সিএনজি নামে পরিচিত রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস শুধুমাত্র যানবাহনে ব্যবহারের জন্য। কিন্তু, অবৈধভাবে এ গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে শিল্প-কারখানা, হোটল-রেস্তোরাঁ এমনকি বাসাবাড়িতেও।
ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করে, সময়-সময় অভিযান চালিয়ে এবং জেল-জরিমানা করেও কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি)-এর অবৈধ ব্যবহার বন্ধ করা যায়নি। কোথাও লুকিয়ে-চুরিয়ে আর কোথাও প্রকাশ্যেই বিভিন্ন কল-কারখানা এবং এমনকি বিসিক শিল্প নগরীগুলোর কয়েকটি কারখানায়ও সিএনজি ব্যবহার হচ্ছে।
গ্যাসের সংযোগ নেই এমন কিছু কারখানায় যেমন অবৈধভাবে সিএনজি ব্যবহার হয়, তেমনি গ্যাসের চাপ কম থাকার সময়ও কিছু কিছু কারখানা অবৈধ এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে।
ঢাকার কাছে গাজীপুর এবং নারায়ণগঞ্জের সড়কগুলোতে অনেক সময়ই দেখা যায় ব্যাটারিচালিত যানবাহনে খালি বা ভরা সিএনজি সিলিন্ডার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে সিএনজি পাম্পগুলোর এক শ্রেণির মালিক ও কর্মচারি জড়িত।
ছোট ছোট গুচ্ছ সিলিন্ডার ছাড়াও কাভার্ডভ্যানে সিএনজি গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে গ্যাস সরবরাহ করা নিষেধ থাকলেও তা মানছে না সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো। সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে ঝুঁকি নিয়ে গুচ্ছ সিলিন্ডারে গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে প্রতিদিন।
সিলিন্ডারের মাধ্যমে শিল্পকারখানা ও বাসাবাড়িতে জ্বালানি হিসেবে অবৈধভাবে সিএনজি’র ব্যবহার বন্ধে বিস্ফোরক অধিদপ্তর অনেকবার সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোও নানাসময় ব্যবস্থা নিয়েছে। তারপরও বন্ধ হয়নি সিএনজি’র অবৈধ ব্যবহার।
সিএনজি স্টেশন থেকে যানবাহন ছাড়া অন্য যেকোনোভাবে গ্যাস সরবরাহ করা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। একইভাবে খোলা সিলিন্ডারে গ্যাস বহন করে বাসাবাড়িতে বা কারখানায় ব্যবহার করাও অপরাধ।
সম্প্রতি গাজীপুরের একটি সিএনজি স্টেশনে একটি কারখানার ভ্যানে স্থাপন করা সিলিন্ডারে গ্যাস ভর্তি করার সময় এভাবে সিএনজি’র অবৈধ ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে ভ্যানচালক বলেন, ‘একসিডেন হইলে ক্ষতি হইব জানি। কী করুম! কোম্পানির কাজ, না করলে বেতন পামু?’
সিএনজি স্টেশন থেকে যানবাহন ছাড়া অন্য কোথাও সিএনজি বিক্রি নিষিদ্ধ থাকলেও প্রভাবশালী সিএনজি মালিকরা পাত্তা দিচ্ছেন না। বেশকিছু সিএনজি স্টেশন থেকে অনবরত সিলিন্ডারে করে গ্যাস পাচার হচ্ছে। প্রতিদিন ফিলিং স্টেশন থেকে অটোরিকশা ও কাভার্ড ভ্যানে করে সিলিন্ডার ভর্তি করে গ্যাস নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হোটেল-রেস্তোরাঁ, গার্মেন্টসহ নানা ধরনের কল-কারখানায়। ফিলিং স্টেশনের সিএনজি গ্যাস নিয়ে চালানো হচ্ছে বিদ্যুৎ প্লান্টও।
একটি সিএনজি স্টেশনের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, কাভার্ড ভ্যানযোগে নেওয়া সিলিন্ডারগুলোতে সিএনজি এখন শিল্প কারখানা, বিদ্যুৎ প্লান্ট, বাসাবাড়ি, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব বাণিজ্যিক কাজেই ব্যবহার হচ্ছে। এটা কতটুকু বৈধ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা অবৈধ থাকলেও আপনি সব সিএনজি স্টেশন ঘুরে দেখেন সবাই দেয়, তাই আমরাও দেই।’
সিএনজি স্টেশন থেকে কাভার্ড ভ্যানে করে গ্যাস নেওয়ার সময় কথা হয় একটি কারখানার সহকারী ম্যানেজারের সঙ্গে। তিনি জানান, বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন তিন থেকে চারবার গ্যাস নিতে হয়, প্রতিবার ১০ হাজার টাকার গ্যাস নিতে হয় তাকে।
যেকোন দুর্ঘটনার এড়ানোর পাশাপাশি মূল্যবান সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাসের যেকোন ধরনের অবৈধ ব্যবহার বন্ধে সংশ্লিষ্টরা অনুরোধ জানিয়েছেন।
ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা