ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) থেকে বিবিএ সম্পন্ন করা এক মেয়ে কাকলী তালুকদার। পড়াশোনা শেষে চাকরি করেছেন প্রায় ৫ বছর। এরপর সাংসারিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চাকরিকে বিদায় জানাতে হয়। অন্য আরও পাঁচ জন্যের মতো ঘরে বসে হতাশায় ঢুকে যাচ্ছেন তিনি। তাই হতাশা নয়, কিছু একটা করতে চেয়েছিলেন। সেই চিন্তা থেকে ব্যবসায় আসা কাকলীর। শুরুটা মোটেই সহজ ছিল না কাকলীর। আশেপাশের লোকজন, আত্মীয়-স্বজন অনেকেই নেতিবাচকভাবে নিয়েছিলেন কাকলীর উদ্যোগ। সবাই ভাবতেন হয়তো স্বামীর আর্থিক সমস্যা আছে তাই কাকলী বিজনেস শুরু করেছেন।

কথা গুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে একটা পেইজ খুললেন ‘Kakoly’s Attire’। ২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে পেজের যাত্রা শুরু করেন। এর আগে একটা গ্রুপ শুরু করেছিলেন। একাই ব্যবসা সামলাচ্ছেন কাকলী। ৩০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করলেও এতটাই কম সময়ে মূলধন প্রায় ৮ লাখ টাকার উপরে। কাকলী মূলত দেশী পণ্য নিয়ে কাজ করেন। শুরুতে ঢাকায় জামদানী শাড়ি, মণিপুরী শাড়ি এবং টাংগাইলের তাঁতের শাড়ি দিয়ে শুরু হলেও বর্তমানে শুধুমাত্র ঢাকায় জামদানী নিয়ে কাজ করছেন। Kakoly’s Attire’ শাড়ির সর্বনিম্ন মূল্য ১৮০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ মূল্য ২৫০০০ টাকা। এর বাইরে যদি কেউ এক্সপেন্সিভ শাড়ি অর্ডার করে তাহলে তৈরি করে দেন ।

ব্যবসা করতে গিয়ে যেটি প্রধান সমস্যা মনে হয়েছে কাকলীর তা হলো এই দেশে মেয়েদের ব্যবসায়ী হিসেবে দেখতে এবং মেনে নেয়ার প্রবণতা খুব কম। সে জন্য কাকলী ব্যবসা করবে এটা অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। এখনো পারেন না অনেকেই। যারা পারেননা তারা কটু কথা শোনান। তাছাড়া সোর্সিং এর জন্য গেলে মেয়ে বলে গুরুত্ব পেতেননা কাকলী। মেয়ে হওয়ার কারণে সর্বক্ষেত্রে ঠকানোর একটা প্রবণতা লক্ষ্য করেন তিনি যা সত্যিই দুঃখজনক।
কাকলীর ব্যবসায় আসার পিছনে পরিবার সবচাইতে বেশি সাপোর্ট দিয়েছে। বিশেষ করে মা, ভাই, হাজবেন্ড, কাজিনরা এবং এখনো দিয়ে যাচ্ছে। লোকজনের কটু কথার জবাব দেয়া থেকে শুরু করে শাড়ি সংগ্রহ করতে যাওয়া পর্যন্ত তারা পাশে থেকেছে সব সময়।

কাকলী তার ব্যবসা নিয়ে অনেক আশাবাদী। বাংলাদেশের ই-কমার্স সেক্টরে একটা লিডিং জামদানী পেজ হিসেবে Kakoly’s Attire কে চিনবে এই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন । তাছাড়া জামদানীতে ফিউশন এনে করেছেন জামদানী গাউন, শার্ট,ওয়ালম্যাট,হিজাব এবং কাজ চলছে জামদানী এক্সক্লুসিভ ব্রাইডাল লেহেঙ্গা এবং পর্দার। নিজস্ব ডিজাইন এর জামদানী শাড়ি তৈরি করা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার একটি অংশ। এছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে দামী জামদানী শাড়ি টি কাকলী’স এটিয়্যার মার্কেটে আনবে এই স্বপ্ন দেখে যাচ্ছেন নিয়মিত। কাকলী ক্রেতা নিয়ে খুশি। ক্রেতারা দারুণ সাড়া দিচ্ছেন আর ব্যবসার ভালো দিক হলো রিপিট কাস্টমার। যারা একবার Kakoly’s Attire থেকে শাড়ি নিয়েছেন তারাই আবার শাড়ির অর্ডার করে।

