উদ্যোক্তা- আতাউর রহমান আল-আমিন

দারিদ্রের কষাঘাত সহ্য করতে না পেরে জীবিকার সন্ধানে কিশোরগঞ্জের নীলগঞ্জ থেকে আল-আমিন প্রায় ২৫ বছর আগে রাজধানীতে পাড়ি জমিয়েছিলেন। চাকরির জন্য ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করেছেন, কিন্তু চাকরি পাননি। গুলিস্তানের পার্কে বসে সময় কাটাতেন। কখনো দিনে শুধুমাত্র একটি বাটারবন খেয়ে সারাদিন পার করেছেন।

বন্ধুর যে মেসটাতে আল-আমিন থাকতেন, সেই মেস এ রাত ১ টার আগে ফিরে যাওয়া যেতো না। কারণ বন্ধু না ফিরলে মেস এ ঢুকা সম্ভব হতো না। পুরোপুরিভাবে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরও নিজেকে পরাজিত মনে করেননি আল-আমিন। দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ছিল জীবন যুদ্ধে জয়ী হবেনই। তাইতো কোনো নিদিষ্ট পারিশ্রমিক ছাড়াই একটি লেদার কোম্পানির কাজ শেখবার জন্য কাজ শুরু করলেন। কয়েকবছর কাজ করে তিন হাজার পাঁচ’শ টাকা জমান তিনি।

২০০০ সালে সেই টাকা দিয়ে একটি মেশিন কিনে ৮০০ টাকার একটি রুম ভাড়া নিয়ে যাত্রাবাড়ি এলাকায় নিজের ব্যবসা শুরু করলেন। চোখ ভড়া স্বপ্ন, জীবন যুদ্ধে জয় করতেই হবে। সাথে নিলেন নিজের আপন ভাইকে। একজন সহযোদ্ধা হিসেবে। লেদারের ফটোফ্রেম, জুয়েলারি বক্স, পেন হোল্ডার, এমন চার-পাঁচটি ক্যাটেগরির গিফট আইটেম বানিয়ে যাত্রা শুরু করলো আল-আমিনের ‘লেদার ক্রাফট’ ।

মোঃ আতাউর রহমান আল-আমিন উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, ১৯৯২ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর তাকিয়ে দেখি পরিবারের অবস্থা ভীষণ শোচনীয়। অর্থনৈতিক কষ্টে সংসার আর চলে না। আমরা ছিলাম ৮ ভাই এক বোন। সিদ্ধান্ত নিই ঢাকায় এসে কিছু করার।

অনেক কষ্টে কাজ শেখার পর নিজের ব্যবসা শুরু করি। ব্যবসার তিন মাস পর সাড়া মিললো। লেদার সেন্টার নামের একটি প্রতিষ্ঠান ৬ হাজার টাকার অর্ডার দিলেন। সাহস পেলাম। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। সাড়া মিললো নারায়নগঞ্জ কুমুদিনী থেকে। ১০ হাজার টাকার পণ্যের অর্ডার। এরপর গুলশানে মাইয়াসির, বনানীর অরণ্য, কারিতাস, গুলশানের ফোক ইন্টারন্যাশনাল এমন সব আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো, আন্তর্জাতিক মানের ফ্যাশন হাউজগুলো থেকে ডাক শুরু হল।

ঢাকার বাইরে সিলেট থেকেও আসতে থাকলো অর্ডার। সিলেটের অপরূপা এবং মনোরম এমন ধরণের শোরুমগুলো থেকেও আসতে থাকলো অর্ডার। এমন সব আন্তর্জাতিক মানের ফ্যাশন হাউজগুলো থেকে যে কল আসছে পণ্যের জন্য সেই পণ্যের গুণগতমান এবং নিজের কঠোর পরিশ্রমে যে প্রডাকশন তার যেনো স্বীকৃতি মিলে অর্ডারগুলোই উদ্যোক্তার সামনে।

যাত্রা শুরুর একবছরের মধ্যেই মাসে ১ লক্ষ টাকার বেশি পণ্যের অর্ডার উদ্যোমী সাহসী মনোবল এবং দৃঢ় মানসিকতা এনে দিলো তরুণ উদ্যোক্তা আল-আমিনের। কর্মী সংখ্যা বেড়ে দাড়ালো ৫জন। ফোক ইন্টারন্যাশনাল গুলশান তাদের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়াতে এক বিশাল অর্ডার মিললো উদ্যোক্তার। ৩৫ হাজার স্কয়ারফিট লেদার কাটতে যে ঘাম উদ্যোক্তা সেদিন ঝরিয়ে ছিলেন সেই অর্ডার তরুণ উদ্যোক্তা আল-আমিনকে জানিয়ে দিলো ৩৯ লক্ষ টাকার একটি আন্তর্জাতিক অর্ডার গ্রহণের এবং সর্বরাহ করবার যোগ্যতা অর্জন করেছেন উদ্যোক্তা আল-আমিন।

জার্মানির ফ্র্যাংকফুট আন্তর্জাতিক লেদার ফেয়ার থেকেই আসলো সেই অস্ট্রেলিয়ার অর্ডারটি। মহিলা অধিদপ্তর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আসলো অর্ডার। একেএকে সব অর্ডার এক উদ্যোক্তাকে জানিয়ে দেয় তার কাজের স্বীকৃতি এবং ব্যবসায়িক সফলতার পথে হাটবার কথা। ১২ জনের মত কর্মী নিয়োগ দিলেন উদ্যোক্তা। সেই সাথে প্রায় ৭ জন কর্মীকে শিখিয়ে পড়িয়ে উদ্যোক্তা তৈরি করেছেন আল-আমিন নিজেই।

আজ নিজে উদ্যোক্তা হয়ে পরিবারকে দাড় করাবার প্রত্যয়ে সফল হয়েছেন উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তা হবার পথে পড়াশোনা এগোনো সম্ভব হয়নি কিন্তু জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। তিন ভাইকে মাস্টার্স পড়াশোনা সম্পন্ন করিয়েছেন উদ্যোক্তা। তৈরি করেছেন কর্মসংস্থান। আজ রাষ্ট্রীয় উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে উদ্যোক্তার পণ্য বিশ্বের জন্য প্রস্তুত হয়। তৈরি হয় দেশের মধ্যে উপহার হিসেবে দেবার জন্য। জীবন যুদ্ধে জয়ী একজন সফল উদ্যোক্তা আতাউর রহমান আল-আমিন আজ সফলভাবে পরিচালনা করছেন তার ব্যবসা।

 

 

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here