লেডিস জিম আর পার্লারে সাবলম্বী তরুণ উদ্যোক্তা তনু

0

ষাটের দশকে রাজধানীতে চীনা এক নাগরিকের মাধ্যমে বিউটি পার্লার গড়ে উঠলেও নগর সংস্কৃতির নতুন ধারায় নব্বইয়ের দশকে এসে দেশে বিউটি পার্লারের সংখ্যা বেড়ে যায়, সেবা নেওয়ার পরিমাণও বেড়ে যায়। তবে নারীরা রূপ চর্চায় যতোটা আগ্রহী ছিলেন সুস্বাস্থ্যের ব্যাপারে বিষয়টা ছিল পুরোটাই উল্টো।

কিন্তু বছর দশেক কিংবা আরও একটু বেশি সময় ধরেই রূপ চর্চার পাশাপাশি নারীরা স্বাস্থ্য সচেতনার বিষয়েও হয়েছেন দায়িত্বশীল। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়, এলাকায় জিম গড়ে উঠলেই, সেখানের নারীদের জন্য আলাদা শাখা থাকছে। কেউবা পুরো জিমটাই নারীদের নিয়ে গড়ে তুলছেন।

তেমনই একজন তরুণ বগুড়ার তাহমিনা আকতার তনু নিজেকে গড়ে তুলেছেন উদ্যোক্তা হিসেবে। চালু করেছেন নারীদের জন্য ফিটনেস ক্লাব-জিম ও বিউটি পার্লার। পাশাপাশি রয়েছে বুটিকস কর্ণারও ।

বগুড়ায় জলশ্বরীতলায় ‘লাবন্য বিউটি ফ্যাশন এন্ড জিম’ নামের প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী তনু। তার লেডিস জিমে বিভিন্ন বয়সের নারীরা নিয়মিত শরীর চর্চার জন্য এসে থাকেন। বর্তমানে উদ্যোক্তা তনুর এই লেডিস জিমের সদস্য সংখ্যা দুই’শ-য়ের বেশি। রয়েছেন ফিটনেস ট্রেইনার।

নারীদের ফিটনেস সেন্টারের ব্যাপারে কেন আকৃষ্ট হলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তনু উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন: ‘আমাদের খাদ্যাভাসের কারণে রোগ বাড়ছে তেমনি ওজনও বাড়ছে। আগে নারীরা নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন ছিলেন না। কিন্তু দিন দিন নারীদের সচেতনতা বাড়ছে। এ কারণেই নারীদের জিমের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। আর এ বিষয়টাকে লক্ষ্য রেখেই আমি নারীদের জন্য ফিটনেস সেন্টার চালু করি।’

তিনি বলেন, ‘‘প্রতিদিন দুইশরও বেশি নানা বয়সী নারী তাদের কাছে অনুশীলন নিচ্ছেন। যা যা প্রয়োজন সব উপকরণ এই জিমে আছে। শারীরিক নানা অসুস্থতার নিরাময় পেতে,দৈনন্দিন কাজের উদ্দীপনা বাড়াতে ,হরমোনাল, ডায়াবেটিস, স্ট্যামিনা তৈরী , হাঁটু ও ঘাড়ে সমস্যা, আর্থ্রাইটিস সহ বিভিন্ন সমস্যার মোকাবেলার জন্য নানা বয়সী মেয়েদেরকে জিমের প্রতি আগ্রহী করে তুলছে। বর্তমানে বগুড়ায় সব স্তরের নারীদের মধ্যেই জিমে আসার প্রবণতা বাড়ছে।’’

উদ্যোক্তা জানালেন জলশ্বরীতলায় ১৭’শ স্কোয়ার ফিটের দুটি ফ্লোর নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ২০১২ সালে তনু তার স্বামীর কাছ থেকে দশ লাখ টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। চাকরি করবোনা, ব্যবসা করবো এই ইচ্ছা শক্তির বলে ও মানসিকতায় উদ্যোক্তা তার উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন।

‘লাবন্য বিউটি ফ্যাশন এন্ড জিম’ এ ভর্তি ফি ৩৫’শ টাকা জন প্রতি, ও মাসিক বেতন জনপ্রতি ১০০০ টাকা করে প্রতি মাসের শুরুতে প্রিপেইড সিস্টেমে।

উদ্যোক্তা তার লেডিস জিমের পাশাপাশি দুটি বিউটি পার্লার ও একটি বুটিকসের ব্যবসাও পরিচালনা করছেন। পার্লারে বর্তমানে কর্মীর সংখ্যা আটজন। এছাড়া বুটিকসে হাতের কাজের পোশাক তৈরির কাজে বর্তমানে ১০০ জনেরও বেশি কর্মী কাজ করছে। পাশাপাশি উদ্যোক্তা ব্যবসার ক্ষেত্রে আরও একটি সম্ভাবনাময় নতুন প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করে চলছেন।

উদ্যোক্তা তনু বলেন, বর্তমানে মহামারিতে মোটামুটি সব কিছু বন্ধ। তাই অনলাইন বিজনেস প্লাটফর্মের উপর গুরুত্বারোপ করে ব্যবসা পরিচালনা করছি।

পরিবার এবং স্বামীর পূর্ণ সহযোগিতার কারনেই তিন সন্তানের জননী উদ্যোক্তা তনু সংসার জীবন সামলিয়ে ব্যবসায় মনোযোগ দেয়া সম্ভব হয়েছে।

উদ্যোক্তা তনু বলেন, ‘আমার হাসবেন্ড খুব সাপোর্টিভ। তার অনুপ্রেরনায় আমি আজকের তনু হতে পেরেছি। সাথে আমার ভরসা আমার মা ছিলেন সব সময় আমার পাশে তার দোয়াই আমি এগিয়ে চলছি।’

তিনি বলেন, সামাজিক, পারিবারিক দায়বদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতা বিশেষ বাধা হয়ে দাঁড়ায় না বলে বর্তমান সময়ে অনলাইন উদ্যোগে নারীদের স্বচ্ছন্দ পদচারণা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে।

সেখ মুসফেক -উস -সালেহীন
উদ্যোক্তা বার্তা
, ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here