পড়তে বসলেই বইয়ের পেছনে আর্ট করতেন। বাবা অংক করার জন্য খাতা আনলে অংক না করে শুধু আর্টই করে যেতেন। বিভিন্ন জামার ডিজাইন করতেন সেই ডিজাইন গুলো আবার টেইলার্স দোকান মালিক রেখে দিতো। বলতো খুব সুন্দর জামার ডিজাইনগুলো। এই ভাবেই আঁকিবুঁকি আর রঙ নিয়ে শুরু হয় হাতে-খড়ি আর কাজের প্রতি ভালোবাসা।

মা-বাবা আর দু-বোনের সংসারের বড় মেয়ে স্নিগ্ধা হাসান। তেজগাঁও কলেজে পড়াশোনা করেছেন। স্কুল-কলেজে পড়া চলাকালীন হাতের কাজ,বাচ্চাদের পড়ানো, ব্লক, বাটিকের কাজ করতেন। এইচ এস সি পরীক্ষার পর বিয়ে হয়ে যায়। সেটা ছিল স্নিগ্ধার স্বপ্ন পূরণের পথে প্রথম বাধা। কারণ স্বামী এবং পরিবার চাইতেন শুধু পড়াশোনা করবে। মা বাবার স্বপ্ন ছিল ব্যাংকার হওয়া আর স্নিগ্ধার স্বপ্ন ছিল ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়া। কিন্তু দেশীয় পণ্য নিয়ে বা রঙ নিয়ে কাজ করতে কখনোই দিবেন না তারা। স্বামী যখন অফিসে যায় তখন স্নিগ্ধা লুকিয়ে রঙ নিয়ে কাজ করতেন। বাটিকের থ্রি-পিস, শাড়ি তৈরি করতেন। আশে পাশের সবাই স্নিগ্ধার কাজের খুব প্রশংসা করত।

নিজের সন্তান আর পড়াশোনা দু দিক সামলাতে গিয়ে স্নিগ্ধাকে বেশ নাজেহাল অবস্থায় পড়তে হয়। অন্য দিকে উদ্যোক্তার অর্ডার আরও বেড়েই চলেছে। সারাদিন বাচ্চাকে সময় দিয়ে রাত ১০ টার পর থেকে ব্যবসায়ের কাজ করতেন। কাজ করতেন রাত দুটা তিনটা পর্যন্ত। আবার সকাল ৭ টায় ঘুম থেকে উঠে কাজ শুরু করতেন। এভাবেই লড়াই করে কাজ করতেন। কাজের পরিধিও বাড়তে লাগলো।

উদ্যোক্তা স্নিগ্ধা হাসান উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ‘ক্যারিয়ার শুরু করতে গিয়ে পরিবার থেকে শুরু করে, আশে-পাশের সবাই মন্দ কথা বলেছে। অনেকে বাধা দিয়েছিলো এই কাজ শুরু করাতে। কারো কাছে কোন কিছুর সাহায্য চাইলে মন্দ কথা বা কটাক্ষ ছাড়া কিছুই পাইনি। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। যেভাবেই হোক আমি আমার কাজ করে গেছি। মনের বাসনা ফুটে উঠে পণ্যের উপর। তাই আমার ব্যবসার নাম দিয়েছি ‘কারু বাসনা’।

বর্তমানে ঢাকার পাঁচটা শো রুমে তার পণ্য যায় তাছাড়া ঢাকার বাহিরে চট্টগ্রাম, সিলেট, নারায়নগঞ্জেও তার পণ্য যায়। দেশের বাহিরে যেমন মালয়েশিয়া আর অস্ট্রেলিয়াতে দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছেন।

ব্লক, বাটিক, টাইডাই ও হ্যান্ডপেইন্ট এর শাড়ি, থ্রি-পিস, বিছানার চাদর, পর্দা, কুশন কভার ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছেন। বর্তমানে ১৫ জন নারী কর্মরত আছেন তার উদ্যোগে।

উদ্যোক্তা আরও বলেন, ‘ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হতে হলে আগে নিজের প্রতি ফোকাস করতে হবে।আমি পারবো উদ্যোক্তা হতে সেই মনোবল রেখে কাজ করতে হবে। পণ্য, পরিবেশ, ডিজাইন, সময়ের উপর ফোকাস দিতে হবে।

নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমার জায়গায় আসতে হলে প্রথমে নিজেকে তৈরি করতে হবে যে আমি পারবো। যতই বাধা আসুক না কেন। আমাকে হারলে চলবে না। সেই মনোবল নিয়ে কাজ করলে অবশ্যই সফলতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাবে।’

ব্যবসায় প্রচারের জন্য কয়েকটি মেলা করলেন। বিই’য়ার সঙ্গে যোগাযোগ এবং কাজের মানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন। এখন উদ্যোক্তা স্নিগ্ধার পরিবার আর বাধা দেয় না। বরং তারাই বলেন, ‘‘তুমি দেখিয়ে দিয়েছো, তুমিই ঠিক।’’

বর্তমানে স্নিগ্ধা প্ল্যাটফর্ম অব এন্ট্রাপ্রেনিউর গ্রুপের চেয়ারপার্সন ও স্বামীর কোম্পানিতে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন। এছাড়াও তিনি বেশ কয়েকটি গ্রুপের সঙ্গে কাজ করছেন।

 

বিপ্লব আহসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here