তরুণ সফল উদ্যোক্তা সাজেদুর রহমান

২০১৬ সালে এসএমই ফাউন্ডেশন আমাকে জাতীয় বর্ষসেরা উদ্যোক্তা পুরষ্কারে ভূষিত করে, যা আমার জন্য অবিশ্বাস্য ছিলো। সেদিন মা আমার সাথেই ছিলেন।

সেদিনের পর আমার ব্যবসায়িক জীবন নতুন এক মোড় নেয়। মিডিয়ার কল্যাণে মানুষ জানতে পারলো দেশে একটি পণ্য উৎপাদিত হয় যা শতভাগ পরিবেশবান্ধব ও সাস্থ্যসম্মত। দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লো আমার পণ্যের প্রচার।

কেপিসি’র পেপার কাপ

পেপার কাপের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ফ্যাক্টরি বড় করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম। নিজের পুঁজি দিয়ে পূর্বাচলের পাশে রুপগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে ফ্যাক্টরির জন্য জায়গা কিনলাম ঠিকই, কিন্তু ফ্যাক্টরি করতে তো অনেক টাকার প্রয়োজন।

আমার স্কুলের বন্ধু তুহিন। সে এখন আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার। ২০১৭ তে চীন সফরের সময় একটা রেস্টুরেন্টে দেখা। বললাম একটি পরিবেশবান্ধব ফ্যাক্টরি ডিজাইন করে দিতে। শতভাগ সবুজ ও আধুনিক ডিজাইনের নকশা এঁকে দিলো।

উদ্যোক্তার আধুনিক ডিজাইনের ফ্যাক্টরির নকশা

ব্যাংকের সাথে কথা বলে কাজও শুরু করলাম। কিন্তু দেখা দিলো বিপত্তি। তখন দেশের ব্যাংকিং খাতে দেখা দিয়েছিলো অরাজকতা। ব্যাংকগুলো লোন দিচ্ছিলো না।

অন্যদিকে পকেটের পুঁজি প্রায় শেষ পর্যায়ে। ফ্যাক্টরির কাজও অর্ধেক হয়ে গেছে। শেষ করতে না পারলে মারাত্মক বিপদ। চোখে মুখে শুধু অন্ধকার দেখছি। দাঁতে দাঁত চেপে আবারও শুরু হলো লড়াই।

ব্যাংক কিছু টাকা দিলো পাশাপাশি আমিও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ফ্যাক্টরির কাজ শেষ করলাম, যার আয়তন ১৬ হাজার বর্গ ফিট।

নতুন মেশিন স্থাপনও সম্পন্ন করলাম। কর্মী সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৪০ জনে। দেশের বাজার ছড়িয়ে এখন বিদেশের বাজারে দৃষ্টি আমার। সম্ভাবনার পরিধি অনেক বড়। প্রয়োজন শুধু সবকিছু গুছিয়ে এগিয়ে যাওয়া।

ফ্যাক্টরিতে কর্মরত কর্মীরা

স্বপ্নপূরণের এই পথটা কখনোই মসৃণ ছিলো না। প্রতিটা পদক্ষেপে ছিলো বাধা। আর তা অতিক্রম করতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিলো ধৈর্যশীলতার।

এখন প্রায়শই আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি আর বলি, হে মহান আল্লাহ তুমি সবই পারো। তোমার রহমত ছাড়া কিছুই হয় না। যে শক্তি মহান আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন তা আমি মানুষের কল্যাণে কাজে লাগাতে পারলে নিজেকে সফল মনে করবো।

“উদ্যোগ  ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের রুপরেখা” নামে আমি একটি বই লিখেছি, যা নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে অবদান রাখবে বলে আশা করি।

এই দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে গিয়ে যাকে সবচেয়ে কাছে পেয়েছি সে আমার স্ত্রী। তার অপরিসীম আত্মত্যাগ আর ভালোবাসা আমাকে জুগিয়েছে অনুপ্রেরণা। সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষ করে যখন ঘরে ফিরি দুই সন্তানের সাথে খুনসুটি আমার সমস্ত ক্লান্তিকে দূর করে দেয়। আর তাদের দিকে তাকিয়েই আমি দেখি আগামীর ভবিষ্যৎ আর সমৃদ্ধির স্বপ্নগাঁথার নতুন কোন গল্প।

তরুণ সফল উদ্যোক্তা কাজী সাজেদুর রহমান 
বর্ষসেরা এস এমই উদ্যোক্তা -২০১৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here