সবার আগে কাজের প্রতি ভালোবাসা

0
উদ্যোক্তা সামসুন নাহার আঁখি

এসএন ফুড ফ্যান্টাসির স্বত্ত্বাধিকারী সামসুন নাহার আঁখি। ২০২০ সাল থেকে কাজ করছেন হোম মেইড ফুড নিয়ে। বিভিন্ন ধরনের কেক, পেটিস, ডাম্পিং স্যুপ (মোমো), সেমাই, দইবড়া, চিকেন রোল, বালুসাই, মিষ্টি, ডোনাট, ফ্রোজেন আইটেমসহ বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় খাবার রয়েছে এসএন ফুড ফ্যান্টাসিতে। দুই বছরের মধ্যে এই উদ্যোক্তার ৮৫ শতাংশ ক্রেতাই রিপিট কাস্টমারের তালিকায় চলে এসেছেন।

রাজধানীর আইসিআই কিউলিনারি ইনস্টিটিউট এবং রাজশাহী মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে মাল্টি কুইজিন এবং বেকিং কোর্স করেছেন আঁখি। এছাড়াও রাজধানীর আফরিন কিচেন থেকে প্রফেশনাল বেকিং কোর্স করেছেন। ছোটবেলা থেকে রান্না করতে ভালোবাসতেন। সেসময় পত্রিকার পাতায় যেসব রেসিপি পেতেন সেগুলো লিখে রাখতেন এবং বাসায় চেষ্টা করতেন। এভাবে টেলিভিশনেও বিভিন্ন রান্নার অনুষ্ঠান ফলো করতেন আঁখি, পরে ইউটিউব এসে বিষয়টি আরো সহজ হয়ে গেলো। তখন চাইলেই তিনি পছন্দমতো রান্না দেখে নিতে পারতেন। সামসুন নাহার আঁখি এছাড়াও তার মায়ের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের পিঠেপুলি তৈরি শিখেছেন। পরবর্তীতে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তার রান্নার হাত পাকাপোক্ত হয়ে উঠে।

উদ্যোক্তা বার্তার সাথে কথপোকথনকালে এসএন ফুড ফ্যান্টাসির স্বত্ত্বাধিকারী আঁখি বলেন: রান্না আমার বরাবরই পছন্দের। আগে থেকেই বিভিন্ন রেসিপি দেখে কেকসহ নানা ধরনের খাবার তৈরি করতাম। ২০২০ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। তখন সামাজিক পাতায় দেখি ৭ দিনের একটি বেকিং কোর্স করানো হবে। ট্রেনের টিকিট ক্যান্সেল করে আমি ঢাকাতেই থেকে যাই এবং সেই কোর্সটি করি। এরপর রাজশাহীতে ফিরে সামাজিক পাতায় “এসএন ফুড ফ্যান্টাসি” নামে পেজ চালু করি। আমি ইকনমিক্সের স্টুডেন্ট ছিলাম এবং আমার চারটি ফার্স্ট ক্লাস ছিল। সকলের ইচ্ছে ছিল ভালো কোন চাকরি করবো। যখন আমার আত্নীয়-স্বজন দেখতেন আমি চাকরি না করে রান্না নিয়ে কাজ করছি, অনেকে সমালোচনা করতেন। আমার সামনে না বললেও পরিবারের অন্যদের বলে বিদ্রুপ করতেন। কিন্তু বরাবরই আমার ইচ্ছে ছিল নিজের উপার্জনে চলবো। আমার স্বামী আমাকে ভীষণ সাপোর্ট করেন এই বিষয়গুলোতে। আমি মনে করি প্রতিটি নারী উদ্যোক্তার জীবনসঙ্গীর সাপোর্ট উদ্যোক্তা জীবনে বিরাট ভূমিকা রাখে।

এসএন ফুড ফ্যান্টাসির কোন খাবারের চাহিদা বেশি? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময় বিভিন্ন খাবারের চাহিদা বেশি থাকে। যেমন ঈদের আগে আমার সেমাই এর চাহিদা থাকে ব্যাপক। এই সেমাই শুধু রাজশাহী নয়, নোয়াখালী-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গেছে, এমনকি জাপানেও গেছে। এছাড়া সারাবছরই কেক, পেটিস এবং ডাম্পিং স্যুপ (মোমোর) চাহিদা থাকেই। যেগুলো দ্রুত পচনশীল খাবার সেগুলো শুধুমাত্র রাজশাহীতেই আমরা ডেলিভারি দিয়ে থাকি। আর শুকনো খাবার, পিঠা, সেমাই এগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এখানে ২৫ টাকা মূল্যের খাবার যেমন রেখেছি তেমনি ৬০০ টাকা পাউন্ড কেক রয়েছে, হাজার টাকা কেজি সেমাই আছে। আলহামদুলিল্লাহ, দুই বছরের মধ্যে আমার ৮৫ শতাংশই রিপিট ক্রেতা। ‘

সামসুন নাহার আঁখি রাজশাহী হোমমেইড ফুড সোসাইটি নামে হোম মেইড ফুড নিয়ে রাজশাহীর বৃহৎ সংগঠনের সদস্য। সেখানে ১৯ জন উদ্যোক্তা রয়েছেন। ওই উদ্যোক্তারা মিলে বিভিন্ন মেলায় নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের জনপ্রিয় খাবারগুলো নিয়ে একটি স্টল সাজান। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মেলায় অংশ নিয়ে অনেক ক্রেস্ট জিতেছেন তারা।

যারা নতুন উদ্যোক্তা হয়েছেন বা হতে চাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্য আঁখি বলেন, ‘সর্বপ্রথম আমরা যে কাজ করবো তাকে ভালোবাসতে হবে। কোনভাবেই ছোট করা যাবে না। কাজকে ভালোবাসলে নিজ থেকেই কাজের প্রতি সময় দিতে ইচ্ছে করবে। আর যে কাজে সময় দেওয়া যায় সেখান থেকে সফলতা আসেই। তাই সকলকে বলবো সবার আগে কাজকে ভালোবাসতে হবে।‘

তামান্না ইমাম,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here