হয়েছিলো। সব ধরনের পোশাক নিয়ে কাজ শুরু করেন। অবশ্যই সেগুলো দেশীয় পণ্য। তার সব প্রোডাক্ট সরাসরি তাতীদের কাছ থেকে আসে।

অনেক পরিকল্পনা নিয়ে পথ চলা শুরু করেছিলেন কিন্তু শুরুর ঠিক তিন থেকে চার মাসের মাথায় করোনা মহামারী এসে সবকিছু এলোমেলো করে দিলো। পেন্ডামিকের কারণে অনিদৃষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো শোরুমটা। শোরুম যেহেতু বন্ধ তাই অনেকটা হতাশ হয়ে যান। একবার ভাবেন শোরুমটা বন্ধ করে দেবেন। কিন্তু হাজবেন্ড কিছুতেই বন্ধ করতে দেন নি।

কি করবেন বুঝতে পারছিলেন না তখন দেখা পান উইমেন এন্ড ই-কমার্স (উই) প্লাটফর্মের। আর তখনি পুরোপুরি ভাবে অনলাইনে ‘শারমিন’স কালেকশন’ নামে একটা পেইজ খুলে সেখানে ফোকাস করেন। পাশাপাশি ‘প্লাটিনাম’ নামে তার স্বপ্নের শো-রুম টি সবার দোয়া ও সাপোর্টে আর বন্ধ করতে হয়নি। কানাডা, লন্ডন, সৌদি আরব সহ আরো কয়েটি দেশে আমার তৈরি পণ্য গিয়েছে। দেশের ভিতর মোটামুটি প্রায় সব জেলাতেই রেগুলার তার পণ্য যাচ্ছে। আনুমানিক মাসে প্রায় লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়।

উদ্যোক্তা বলেন, ‘অফলাইনে যখন শো রুম দেই তখন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তার মধ্যে প্রার্থক্যটা আমি বুঝতাম না। কাজ করতে করতে যখন এই দুইটা বিষয় ভালোভাবে বুঝলাম তখন ভাবি আমি তো তাহলে ব্যবসায়ী। আমাকে উদ্যোক্তা হতে হবে। আমি একজন দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত হতে চাই। সেই ভাবনা থেকেই শুরু করলাম নিজস্ব ডিজাইনে ব্লকের শাড়ি, থ্রি পিস, কুর্তি ও ব্লকের হিজাব করা। আস্তে আস্তে জামদানি কাষ্টমাইজড শাড়ি ও পাঞ্জাবি করছি। এভাবেই একে একে নিজস্ব পণ্য তৈরি করি। একান্তই নিজের ভাবনা থেকে শুরু করি হাতে তৈরি গহনা। খুব অল্প সময়ে গহনা নিয়ে ও ভালো রেসপন্স পাচ্ছি সবার কাছ থেকে।’

সাইদ হাফিজ
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here