সেলিম রেজা সফল কৃষক, উদ্যোক্তা ও গবেষক

0
উদ্যোক্তা সেলিম রেজা

বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড কৃষি। কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপি’তে কৃষি খাতের অবদান ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।

বাংলাদেশের কৃষক প্রতিদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বিভিন্ন ধরণের ফসল উৎপাদন করে যেমন দেশবাসীর খাদ্য চাহিদা পূরণ করছেন, তেমনি নিজেদের ভাগ্যেরও পরিবর্তন ঘটাচ্ছেন। প্রচলিত ফসলের পাশাপাশি নানা মুল্যবান অপ্রচলিত ফসল উৎপাদনেও তারা সফলতা দেখাচ্ছেন।

ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে। দেশের কৃষক দারিদ্রমুক্ত হওয়া মানেই, দেশের অর্থনৈতিক সচ্ছলতার দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যাওয়া। কৃষিক্ষেত্রে যেকোনো ধরণের সাফল্য তাই দেশবাসীর মুখে হাসি ফোটায়।

আজকে উদ্যোক্তা বার্তায় সেই সকল কৃষকদের কুর্নিশ জানাচ্ছি যারা প্রচলিত ফসলের পাশাপাশি নানা মুল্যবান অপ্রচলিত ফসল উৎপাদনেও সফলতা দেখাচ্ছেন এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করে সোনার ফসল ফলাচ্ছেন।

নাটোরে জন্মগ্রহণকারী উদ্যোক্তা মো. সেলিম রেজা একজন সফল কৃষক, উদ্যোক্তা ও গবেষক। উদ্যোক্তা কৃষিকাজ নিয়ে সবসময় গবেষনা করে থাকেন। তিনি শুরুতে যে বিষয়গুলোর উপর গবেষণা শুরু করেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম হলো ভেষজী শতমূল, মিচরি দানা, ঘৃতকুমারী ও শিমুল ইত্যাদি। শিক্ষা জীবনে তিনি এমএসএস, এলএলবি, বিএড এর উপর মাস্টার্স ও গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছেন।

উদ্যোক্তা সেলিম রেজা বাংলাদেশে প্রথম ২০০২ সালে আপেল ও থাই কুল বড়ই চাষ শুরু করেন তার নিজস্ব ৩৮ বিঘা জমিতে। তিনিই প্রথম নাটোরে থাই ও বড় কুলের আড়ৎ তার খামারের নিকটে আহমেদপুরে স্থাপিত হয়। পাশাপাশি বর্তমানে আরেকটি থাই ও বড় কুলের আড়ৎ বৃহৎ আকারে পার্শ্ববর্তী নাটোরের বনপাড়ায় রয়েছে।

২০০৬ সালে উদ্যোক্তা সেলিম রেজা কৃষক পর্যায়ে দেশে প্রথম বারমাসি থাই পেয়ারা চাষ করেন। এই থাই পেয়ারা চাষে ভালো সফলতা লাভ করেন। এছাড়া উদ্যোক্তা তার কৃষি জমিতে কলকাতা থেকে আনা কাটা বিহিন গোলাপ, মেরুন রংয়ের গ্ল্যাডিওলাস ফুল, বিদেশি রেড লেডি জাতের পেপে চাষ করেও সফল হন।

উদ্যোক্তা তার খামারে দেশের প্রথম তাইওয়ান থেকে আনা মালচিং পেপার ব্যবহার করে আসছেন। এই মালচিং চাষে মাটির আর্দ্রতা রক্ষা হয়, সার সেচ কম লাগে, শ্রমিক কম লাগে এবং আগাছা জন্মায় না। উদ্যোক্তা সেলিম রেজা বর্তমানে ৯টি নাবি জাতের আম নিয়ে গবেষণা করছেন। যা কৃষি বিভাগের সাথে পরাপর্শ সাপেক্ষে নামকরণ করা হবে।

উদ্যোক্তা কৃষিতে তার নতুন নতুন উদ্ভাবন, অর্গানিক, নিরাপদ, বাণিজ্যিকভাবে লাভবান, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ বান্ধব ও হাজারও মানুষের (পুরুষ ও মহিলা) কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। উদ্যোক্তা খামার দেখে আশেপাশের এলাকার মানুষ উৎসাহিত হচ্ছে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দুর হচ্ছে।

দেশে নতুন নতুন প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে।উদ্যোক্তা তার খামারের সফলতার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ” বর্তমানে পেয়ারাসহ বিভিন্ন জাতের বারমাসি লেবু, লেট ভ্যারাইটি আম, (গৌরমতি, যাদুভোগ, বারী-৪, বান্দিগোড়), নিলুদ্দিন (বারি-১১), ব্রুনাই কিং, বারমাসি বেদেনা, শরিফা, ড্রাগন ফল, বাতাবী লেবু, রামবুটান, ম্যাংগোষ্টিন, পারসিমন, আনারস, বারমাসী কদবেল, খাট জাতের অল্প সময়ে ফলনশীল (২ থেকে ৩ বছর) কেরালা প্রজাতির হাইব্রিড নারিকেল, ভিয়েতনাম থেকে আনা সিয়াম গ্রিন কোকোনাট ও সিয়াম কোকোনাট চাষ শুরু করেছি এবং সফলতার মুখ দেখছি।”

এই সব কিছুর পাশাপাশি উদ্যোক্তা বিভিন্ন ফল যেমন- আম, কলা, শরিফা, বেদানা, পেয়ারা ইত্যাদিতে ব্যবহার উপযোগী ও সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহারও শুরু করেছেন যাহা দেশের জন্য দৃষ্টান্ত। উদ্যোক্তা আরো বলেন,” দেশের বিলুপ্ত প্রায় ও পুষ্টি সমৃদ্ধ বিষমুক্ত ফলগুলো মানুষ জাতে বার মাস খেতে পায় এটাই আমার পরিকল্পনা।”

কৃষিতে উদ্যোক্তা সেলিম রেজার সফলতা,ও উন্নয়নে দৃষ্টান্ত মূলক অবদান রেখে সারা বছর বৃক্ষ রোপন, ফল উৎপাদন ও অন্যের জন্য মডেল ও গবেষণাসহ বিষমুক্ত ফল উৎপাদনের জন্য আন্তর্জাতিক, রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় পর্যায়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নিকট হতে ১১টি পুরস্কারসহ ৭৪টিরও বেশি সনদ, ক্রেস্ট, গিফট ও সম্মাননা অর্জন করে দেশে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে সর্বাধিক সম্মননা অর্জন করার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আগামীতে নিজস্ব খামারে উৎপাদিত ফল ও সবজী থেকে বিভিন্ন জ্যাম, জেলী, জুস ইত্যাদি ছোট শিল্প কারখানা গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং দেশের উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা ও বিদেশে রপ্তানি নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করছেন।

উদ্যোক্তা সেলিম রেজা দেশের কৃষির উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য নিজ অর্থায়নে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া ও শ্রিলঙ্কায় সফর করেছেন এবং অনেক নতুন নতুন জাত এনে তার খামারে নিয়মিত গবেষণা করছেন। বর্তমানে নাটোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় দেড়শো বিঘা (১৫০ বিঘা) জায়গার উপর তার স্বপ্নের কৃষি খামারের নাম “দৃষ্টান্ত এগ্রো ফার্ম এন্ড নার্সারী।”

সেখ মুসফেক -উস -সালেহীন
উদ্যোক্তা বার্তা
ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here