শাকিল খন্দকারের ‘কাহন’

0
উদ্যোক্তা শাকিল খন্দকার

ভীষন মজার একটি বাদ্য যন্ত্র কাহন। ব্যান্ডের প্র্যাক্টিসে তো বটেই যেকোনো দলীয় কন্সার্টে অবশ্যই। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে কাহন বাজিয়ে গান করে থাকেন এমন আর্টিস্টদের আমরা নিয়মিত দেখি। কাহন বাজিয়ে কাহন টেউটোরিয়াল করে বিশ্বের সুপার সেলিব্রিটি হয়েছেন অনেকেই।

আমের নগরী, শিক্ষা নগরী, পদ্মা পাড়ে কাহনের শব্দ নিয়ে এলো এক তরুন নিজেদের প্রয়োজন। সন্যাস নামের একটি ব্যান্ডের জন্যই প্রথম কাহন তৈরি করেন শাকিল। তারপরে তার এই কাহন তৈরি একটি উদ্যোগেই পরিণত হয়ে গেলো।

আজ পড়ুন পদ্মা পাড়ের তরুণ কাহন মেকারের গল্প…

বাংলাদেশের অনেকেই ইতোমধ্যে এই বাদ্যযন্ত্রটি দেশেই তৈরি করছেন। এ রকম একজন উদ্যোক্তা রাজশাহীর বালিয়াপুকুর এলাকার শাকিল খন্দকার। তার সাথে কথা বলেছেন উদ্যোক্তা বার্তার রিপোর্টার তামান্না ইমাম। শাকিল খন্দকার জানান, রাজশাহীতে তার জন্ম। জন্মের পর বাবার চাকরির সুবাদে তিনি পরিবারের সাথে রাজধানী ঢাকাতে চলে যান। সেখানেই বেড়ে উঠা। তার বাবা মোঃ আলম খন্দকার এবং মা লাভলি। তিনি রাজধানীর ইকরামুন্নেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর আর পড়াশোনা করেননি শাকিল।

ছোটবেলা থেকে গান গাইতে ভালো লাগতো শাকিলের। ভাললাগা থেকেই ‘সন্যাস’ নামে একটি ব্যান্ডদল গঠন করেন। বর্তমানে দলের সদস্য সংখ্যা ৬ জন। সঙ্গীতের সাথে যুক্ত থাকায় তিনি বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সাথে পরিচিত হন এবং সেগুলো ব্যবহারে দক্ষ হয়ে উঠেন। একসময় তিনি কাহনের সাথে পরিচিত হন এবং তাঁর বেশ ভালো লাগে। তবে সে সময় বাংলাদেশে কাহন তৈরি হতো না, সকলের কাছে তেমন পরিচিতিও ছিলনা এই মিউজিক্যাল বাদ্যযন্ত্র। যারা এগুলো ব্যবহার করতো ওই সময় তারা বেশিরভাগই দেশের বাইরে থেকে সংগ্রহ করত। তবে বর্তমানে কাহন সকলের কাছেই পরিচিতি পাচ্ছে এবং দেশেই তৈরি হচ্ছে। যখন কেবলমাত্র কয়েকটি জায়গায় কাহন তৈরি শুরু হয় তখন শাকিলও উদ্যোগ নিলেন কাহন তৈরির।

২০১৮ সালে ১০ হাজার মূলধন নিয়ে তার কোম্পানি ‘বি লাউড কাহন’র যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে রাজধানী ঢাকাতে তার অফিস থাকলেও করোনা মহামারীতে তিনি ঢাকা থেকে রাজশাহীতে গিয়ে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। শুরু থেকেই শাকিল সবটা নিজ হাতে সামলাচ্ছেন।

উদ্যোক্তা বার্তাকে শাকিল খন্দকার জানান, ‘বর্তমানে আমাদের দেশে কাহন সকলের কাছে পরিচিতি লাভ করছে। যা একসময় দেশে তৈরি হত না, আমদানি করতে হত। কাহন তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করে নিজেই তৈরি করি। একেকটি কাহন তৈরিতে প্লাইউড, স্নেয়ার চেইন, বার্নিশ, স্প্রে কালার ইত্যাদি সামগ্রী ব্যবহৃত হয়ে থাকে’। এতে বাংলাদেশের সঙ্গীত অঙ্গনে বাংলাদেশী পণ্য যোগ হলো।

তিনি আরো বলেন, ‘একেকটি কাহন তৈরিতে খুব নিখুঁত ভাবে কাজ করতে হয়। প্লাইউডগুলো বিভিন্ন টুকরায় ভাগ করতে হয়। টুকরাগুলোর আলাদা মাপ থাকে। সেগুলো যদি নড়ে যায় তাহলে পুরো কাহনটাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই প্রতিটি ধাপ মেপে মেপে একেকটি কাহন তৈরি করতে হয়। প্লাইউডগুলো নির্দিষ্ট মাপে কেটে টুকরোগুলো বক্স আকৃতিতে জুড়ে স্নেয়ার চেইনের কাজ। এরপর রঙের ক্ষেত্রে বার্নিশ এবং স্প্রে কালার ব্যবহার করা হয়। এভাবেই “বি লাউড কাহন” একেকটি কাহন তৈরি হচ্ছে’।

‘বি লাউড কাহন’ নামে একটি অনলাইন পেজ রয়েছে। যেখান থেকে তিনি দুই বছরে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছেন। নিজের এই ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ১০ হাজার মূলধন আজ ৮ লক্ষ টাকায় পৌঁছেছে।

কাহনের পাশাপাশি আরো মিউজিক্যাল বাদ্যযন্ত্র তৈরি করতে চান শাকিল। এটি তার আগামী দিনের পরিকল্পনা।

তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যারা উদ্যোক্তা হয়েছেন বা হতে চাচ্ছেন তারা নিজের সিদ্ধান্তটা স্থির রাখুন। সর্বপ্রথম সঠিক সিদ্ধান্ত বাছাই করে সে পথে অবিচল থাকতে হবে। তাহলে জয় আসবেই’।

তামান্না ইমাম
রাজশাহী ডেস্ক, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here