২০০৪ সালে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন দিনার সুলতানা। ২০০৫ সালে শেরপুর নবারুণ পাবলিক স্কুলে প্রথম চাকরি শুরু করেন। এরপর ২০০৮ সালে ময়মনসিংহের সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের বাংলা বিষয়ে খন্ডকালীন প্রভাষক হিসবে যোগ দেন। ২০০৯ সালে ৮৮ নং আন্ধারিয়া নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শেরপুরে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। বর্তমানে ৩৬ নং গনই ভরুয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন।
২০১৬ সাল থেকে সক্রিয়ভাবে উদ্যোক্তা হয়েছেন দিনার সুলতানা। এর আগে ছাত্র জীবন থেকে কাপড়, রং, তুলি, চুমকি, কুশি নিয়ে কাজ করতেন। ভাবনাটা ছিলো ছাত্র জীবন থেকেই। নিজ থেকে কিছু করতে চাওয়ার তাড়না থেকেই উদ্যোক্তা হয়েছেন। সে চিন্তা থেকে ১৯৯৭ সালে যুব উন্নয়ন অফিস, শেরপুর থেকে সেলাই বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ব্লক, বাটিকের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ময়মনসিংহ থাকাকালীন সময়ে।
যেহেতু তিনি শিক্ষকতা পেশার প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে এর পাশাপাশি নতুন আরেক পরিচিতি ও কাজের জন্য উদগ্রীব ছিলেন তাই চিন্তা ভাবনা করে প্রথম ৫টা থ্রি পিসে হাতের কাজ করান নিজস্ব ডিজাইনে। আর কলিগদের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেন। তাঁরা তাকে প্রচুর উৎসাহিত করেন। তারাই তার ৫টি জামা থেকে ৪টি জামা একদিনে ক্রয় করেন।
নিজের বেতন থেকে মাত্র ৫০০০ টাকা দিয়ে তিনি তার উদ্যোগ শুরু করেন। বর্তমানে কাজ করছেন হাতের কাজের বিভিন্ন পণ্য যেমন থ্রি পিছ, টু পিছ, শাড়ী, পাঞ্জাবী, বিছানার চাদর, হ্যান্ডপেইন্টের সকল ধরনের পণ্য, সকল ধরণের জামদানী পণ্য, ব্লক, বাটিক পণ্য এবং কাস্টমাইজ বেবীড্রেস নিয়ে। খাবার নিয়ে কাজ করার ইচ্ছেও আছে এবং এজন্য পেইজও অপেন করেছেন।
তার ৪জন কর্মী আছে। আর হ্যান্ডপেইন্টের সকল ধরনের কাজ করে তার ক্লাস সেভেন পড়ুয়া ছেলে সাদিক। অনলাইনে ‘@চারুলতা১৩’ এবং ‘চারুলতা হেলদি ফুড’ নামে তার দুটি পেইজ আছে। উদ্যোক্তা দিনার মায়ের মৃত্যুর সাল ২০১৩, তাই তিনি তার উদ্যোগের নাম রাখেন চারুলতা১৩। দেশের বাইরে ভারত, দুবাই এবং অস্ট্রেলিয়াতে তার পণ্য গেছে। এছাড়া দেশের মধ্যে শেরপুর, জামালপুর, খুলনা, যশোহর, দিনাজপুর, ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় তার পণ্য গেছে। মাসে প্রায় ৫০টি সেট (সব রকমের প্রোডাক্ট মিলিয়ে)পণ্য উৎপাদন হয়। তাছাড়া ক্রয়কৃত পণ্য যেমন জামদানী আছে। মাসে গড় বিক্রি ৩০ থেকে ৪০ হাজার।
নিজের উদ্যোগ সম্পর্কে উদ্যোক্তা দিনার সুলতানা উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘চাকুরির পাশাপাশি নিজ থেকে কিছু করার ইচ্ছে থেকে, ভালোলাগা থেকে নিন্ম আয়ের মানুষদের নিয়ে কাজ করার জন্য মূলত উদ্যোক্তা হয়েছি। ছোট বয়স থেকেই আমার আম্মার করা হাতের কাজ, কাপড়, রং, সুতা, ডলার চুমকি আমার খুব ভালো লাগতো। আর এগুলো সহজেই আমার প্রিয় শেরপুরে পাওয়া যায় তাই আমি এ পণ্য নিয়ে কাজ করছি। ভবিষ্যতে আমি আমার উদ্যোগের জন্য ফ্যাক্টরী তৈরি করতে চাই। আমার ছেলেদের প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে চাই। সমাজের সুবিধা বঞ্চিতদের নিয়ে কাজ করতে চাই, তাদের জন্য ভালো কিছু করতে চাই।’
সাইদ হাফিজ,
উদ্যোক্তাবার্তা