তিলোত্তমা নগরী ঢাকাকে বলা হয় রিকশার শহর। শহরের অলিগলি, কখনো বা রাজপথে হেলেদুলে বেরিয়ে পড়া এ বাহন বিশ্ববাসীর কাছে বিস্ময় বটে। শুধু কি রিকশা বরং এ বাহনের পুরোটা জুড়ে থাকা রঙচঙে নকশাও কীভাবে যেন মনটাকেও রঙিন করে তোলে। রিকশা পেইন্ট নামে পরিচিত বিশেষ এ ধরনের নকশা তাই সমাদৃত ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীর কাছে। আদিবাসী নারী ড চিং চিং ঐতিহ্যবাহী রিকশা পেইন্টকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছেন ‘ফিনারী’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
ইডেন কলেজের ইতিহাসের ছাত্রী ছিলেন ড চিং চিং। স্নাতক করেছেন ২০১১ সালে। স্নাতকোত্তর হতে আরো দুই বছর লেগে যায়। তারপর চাকরি খোঁজা শুরু করেন। কয়েক জায়গায় সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন। কিন্তু চাকরি যেন সোনার হরিণ। তাই একসময় রণেভঙ্গ দিলেন। ভাবলেন নিজেই একটা কিছু করবেন।
চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে অফিসগুলোতে দেখেছেন কর্মকর্তারা পানি খেতে কাচের বোতলই বেশি ব্যবহার করেন। ভাবলেন, বোতলগুলোকে সাজিয়ে দিলে বেশ হয়। রিকশাচিত্র হতে পারে তার ভালো উপায়। তাই রাস্তায় রিকশাচিত্র দেখলেই মোবাইলে ছবি তুলে রাখতেন। এটা ২০১৬ সালের ঘটনা।
প্রথমে পানির বোতলে রিকসা পেইন্ট দিয়ে অনলাইনে বাজারজাত শুরু করি। বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু একটি পণ্যে না থেকে আরও পণ্য তৈরি করার জন্য ক্রেতাদের থেকে অর্ডার আসতে থাকলো। এক পর্যায়ে বোতল, এলুমিনিয়ামের কেটলি, অফিসের জন্য ফাইল কেবিনেট, শাড়ি, বাসন, মাটির কাপ-পিরিচ, কাচের গ্লাস, সানগ্লাস, ল্যাম্প, জিন্স প্যান্ট, জ্যাকেট, আর্টিফিশিয়াল লেদারের উপর চাবির গোছা, কার্ড হোল্ডার, ওয়ালেট, অফিস স্লিপ বক্স, মাউসপ্যাড, টিস্যু বক্স, গ্লাস কোস্টারসহ যাপিত জীবনের নানা উপকরনে রিকশা পেইন্ট করছেন। মোট কথা চারপাশ রঙিন দেখতে ভালোবাসেন তিনি।
ইতোমধ্যে তার এই শিল্পকর্ম দেশে বেশ সমাদৃত ও সুনাম কুড়িয়েছে। পেয়েছে বেশকিছু পুরষ্কার। ড চিং রিক্সাপেইন্ট শিল্পটি সৃজনশীল মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান, তৈরী করতে চান বেশ কিছু নতুন মুখ; যারা এ রিক্সাপেইন্ট শিল্পটি এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই উদ্যোক্তা নতুন করে হারিয়ে যাওয়া সিনেমা পোস্টার আর্ট নিয়েও কাজ শুরু করেছেন।
এর সাথে আরো কাজ করছে আদিবাসী ফ্যাশন নিয়ে। আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাককে সবার ব্যবহারে উপযোগী করে তুলেছেন। আর নানান এলাকার আদিবসীদের গহনাকেও ফিউশন করে নিয়ে এসেছে উদ্যোক্তা ড চিং চিং। অনলাইনে ব্যবসা শুরু করলেও এখন রাজধানীর বনানীতে ফিনারীর একটি আউটলেট আছে।
৮ম জাতীয় এসএমই মেলা ২০২০ এ শ্রেষ্ঠ স্টল পুরস্কার জয়ী এ উদ্যোক্তা আজ হাজার হাজার নারীর কাছে রোল মডেল। নতুন নতুন উদ্যোক্তারা এখন তার কাছে অনুপ্রেরণা খুঁজে পায়।
মশিউর শাফী
ফিল্ড রিপোর্টার