উদ্যোক্তা রোকসানা রশীদ এমন একটা সময়ে তাঁতের শাড়ি নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন তখন ফেসবুকে ছিল ইন্ডিয়ান আর পাকিস্তানি পোশাকের রমরমা। সুইট পটেটোর যাত্রা তাই যতটা না ছিল ব্যবসায়িক, তার চাইতেও বেশী সামাজিক দায়বদ্ধতার। আজ সেই সুইট পটেটো নিজ দেশের মানুষের পাশাপাশি প্রবাসী বাঙালি এমনকি ভিনদেশীর কাছে পৌঁছে দিয়েছে সেই অসাধারণ রঙ এবং ডিজাইনের আরামদায়ক তাঁতের শাড়ি। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী বলেই হয়ত সৃজনশীলতার প্রতি ঝোঁক, সেই আগ্রহই টেনে এনেছে সৃজনশীল এই ব্যবসায়। আজ আলাপ করবো সুইট পটেটোর পিছনে স্বপ্ন ধারণ করা উদ্যোক্তা রোকসানা রশীদ এর কথা।
ছোটবেলা থেকেই, উদ্যোক্তা সব সময়ই চাইতেন ব্যবসায়ী হতে। ছেলেবেলার কথা বলতে গিয়ে রোকসানা রশীদবলেন- “মূলত আমার বাবার মত হতে চাইতাম, সেখান থেকেই ব্যবসায়ী হতে চাওয়া। বাবা বিমানবাহিনীতে ছিলেন, এরপর চাকুরি থেকে স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। আমার জন্মের আগের কথা এগুলো, ছোটবেলা থেকেই এই গল্প আমার মাথায় গাঁথা ছিলো, আমিও ক্যারিয়ারের প্রথম আড়াই বছর চাকুরি করে, এখন পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী।”
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2020/12/ub-ppp.jpg)
ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী রোকসানা রশীদ, লেখক হতে চাইতেন। একটা বই প্রকাশিত হওয়ার পর লেখালেখিতে ইস্তফা। চাকরি করতেন একটা প্রোডাকশান হাউজে, বেশ কিছু আন্তর্জাতিক রিয়েলিটি শোয়ের ফ্রাঞ্চাইজি প্রতিষ্ঠান ছিলো, কাজ অনেক আনন্দদায়ক ছিলো। এরপর সেই প্রতিষ্ঠানেরই অনলাইন নিউজ পোর্টালের ইনচার্য হিসাবে প্রোমোটেড হন। এর এক বছর পর শখ থেকে দেশি তাঁতের শাড়ির ব্যবসা শুরু করেন উদ্যোক্তা। শুরুতেই বেশ ভালো সাড়া পান, ফলে ব্যবসাতেই থিতু হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন উদ্যোক্তা।
সুইটপটেটোর যাত্রা শুরু কবে ? জানতে চাইলে উদ্যোক্তা বলেন- “সুইট পটেটো’র যাত্রা শুরু ২০১৪ এর এপ্রিল থেকে, পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে। শাড়ি সরাসরি তাঁতিবাড়ি থেকে আসে। মূলত সবই তাঁতিদের ডিজাইন। তবে রঙ বা ডিজাইনের সাজেশান আমি নিজে দিয়ে থাকি। এছাড়া নিজস্ব ডিজাইনের কিছু শাড়ি থাকে আমার কালেকশানে, যা আমি একটি শাড়ি একপিস করে বানাই, ওগুলো ব্লকের শাড়ি।
