আপসাইড ডাউনের একটি চিত্র

বিকেলবেলা টং দোকানে বন্ধুদের চা’য়ের আড্ডায় যে শুধু খোশগল্পই হয় তা কিন্তু নয়। সেই আড্ডায় সূত্রপাত হয় অনেক সৃজনশীল পরিকল্পনার। যে পরিকল্পনা গুলো পরবর্তীতে হয়েছে অনন্য সৃষ্টিতে।  ইতিহাস খতিয়ে দেখলে মিলবে এমন ভুরি ভুরি উপমা। বাংলাদেশে প্রথম উল্টো গ্যালারি বা স্থাপনা আপসাইড ডাউন (upside down) যেটার আদি কথা এমন একটা চা-আড্ডাতেই।

চারবন্ধু ইশতিয়াক মাহমুদ অনিক, আব্দুল্লাহ আল মাহাবুব, শাফি আহমেদ জনি এবং আসিফুর রহমান। তারা প্রত্যেকেই স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা শেষ করে স্ব-স্ব কর্মক্ষেত্রে উজ্জ্বল। ছুটির দিন বা অফিসের পর বন্ধুরা মিলে নিয়মিত আড্ডা দিতেন। যা একটা সময় একঘেয়েমিতে পরিনত হয়।

তখন অনিকের কাছ থেকে প্রথম আসে প্রস্তাবনা কিছু একটা করার জন্য। মাহাবুব দিলেন আইডিয়া, স্বীকৃতি মিলবে এমন কিছু করার জন্য। আর সেটা বাস্তবায়নে কাজ করে জনি, আসিফুরসহ চারজনই। ইন্টারনেট থেকে অনেক তথ্য-উপাত্ত বেড় করে বন্ধুরা দিনরাত শলাপরামর্শ করেন তাদের উদ্যোগের। তারপর চারজন মিলেই ব্যবসায়ে অর্থায়ন করেন।

এ প্রসঙ্গে অনিক তরুণদের উদ্দেশ্যে উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, পার্টনারশিপ ব্যবসায় অনেকেরই মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকে কিন্তু ছাড় দেয়ার মানসিকতা থাকলে কোন ঝামেলায় হয়না। বরং ব্যবসা পরিচালনা করা সহজ হয়।

শুরু হয় আপসাইড ডাউনের যাত্রা। এটা ছিলো সেই চার উদ্যোক্তাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। তারা চাইলে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়ে এসে তাদের উদ্যোগ সম্পূর্ণ করতে পারতো। কিন্তু তা না করে নিজেরাই দেশীয় লোকবল, মিস্ত্রি ডেকে সম্পূর্ণটা শেষ করেন।

উদ্যোক্তা শাফি আহমেদ জনি বলেন, আইডিয়া থেকে শুরু করে সবকিছুই আমরা নিজেরাই করেছি। এমনকি আর্কিটেকচারকেও ঠিক ভাবে বোঝানো সম্ভব হয়নি তখন বিভিন্ন ইনটেরিয়রদের সাথে কথা বলে নিজেরাই সব করেছি।

আপসাইড ডাউন সম্পর্কে বলতে গেলে, সেটা এমন একটা গ্যালারি বা প্রদর্শনী স্থান যেখানে ঘুরে আসলে আপনি ভড়কে যাবেন। মনে হবে পৃথিবীটা উল্টো হয়ে আছে। যেনো এটা একটা স্বপ্নের দুনিয়া। আপনি গোলকধাঁধায় আটকে গেছেন। ছোট থেকে বুড়ো সকলেই মজা পাবেন সেই আশ্চর্যের গ্যালারি ঘুরে আসলে। তবে যতো সহজে দেখবেন সেই গ্যালারি ঠিক ততটাই কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তরুণ সেই চার উদ্যোক্তাদের।

সম্পূর্ণ নতুন একটা কনসেপ্ট বাস্তবায়নে কি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে উদ্যোক্তা আব্দুল্লাহ আল মাহাবুব বলেন, যেহেতু আমরা পার্টনারশিপে ব্যবসা শুরু করেছি তাই প্রথমেই সকলের মতামত সমান ভাবে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিতে হয়েছে। নেগেটিভ, পজিটিভ যেটাই হোক। নেগেটিভ পয়েন্ট গুলোকে খুব বিশ্লেষণ করে একটা উপসংহারে গিয়েছি।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই উল্টো গ্যালারি আছে তবে বাংলাদেশের ঢাকা লালমাটিয়ায় প্রথম স্থাপিত এই আপসাইড ডাউন। সেটার প্রবেশ মূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য চারশত টাকা,পাঁচ বছরের নিচে আড়াই শো এবং ৩বছরের নিচে ফ্রী। সপ্তাহে রবি ও সোম বন্ধ থাকে।

ভবিষ্যতে কি ভাবছেন? তার জবাবে উদ্যোক্তারা জানান খুব শীঘ্রই নতুন চমকে আপগ্রেড ভার্শন স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে যেখানে ইলুশনের চেয়ে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার পরিলক্ষিত হবে বেশী। আমাদের দেশে বিনোদনের ক্ষেত্র কম তাই বিনোদনের সর্বোচ্চ ব্যবস্থা করা আমাদের লক্ষ্য।

 

 

বিপ্লব আহসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here