হয়তো নিজের নয়তো আত্মীয় স্বজনদের জন্য এটাই বড় এচিভমেন্ট কাকলীর। নতুন শাড়ি আপলোড দিতে দেরি হলে অনেক সময় কাস্টমাররা নিজেই ইনবক্সে নক দিয়ে জানতে চায় কখন আসবে শাড়ি। এই অল্প সময়ে এমন আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন। এখন আপাতত নিজেই সব সামলাচ্ছেন। আর হাজবেন্ড যে কিনা পেশায় একজন আইটি কনসালটেন্ট, তিনি পেজের টেকনিকাল দিকটা দেখাশুনা করছেন।
কাকলী উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ক্রেতাদের ভালবাসা, ভরসাই আমার সব চেয়ে বড় সম্মাননা। এর বাইরে ২-৩ টি ইভেন্টে জামদানী নিয়ে স্পীচ দেয়ার সুযোগ পেয়েছি। অনলাইন নিউজ পোর্টালে আমার পেজ এবং আমাকে নিয়ে তিনটা আর্টিকেল পাব্লিশড করছে।

টেকজুম টিভিতে স্বনামধন্য ই-ক্যাব এর ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট রাজিব আহমেদ স্যার এর সাথে জামদানী নিয়ে কথা বলার জন্য আমন্ত্রণ পাওয়া আমার এচিভমেন্ট এর মধ্যে অন্যতম। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে কোনো ট্রেনিং নেননি কিন্তু জামদানী নিয়ে ২০১২ সাল থেকে উঠা-বসা। সেই অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছুই শিখেছেন, জেনেছেন। Women and e-commerce (WE)গ্রুপ থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন, এটা এক ধরনের অনলাইন ট্রেনিং গ্রুপের মতো। গ্রুপের সাধারণ মেম্বার থেকে কাকলী তার পরিশ্রম এবং ডেডিকেশান এর জন্য সম্প্রতি এই উই(WE) ফোরামের ওয়ার্কিং কমিটির ডিরেক্টর হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।গ্রুপে লিড দিচ্ছেন দেশীয় পন্যের একমাত্র স্টার্টআপ টীম কে। নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারা দেশী পণ্য নিয়ে কাজ করেন। সামনে আমাদের দেশী পণ্যের বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কাজ শুরু করার আগে অবশ্যই যে পণ্য নিয়ে কাজ করবেন তার বিষয়ে অন্তত ৬ মাস পড়াশোনা করবেন। হুজুগে নয়, জেনে বুঝে উদ্যোগ নিবেন”।

ব্যাক্তিগত জীবনে কাকলী এক সন্তানের জননী। সন্তানের বয়স দুই বছর। কাকলী জানান প্রোডাক্ট সোর্সিং থেকে শুরু করে স্টার্টআপ ওয়ার্কশপ সব কিছু তিনি তার বাচ্চাকে সাথে নিয়েই করেন।কারণ তিনি মনে করেন উদ্যোক্তাদের জীবনে সন্তান কোনো বাধা নয়,বরং শক্তি। তার ভাষায়, ” বাচ্চা সাথে নিয়ে ব্যবসায়ীক সব কাজ করি। এতে করে চোখের সামনে বড় হচ্ছে আমার সন্তান এবং আমার সন্তান সমতুল্য কোম্পানি।”
বিপ্লব আহসান