উদ্যোক্তা পারুল আক্তার

যে বয়সে একজন মেয়ে চিন্তা করে আমার দু-একটা পোশাক, গহনা এগুলো হলে ভালো হতো; সেই বয়সে পারুল আক্তারের ভাবনা ছিলো ‘আমি যদি বাবার পাশে দাঁড়াতে পারতাম’। রাতে বাবা যখন দেখতে আসতেন ঘরে মেয়ে পড়ছে কি-না, বাবার পায়ের শব্দ শুনে মেয়ে বুঝে যেতো বাবা আসছে, সঙ্গে সঙ্গে বই হাতে নিয়ে পড়তে বসে যেতো। বাবা চলে গেলে আবারো বই রেখে হাতে তুলে নিতেন সুঁই-সুতো। এভাবে ছোট থেকেই পারুল আক্তারের সুঁই-সুতোর সঙ্গে ভাব হয়েছিলো।

বগুড়ার কন্যা পারুল আক্তার। জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা, সব কিছু বগুড়া শহর এবং গ্রামে মিলে-মিশে। পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত। এর পর শ্বশুরবাড়ি পাড়ি জমাতে হয়। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয় পারুল। ছোট বেলায় এক ঈদে তার পোশাকটি আসতে দেরি হয়েছিলো, ছোট্ট পারুলের খানিকটা মন খারাপ হয়। সেটি লক্ষ্য করেছিলো ছোট ফুপু। কাপড় কেটে রাতের মধ্যেই সুঁই-সুতোর জাদুতে ছোট্ট পারুলের জন্য তৈরি হয়ে গেলো তার ঈদের পোশাক। তারও মনে আসলো আমিও যদি এমন করে সেলাই করতে পারতাম। এই ভাবনা থেকে তার ফুপুদের দেখে ছোট্ট পারুল আয়ত্ব করে ফেললো বেশ কিছু সেলাইয়ের ধরণ। মা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন খুব। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বাবা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন বেশ। পারুল আক্তারের মতো মেয়ে থাকতে বাবার চিন্তা কিসের? বুদ্ধিমতি-কর্মঠ পারুল বাবার চিন্তার ভাগিদার হয়ে উঠলেন। টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে সেটি দিয়ে খাবার বানিয়ে তা হোম ডেলিভারি দিতেন পারুল। সেখান থেকে যে টাকা আসতো, তা দিয়ে নিজের এবং ছোট ভাই-বোনদের খরচ চালিয়ে বাবার পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন পারুল আক্তার।

বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর স্বামীর সহযোগীতায় প্রশিক্ষণ নিলেন যুব উন্নয়নে। এর পর বড় পরিসরে কাজ শুরু করলেন। বগুড়া নিউমার্কেটে তার প্রতিষ্ঠান। অর্ডারের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। ক্রেতাদের এতো বিশ্বাস হয়ে যাচ্ছিল যে তার হাতের কাজের ওপর অর্ডার দিতে এসে বলতো- ‘আমার না, আপনি নিজের পছন্দ মতো পোশাকটি বানিয়ে দিন’। এর পর পারুল আক্তার আরো অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ নিলেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনে (বিসিক)।

পারুল যখন সন্তানদের কোচিং ক্লাসে নিয়ে যেতেন, তখন পাশে বসা অভিভাবকরা গল্পে জমে উঠলেও পারুলের গল্প জমে উঠতো সুঁই-সুতোর সঙ্গে। সেখান থেকেই আসলো প্রথম অর্ডার। থ্রি-পিসের অর্ডার দিয়ে শুরু, আজ তা থ্রি-পিস, টু পিস, ওয়ান পিস, মশারির কুশন, সোফার কুশন, বিছানার চাদরসহ আরো অনেক পণ্য তৈরী করে ব্যাস্ত সময় পার করছেন ‘কারুকার্য বুটিক হাউস’র পারুল আক্তার। বর্তমানে তার কর্মীসংখ্যা ৪৫ জন। দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে কারুকার্য বুটিক হাউসের পণ্য।

বেকার, অসহায় এবং তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘বসে না থেকে অযথা চিন্তা করে সময় নষ্ট না করে তোমরা যেটি পারো সেই কাজটি শুরু করে সামনে এগিয়ে যাও, চলার পথে পড়ে গেলে আবার উঠে দাঁড়াও, দেখবে নিশ্চই একদিন সফল হবে’।

তামান্না ইমাম
রাজশাহী ডেস্ক, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here