উদ্যোক্তা- লিপি সাহা

বর্তমানে দেশে চাকরি ছাড়াও বিভিন্ন আত্ম-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেদের যুক্ত করে এ নারীরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট হচ্ছেন। যার ফলে নারীরা তাদের পারিবারিক ভাবে এবং সামাজে তাদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট ও প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। দেশে নারী-পুরুষে বিভেদ দুর করেসামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ উদ্যোক্তা বার্তায় তুলে ধরবো এমনই একজন সফল নারী যার নাম লিপি সাহা।

লিপি সাহা ১৯৭২ সালের নওগাঁ শহরে পার-নওগাঁয় জন্মগ্রহণ করেন। লিপি সাহা পরিবারে ৪ সন্তানের মধ্যে প্রথম। বাবা ছিলেন সরকারি কর্মচারী। খুব হিসাব আর নিয়মের মধ্যে দিয়ে তাদের সংসার চলতো। উদ্যোক্তার ইচ্ছা ছিল একসময় ডাক্তার হওয়ার,পারিবারিকঅর্থনতিক কারণে সেই ইচ্ছা পূরণ করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। পরিবারে ৩ বোন ১ ভাই এর মধ্যে, সবসময় বাবা মায়ের লক্ষ্য ছিল ছেলে সন্তানের দিকে, ছেলেকেই নিয়ে স্বপ্ন দেখতো বাবা-মা। পরিবারে ভাই বোনদের মধ্যে ছেলে সন্তানের দিকেই সবথেকে বেশি নজর থাকতো। উদ্যোক্তা তাঁর বাবার পরামর্শে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর নওগাঁ শহরে সোনালী দর্জি বিজ্ঞান কলেজে সেলাই এর উপর প্রশিক্ষণ নেন। সেই সময়ে বাবার পরামর্শে সেলাই শিখে আজকে লিপি সাহা নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছেন।

উদ্যোক্তা- লিপি সাহা

২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসাবে লিপি সাহা সমগ্র বাংলাদেশ থেকে সম্মাননা প্রাপ্ত হন। উদ্যোক্তা ১৯৯৪ সালে বিএ পাশ করে সেই বছরেই মার্চ মাসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ে হবার পর উদ্যোক্তার শশুর বাড়ির থেকে সব কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। কোনো রকম চাকরি, সেলাই সহ নানা রকম কাজে শশুর বাড়ির লোকজনের ছিল ঘোর আপত্তি। স্বামীর কাছে সামান্য টাকা পয়সা চাইলে কৈফিয়ত ও অপমান সহ্য করতে হতো। বিয়ে পরবর্তী সময়ে উদ্যোক্তা তাঁর বাবার বাড়ি থেকে সম্পত্তির কোনো অংশ পাননি। যেটুকু পান পণ হিসেবে সেটুকুও চলে যায় স্বামীর হাতে।

এর মধ্যে ১৯৯৫ সালে বড় ছেলে ও ২০০৪ সালে ছোট ছেলের জন্ম হয়। বড় ছেলে হবার পর সংসারের খরচ বৃদ্ধি হওয়ায় দিশেহারা হয়ে সব বাঁধা কে অমান্য করে আবার সেলাই এর কাজ শুরু করেন উদ্যোক্তা লিপি সাহা। স্বামীর নিজের বাড়ি না থাকায়, প্রথমে ভাড়া বাড়ির ড্রইং রুমে সেলাই এর কাজ শুরু করলাম। পরবর্তীতে মহিলা অধিদপ্তর থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে শুরু হয় লিপি সাহার সানন্দা বুটিক হাউজের পথচলা। সমাজে পিছিয়ে পড়া ৪০ জন অবহেলিত নারী কে সঙ্গে নিয়ে সম্মানের সাথে শুরু হয় উদ্যোক্তার বুটিক হাউস।

২০০২ সালে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর হতে রেজিস্টার্ড সংগঠনের আওতায় উদ্যোক্তা পরবর্তীতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের তালিকা ভুক্ত হন। উদ্যোক্তা সেখান থেকে ২০০৪ সালে একটি বিশেষ অনুদান পান।

এরপর উদ্যোক্তা বিউটি পার্লারে উপর প্রশিক্ষণ নেন। ২০০৫ সালে ভাড়া বাড়ির একটি রুমে ছোট পার্লারের ব্যবসা শুরু করেন। পার্লার ব্যবসায় নওগাঁ এলাকায় অল্প কিছুদিনের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হন উদ্যোক্তা লিপি সাহা।

সেই সময় উদ্যোক্তা নওগাঁ শহরে মেইন রোড গীতাঞ্জলি শপিং কমপ্লেক্সে এ একটি ঘর ভাড়া নেন,মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে একটি এসএম ই লোন এর মাধ্যমে। সেখানে বিউটি পার্লার ও বুটিক স্থানান্তর করেন। নাম দেন সানন্দা বুটিক এন্ড বিউটি পার্লার। এখন পর্যন্ত নওগাঁ শহরে খুব সুনামের সাথে চলছে সানন্দা বুটিক এন্ড বিউটি পার্লার। আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তার এখান তৈরিকৃত শাড়ী, থ্রি-পিস, বেডকভার, কুশনকভার এবং বিভিন্ন আকর্ষণীয় শোপিস নওগাঁসহ বগুড়া এবং ঢাকার বিভিন্ন হ্যান্ডিক্র্যাফট শোরুমে সরবরাহ হয়ে থাকে।

ব্যবসার পাশাপাশি উদ্যোক্তা লিপি সাহা সময়োপযোগি এবং আধুনিক দেশীয় রান্নার উপর চর্চা ও রান্না বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকেন। যার ফলশ্রুতিতে এই ব্যবসার পাশাপাশি লিপি সাহা দেশের বিভিন্ন জায়গায় আয়োজিত রান্নার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে বাংলাদেশ মনিটর মালয়েশিয়ান পাম অয়েল রন্ধন শিল্পী হিসেবে প্রথম স্থান অর্জন করেন। উক্ত প্রতিযোগিতায় ২০১৩ সালে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন লিপি সাহা। ২০১৪ সালে রূপচাঁদা কুকিং প্রতিযোগিতায় রাজশাহী বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন এবং সারা বাংলাদেশে ষষ্ঠ স্থান অর্জন করেন।

এছাড়া উদ্যোক্তা দেশের বাইরে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে ভারতের কলকাতায়- ” ‘ZEE বাংলা রান্নাঘর’ এ অংশগ্রহণ করে দুই বার রান্না করার সৌভাগ্য অর্জন করেন। কলকাতায় টিভি সিরিয়াল দাদাগিরি ও দিদি নম্বর-১ প্রোগ্রাম এ অংশগ্রহণ করে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনেন লিপি সাহা। দেশ-বিদেশের অনেক পত্রিকায় লিপি সাহার রান্নার রেসিপি প্রকাশিত হয়।

অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর এ কাজে একান্ত একাগ্রতা লিপি সাহাকে আজকে এতদুর এগিয়ে নিয়ে এসেছে। সানন্দা বুটিক হাউস এখন নওগাঁর এক সুপরিচিত নাম।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here