কোন গুনটি অন্য শপের চেয়ে আপনার সুইট পটেটো কে আলাদা করেছে -এই বক্তব্যর উত্তরে রোকসানা রশীদ বলেন – আমি আসলে তুলনায় যেতে চাই না। কারণ প্রথম আমি যখন ব্যবসায় আসার পরিকল্পনা করি, তখন ফেসবুকে ভারতীয় আর পাকিস্তানি পোশাকের রমরমা অবস্থা ছিলো। যেদিকে তাকাই বিদেশী কাপড়ের বিজ্ঞাপন। চোখে পড়ার মত রুচিশীল দেশি শাড়ির কোন ফেসবুক ভিত্তিক ব্যবসায়িক পেইজ অন্তত আমার চোখে পড়েনি। আবার গত ছয় মাসে আমার মনে হয়েছে প্রায় প্রতিটা মানুষই তাঁতের শাড়ির ব্যবসা করছে। এটা অবশ্যই ভালো, দেশি পোশাকের ট্রেন্ড সেট হওয়ায় বিদেশী কাপড়ের প্রতি আসক্তি কিছুটা হলেও কমেছে মানুষের। কিন্তু এসবের মাঝে সুইট পটেটো কি আলাদা বা অনন্য এটা আমি বলার চেয়ে আমার ক্লায়েন্টরা বললেই ভালো দেখায়। কারণ আমি তো আসলেই জানিনা, আমি কি অন্যদের তুলনায় ভালো সার্ভিস দিতে পারছি কিনা, বা আলাদা কিনা। যারা কেনে, তারাই বলতে পারবেন।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2020/12/ub-p.jpg)
তবে একটি বিষয়ে আমি অবশ্যই গর্বিত, তা হলো, আমি দেশে যেভাবে হোম ডেলিভারি দিই, ঠিক একইভাবে দেশের বাইরে হোম ডেলিভারি দিই, প্রবাসী ক্লায়েন্টরা কোন বাড়তি ঝামেলা ছাড়াই ঘরে বসে দেশি তাঁতের শাড়ি পেয়ে যায়। এবং বরফের দেশগুলোতেও যেরকম চাহিদা আমাদের সুতি শাড়ির, আমি সত্যিই অবাক হই, দেশি কাপড়ের প্রতি তাদের ভালোবাসা দেখে। এমনকি ভীনদেশি মানুষেরাও আমার কাছ থেকে তাঁতের শাড়ি কেনে, এই আনন্দ সহজ কথায় প্রকাশ করা যাবে না।”
ব্যবসার শুরু থেকেই অনেক উৎসাহ পেয়েছেন উদ্যোক্তা। ব্যবসার সূচনা হয় উদ্যোক্তার হাজব্যান্ডের জমানো কিছু টাকা পুঁজি করে, বর্তমানে দুইজনই ওনার, আবার দুইজনই কর্মী, এখনো এভাবেই কাজ চলছে। দুইজন মিলেই ব্যবসার সব সামলান।
রোকসানা রশীদ তাঁর পরিবার থেকে প্রচুর উৎসাহ পেয়েছেন, বিশেষ করে মায়ের ভূমিকা স্বীকার করেন উদ্যোক্তা। বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন মানসিক শক্তি, সেই সাথে বাবার কাছ থেকে পেয়ে এসেছেন সবসময় উৎসাহ। তাই হতাশ মানুষদের ঈর্ষা উদ্যোক্তাদের চলার পথে কোন বাঁধাই সৃষ্টি করতে পারেনি।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2020/12/ub-pp.jpg)
পুঁজি ছাড়া ব্যবসা কখনোই সম্ভব না, অন্তত শুরু করলেও বেশিদূর আগানো যাবে না, প্লাস ফ্যামিলি থেকে ফিনান্সিয়াল সাপোর্ট থাকা জরুরী। তাই ব্যবসার রিস্ক ফ্যাক্টর মাথায় রেখেই পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী হওয়ার পরিকল্পনা করা উচিৎ। নাহয় সময়, রিসোর্স, এনার্জি সবকিছুরই অপচয় হবে।
ভবিষ্যৎ সুইটপটেটো নিয়ে ভাবনার কথা জানতে চাইলে উদ্যোক্তা বলেন- “মসৃণভাবে একই গতিতে সামনে এগিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য, আপাতত বিশেষ কোন পরিকল্পনা নেই। এই যে রেমিটেন্সের যে টাকা আগে বিদেশী পোশাকে ব্যয় হতো, সেই টাকা এখন সরাসরি আমাদের দেশের তাঁতিরা পাচ্ছে, এই ধারাই সমানগতিতে চলতে থাকুক, এরচেয়ে বেশি আর কি চাওয়ার আছে?”
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা