“সারিন’স”- বিউটি প্রোডাক্টের জগতে এক আস্থার নাম

0
উদ্যোক্তা সাফা এবং যারিন

সারিন’স স্টোর উদ্যোগের যাত্রা শুরু পাঁচ বছর আগে। হারবাল অর্থাৎ ভেষজ উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য তৈরি করেন দু’বোন- সাফা জাহাঙ্গীর ও যারিন তাসনীম। টিউশনির জমানো পুঁজি দিয়ে হারবাল প্রোডাক্ট তৈরির এ উদ্যোগের শুরু। প্রথমদিকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে নিজ ঘরে পণ্য তৈরি করতেন। তখন পণ্যের প্রচার নিয়েও দুজন কাজ করেছিলেন। এখন ৩০ ক্যাটাগরির পণ্যে নারীদের মন কেড়েছে সারিন’স স্টোর।

দু’ বোনের বেড়ে উঠা ঢাকায়। সাফা এমবিএ করেছেন, যারিন ইংরেজিতে অনার্স। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে ব্যবসার পাশাপাশি চাকরি। সাফা বিউটি ই-কমার্স সাজগোজ.কম-এ  সিনিয়র কন্টেন্ট এক্সিকিউটিভ হিসেবে, পাশাপাশি নারী উদ্যোগ রমণী সার্ভিস লিমিটেডে মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবেও আছেন তিনি। আর যারিন পড়াশোনা শেষ করে বিউটিভ  ই-কমার্স সাইটে বিজনেস ডেভেলপমেন্ট এক্সিকিউটিভ হিসেবে এবং সাজগোজ লিমিটেডে বিউটি কনসালটেন্ট  পদে কাজ করেছেন।

উদ্যোক্তা হওয়ার শুরু সময় নিয়ে সাফা বলেন: ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে যখন সেমিস্টার ব্রেকের ছুটিতে কেউ ঘুরে বেড়াচ্ছে আর কেউবা গ্র্যাজুয়েশনের আগে পার্ট টাইম জব অথবা ইন্টার্নশিপে ঢুকে পড়েছে, আসন্ন বেকারত্বের আশঙ্কায় আমার চিন্তার শেষ নাই! আড্ডা দিচ্ছিলাম আমার ছোটবেলার বেস্ট ফ্রেন্ড আর ফুপাতো বোন যারিনের সাথে। আকাশ-পাতাল চিন্তা ভাবনা করতে করতে বললাম, সবাই কিছু না কিছু করছে! আমরাও কিছু করি। ব্যবসা করি!

যারিনও একইরকম ভাবনা থেকে হ্যাঁ বললে দুজন চিন্তা-ভাবনা ও অনেক পরামর্শ করে উদ্যোগ শুরু করেন। টিউশনি থেকে জমানো চার হাজার করে মোট আট হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে তাদের শুরু।

যারিন বলেন: খুব দ্রুত পরামর্শ করে খুলে ফেললাম অনলাইন পেইজ। নাম দিলাম “সারিন’স স্টোর”। সবাই শুরুতে জিজ্ঞেস করতো এ আবার কেমন নাম? তখন উত্তরে ছিল, সাফার “সা” আর যারিনের “রিন” মিলিয়ে “সারিন”! এভাবেই দুই বোনের নাম মিলিয়ে চলতে থাকলো আমাদের স্টোর । শুরুটা ছিল ঘড়ি, সানগ্লাস, লাইট, লিপস্টিক, জুয়েলারি, চায়নিজ এক্সেসরিজ। ভার্সিটির ক্লাসের আগে পরে বান্ধুবী, সিনিয়র, জুনিয়রের কাছে একটু একটু করে প্রডাক্ট সেল হতে থাকলো। হঠাৎ একদিন সাফা বললো, কেন আমরা কিছু স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট সেল করছি না? তখন ভাবলাম গত কয়েক মাস যাবত আমদের গ্রাম থেকে ভাঙিয়ে আনা তেল আর আমার ঘরে বানানো ফেসপ্যাক নিয়ে বান্ধবীরা খুব আগ্রহ দেখাচ্ছে। নানারকম চিন্তা করে হারবাল পণ্য লঞ্চ করে ব্যবসা বড় পরিসরে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিলাম।

মায়ের হারবাল বানানো পদ্ধতিতে সাফা ও যারিন সারিন’স স্টোরের প্রথম ফেসপ্যাক ও অর্গানিক হেয়ার অয়েল তৈরি করেন। প্রথম মাসে তিনটা, পরের মাসে পাঁচটা এভাবে একটু একটু করে ছয় মাসের মাথায় তিন হাজারেরও বেশি প্রডাক্ট বিক্রি করছিলেন। সেসঙ্গে কাস্টমার ডিমান্ড অনুযায়ী জষ্ঠিমধুর গুঁড়া, কমলার খোসার গুঁড়া, গোলাপ গুঁড়ার মতো আরও অনেক প্রডাক্ট নিয়ে এসেছেন।

তাদের কর্মী সংখ্যা এখন ছয়। একটি কারখানা ও ওয়্যারহাউস আছে। পুরো দেশ জুড়ে হোম ডেলিভারি দেন পণ্যের। দেশের বেশ কয়েকটি ই-কমার্স সাইটে তাদের পণ্য পাওয়া যায়, যেমন- দারাজ, সাজগোজ, দা মল, পাঠাও, বেশিদেশি, ইত্যাদি।
প্রতি মাসে তাদের দুই হাজারের বেশি ইউনিট উৎপাদন হয়। নিজেদের এবং পার্টনার প্ল্যাটফর্ম মিলিয়ে বিক্রি প্রায় আড়াই লাখ টাকার।

সাফা ও যারিন চেষ্টা করেন ব্যবসা উদ্যোগ নিয়ে যেকোন সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম, ওয়ার্কশপ, সেমিনারে পার্টিসিপেট করতে। প্রতিনিয়ত শেখার চেষ্টা করেন যেন আরও ভালোভাবে উদ্যোগটাকে সফল করতে পারেন, যেন মানুষকে সচেতন করে তুলতে পারেন হেলদি উপাদান সম্পর্কে, রঙ ফর্সাকারী ক্রিম-এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে, আর দেশীয় পণ্যের গুণ সম্পর্কে। আর্টিফিসিয়াল আর সুপারফিসিয়াল সৌন্দর্য থেকে মানুষকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকে ফিরিয়ে আনতে চান তারা।

তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য তাদের পরামর্শ: নিজের স্বপ্নের পেছনে ছোটো, একদিন এই স্বপ্নই অন্যকে স্বপ্ন দেখাবে।

মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here