শূন্য থেকে শিখরে Fevicol ম্যান অফ ইন্ডিয়া

0
উদ্যোক্তা বলবন্ত পারেখ

ফেভিকল আঠার ব্যাপারে জানেন না এরকম মানুষ ভারতীয় উপমহাদেশ তো বটেই, এশিয়া মহাদেশেও নেই বললেই চলে। ফেভিকল নামের মতোই বছরের পর বছর এই ব্র্যান্ডের আঠাটি মার্কেটে টিকে রয়েছে, প্রতিদিনই আরও বড় হচ্ছে বাজার। ফেভিকল ব্র্যান্ডটিকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে যার অবদান সবচেয়ে বেশি, তিনি হচ্ছেন বলবন্ত পারেখ। সারাবিশ্ব আজও তাকে স্মরণ করে ‘ফেভিকল ম্যান’ হিসেবে।

গুজরাটের ভাওয়ানগর জেলার মহুয়ায় ১৯২৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন বলবন্ত। সেখানেই শুরু হয় পড়াশোনা। ছোটবেলা থেকেই একজন ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার চোখে। কিন্তু পরিবারের লোকজন চাইতেন তিনি আইনজীবী হন। কার্যত পরিবারের কথা মেনেই মুম্বাইয়ের সরকারি ল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন বলবন্ত পারেখ। সেটা ছিল ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময়। ওই সময় অন্যান্য যুবকদের মতোই গান্ধীজীর অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে পড়াশোনা ছেড়ে আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। অবশ্য একবছর পর পড়াশোনা সম্পন্ন করেন।

পড়াশোনা শেষ হলেও আইনজীবী হওয়ার ইচ্ছে ছিল না তার। গান্ধীজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত বলবন্ত ছিলেন সত্য ও অহিংসার বিশ্বাসী। আইনজীবীর পেশাকে তিনি মিথ্যের ব্যবসা মনে করতেন, সে কারণে একটি প্রিন্টিং প্রেসে কাজ নেন। পড়াশোনা চলাকালীনই বিয়ে হয়। তাই সংসার টানাও ছিল রীতিমতো কষ্টকর।

বলবন্ত পারেখ প্রিন্টিং প্রেসের কাজটি করতেও তেমন আগ্রহী ছিলেন না। তাই চাকরি ছেড়ে দিয়ে কাঠ ব্যবসায়ীর অফিসে পিয়নের কাজ শুরু করেছিলেন। বলবন্ত সেই চাকরিটিও ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজ শুরু করেন। এভাবে তিনি অনেক চাকরি ধরেছেন ও ছেড়েছেন। মাঝে তার একবার জার্মানি যাওয়ার সুযোগ হলে সেখানে গিয়ে তিনি ব্যবসা সম্পর্কে অনেক কিছু শিখে আসেন।

সেই শেখা থেকে নতুন কোন ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে ভাবতে থাকেন বলবন্ত।  মাথায় একদিন এক ভাবনার উদয় হয়, তিনি যখন কাঠ ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন তখন সেখানকার শ্রমিকদের কাঠ জোড়া লাগানোর পেছনে অনেক পরিশ্রম করতে দেখতেন। আর কাঠ জোড়া লাগানোর জন্য তারা যে আঠা ব্যবহার করতেন, সেটা থেকে প্রচণ্ড মাত্রায় দুর্গন্ধ বের হতো। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি কার্যকর সুগন্ধি আঠা তৈরির কথা ভাবতে থাকেন।

অনেক চেষ্টার পরে বলবন্ত পারেখ সিন্থেটিক রাসায়নিক ব্যবহার করে আঠা তৈরির একটি উপায় আবিষ্কার করেন। এরপরে তিনি তার ভাই সুনীল পারেখের সাথে ১৯৫৯ সালে পিডিলাইট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পর বলবন্ত তার দেশকে সুগন্ধি আঠা ‘ফেভিকল’উপহার দেন।

বাজারে আসার পর ফেভিকল ভারতসহ আশেপাশের দেশগুলোতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ফেভিকল জনপ্রিয়তা পেলে পিডিলাইট কোম্পানি ফেভি কুইক, এম-সিল ইত্যাদির মতো নতুন পণ্যও চালু করে। মানুষও ওই পণ্যগুলোকেও খুব পছন্দ করে। যার ফলে পিডিলাইট আজ হাজার হাজার কোটি টাকার কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে।

শুধু ভারত নয়, এখন আমেরিকা, থাইল্যান্ড, দুবাই, মিশর এবং বাংলাদেশেও কারখানা রয়েছে পিডিলাইটের। ফোর্বস ম্যাগাজিনের এশিয়ার সেরা ধনীদের তালিকায় ৪৫তম স্থানে রয়েছে বলবন্ত পারেখের কোম্পানি।

শুধু ব্যবসা নয়, সমাজ সেবার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বলবন্ত পারেখ। একাধিক হাসপাতাল, স্কুলের পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে গুজরাটের ঐতিহ্য সম্পর্কে শিক্ষা নিতে পারে সে জন্য দর্শন ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিও গঠন করেন তিনি।

২০১১ সালের ২৮ অক্টোবর টেক্সাসের ইনস্টিটিউট অফ জেনারেল সেম্যান্টিকস বলবন্ত পারেখকে মর্যাদাপূর্ণ জে ট্যালবট উইনচেল পুরস্কার প্রদান করে। কোন এশীয়র জন্য এটা ছিল প্রথম ওই সম্মানে ভূষিত হওয়া। ২০১৩ সালে তিনি যখন প্রয়াত হন তখন ফোর্বস এশিয়ার ধনী তালিকায় ৪৫ নম্বরে থাকা তার কোম্পানির সম্পদের পরিমাণ ছিল ১.৩৬ বিলিয়ন ডলার।

জীবনে যতই দুঃসময় আসুক না কেন, নিজের কাজে যারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞভাবে লেগে থাকেন অবশেষে তারাই যে সফল হন, নো বডি থেকে ইন্ডিয়া’স ফেভিকল ম্যান এবং অন্যতম বড় শিল্পপতি বলবন্ত পারেখের জীবন এই নীতিবাক্যেরই চূড়ান্ত উদাহরণ।

এখন বলবন্ত পারেখের বড় ছেলে মধুকর পারেখ কোম্পানির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শীর্ষ ধনীদের তালিকায় মধুকর পারেখের নামও আসে। একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, মধুকর পারেখের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩.১ বিলিয়ন ডলার।

সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here