শাড়িতেই সাফায়েতের সফলতা

0
উদ্যোক্তা সাফায়েত আল-ফাহিম

সাফায়াত আল ফাহিম বাড়ি চালা, বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ। তিনি একজন উদ্যোক্তা এবং সফল ব্যবসায়ী। ব্যবসা করার মানসিকতা থেকেই হয়েছেন একজন উদ্যোক্তা। নিজেই নিজের অনুপ্রেরণা। তার এই উদ্যোক্তা জীবনের পথ চলার অনুপ্রেরণা কেউ তাকে দেয় নাই। তিনি নিজেই নিজেকে অনুপ্রাণিত করেছেন। নিজের জীবনে কিছু করার তাগিদ থেকেই উদ্যোক্তা জীবনের শুরু। তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের নাম পল্লীসাজ বাংলাদেশ।

তিনি মূলত দেশীয় হ্যান্ডলুম কটন শাড়ি এবং ফেব্রিকে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ভেজিটেবল ডাই থ্রি পিস এবং শাড়ি উৎপাদন করেন। প্রকৃতি থেকে বাছাইকৃত ফুল-ফল, লতা-পাতা, শাক-সবজি, গাছের বাকল ইত্যাদি বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে যে রঙ তৈরি করা হয়, তাই ভেজিটেবল ডাই বা ন্যাচারাল ডাই। উদ্যোক্তা এই রঙ দিয়েই শাড়ি ও থ্রি-পিস এর কাজ করে থাকেন। ফলে সাধারণ কেমিকেল ডাই বা প্রিন্টেড অন্যান্য শাড়ির চাইতে এই শাড়িগুলা ত্বকের জন্য নিরাপদ এবং পরিবেশ বান্ধব।

উদ্যোক্তা বার্তা

সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক রঙ থেকে তৈরি বলে ভেজিটেবল ডাইয়ের গুনগত মান অতুলনীয় এবং খুবই আরামদায়ক। কৃত্রিম রঙের কাপড় শরীরের ত্বকের জন্যও ভালো না। বিশেষত যাদের এলার্জির সমস্যা আছে তারা নিশ্চিন্তে প্রাকৃতিক রঙ দিয়ে তৈরি কাপড় ব্যবহার করতে পারেন। একেকটি কাপড় তৈরির পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগে ৫ থেকে ১০ দিন এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে ১৫/২০ দিন। একটা কাপড় কমপক্ষে ৪/৫ বার ওয়াশ করা হয় এবং ফুটন্ত পানিতে সিদ্ধ করা হয়। প্রকৃতির রঙে রাঙানো বলে ন্যাচারাল/ভেজিটেবল ডাই শাড়ি/ থ্রিপিস অন্যান্য শাড়ি/থ্রিপিছের মতো চকচকে হয়না, একটু ফেড কালারের হয়। হালকা টাইপের প্রকৃতির রং এর মত হয় এবং চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।

উদ্যোক্তার এই রঙ তৈরিতে অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান এর মধ্যে হরিতকি, মেহেদী, তুলসী, কাঁচা হলুদ, হলুদ গুড়া, গাঁদা ফুলের পাপড়ি, অর্জুনের ছাল, লটকন ফলের বীজ, গাবফল, লাল শাক, পানের খয়ের, সুপারি, লোহা, আখের গুড়, সহ নানা উপাদান এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। সম্পুর্ণ হাতে রঙের কাজ এবং সামগ্রিক কাজ করা হয় বিধায়, ভেজিটেবল ডাই কাপড়ে অনেক সময় একটু দাগ লেগে যায় এবং একই কাপড়ে কোথাও কোথাও রঙের একটু তারতম্য হয়৷

উদ্যোক্তা বার্তা

এক একটি পণ্য তৈরি করা কর্মীদের জন্য অনেক বেশি কষ্টকর শারীরিক পরিশ্রমের কাজ। কর্মীদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে যতটা সম্ভব নিখুঁত কাজ করার। যদিও প্রাকৃতিক উপাদান থেকে রঙ আহরণের প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ, তবে সব কিছু ছাপিয়ে এ কাপড়ের বৈশিষ্ট্যই একে করেছে অনন্য। প্রকৃতির সাথে মানুষের যে নিবিড় বন্ধন তারই আকর্ষণে মানুষ বার বার প্রকৃতিকে অনুসন্ধান করে। জীবন রাঙিয়ে তোলার শিক্ষা ও প্রেরণা পায়। প্রকৃতি মানুষকে কাছে টেনে নেয়, কখনও বা মানুষ প্রকৃতিকে আহ্বান জানায়। মানুষ ও প্রকৃতির এই নিবিড় বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতেই উদ্যোক্তা সাফায়েত আল ফাহিম চিন্তা করেন অর্গানিক রঙের কেমিক্যালমুক্ত প্রোডাক্ট এর উদ্যোক্তা হবেন তিনি। কাস্টমারের কাছে পৌঁছে দিবেন অথেন্টিক পরিবেশবান্ধব প্রোডাক্ট।

উদ্যোক্তা বার্তা

প্রথম দিকে অনেক ধরনের সমস্যা ফেইস করেছেন এই উদ্যোক্তা। তারমধ্যে মুলধনের সমস্যা সবচেয়ে বড় ছিল।কিন্তু সমস্ত সমস্যার সমাধান করেছেন নিজের ধৈর্য আর আত্মবিশ্বাস দ্বারা। সমস্যা সমাধানে অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করেছেন তিনি। প্রায় ১ লাখ টাকা নিয়ে শুরু করেন তার প্রথম উদ্যোক্তা জীবনের।আর এখন মূলধন ৫ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। উদ্যোক্তা সাফায়েত উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, “উদ্যোক্তা হবার জন্য কোন ট্রেইনিং প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না৷ তবে নিজের যেকোনো উদ্যোগকে সফল করতে চাইলে ট্রেইনিং এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম বলে মনে করি।”


উদ্যোক্তার কারখানায় বর্তমান কর্মীর সংখ্যা মোট ১১ জন। যারা রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে এক একটি পণ্য উৎপাদন করেন। সাফায়েত তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক পাশে থেকে কাজ করেন। চেষ্টা করেন তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার জন্য। নিজের মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তিনি। তার কাছে জীবন সর্বদাই চ্যালেঞ্জিং। একেক সময় একেক রকম চ্যালেঞ্জ সামনে চলে আসে, সেটা জয় করে টিকে থাকাই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। উদ্যোক্তা স্বপ্ন দেখেন তার প্রতিটি কর্মী যেন দেশের প্রেক্ষাপটে প্রথম শ্রেণির জীবন যাপন করতে পারে। আর নিজের দেশের পণ্যকে বিশ্বের দরবারে উচু করে তুলে ধরাই উদ্যোক্তার জীবনের বড় লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলছেন অদম্য আত্মবিশ্বাসের দ্বারা উদ্যোক্তা সাফায়েত।

মার্জিয়া মৌ
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here