উদ্যোক্তা-- আফরোজা হারুন

বৃক্ষ তিনি শুধু ভালবাসেন না বৃক্ষের সাথে দিল আফরোজ হারুনের আত্মার সম্পর্ক। বৃক্ষপ্রেমী এই মানুষটির সাথে আলাপ হতেই জানলাম বৃক্ষের সঙ্গে মনুষ্য জাতির আদি সম্পর্কের এক যুগান্তকারী নিদর্শন। বৃক্ষ মানুষটিকে এনে দিয়েছে যশ, খ্যাতি, সফলতা এবং নিজ যোগ্যতা প্রমাণের সাথে সাথে আর্থিক সচ্ছলতা।

বাবার বাসার ছোট্ট একটি  বারান্দা থেকে শুরু করেন ছোট একটি নার্সারি। এরপর যখন বাবার বাড়ির পাশে নিজে বাড়ি করেন তখন থেকে মূলত শুরু করেন অর্কিড দিয়ে কিন্তু অর্কিড বাড়তে শুরু করলে সেখানে জায়গা হয়না। তখন থেকেই দিল আফরোজা হারুনের বনসাই বৃক্ষের উদ্যোগের যাত্রা শুরু “নুসাইবা” নামে।

বৃক্ষপ্রীতির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “প্রথম যখন ওমরাহ করতে যাই তখন গাছের প্রতি আমার ভালবাসা প্রিয়জনদের ভালবাসার মতো ছিল, যেখানেই যাই না কেন আমি সব সময় সেই এলাকার নার্সারি খুঁজে বের করি। তাই মদিনায়ও আমি যখন নার্সারিতে যাই তখন সেখান থেকে বিভিন্ন ফলজ গাছের চারা যেমন: জয় ফল, আংগুর ফল ভিন্ন ভিন্ন গাছের চারা নিয়ে আসি। কারণ ছোট গাছগুলোকে কিভাবে যত্ন করে গড়ে তোলা যায় এবং ফুটিয়ে রাখা যায় তাই আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল”।

জীবন সঙ্গীর কাছ থেকেও পেয়েছেন অপার সহায়তা। দেশ-বিদেশে যেখানেই ঘুরতে যেতেন দু’জন এক সাথে নার্সারি ঘুরে দেখতেন। দেশের বাইরে কোনো মিউজিয়াম দেখে তারা যত না আনন্দ পেত নার্সারি দেখে তার চেয়ে অনেক বেশি আনন্দ পেত। দেশের উর্বর মাটির জন্য গাছ সংগ্রহ করে আনার তৃপ্তিটা বেশি উপভোগ করতেন দু’জনই। দিল আফরোজ হারুন আরো বলেন, “বিশেষকরে আমার হাসব্যান্ড একা দেশের বাইরে কাজে গেলেও আমাকে অন্য কোন এক্সপেনসিভ কিছুর চেয়ে গাছ এনে দেয়, কারণ আমরা দু’জন বৃক্ষ ভালবাসি।”

নরসিংদী থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ভিন্ন ধরনের বৃক্ষ সংগ্রহ করতেন তিনি। তাঁর বাড়ির ছাদে নাগা মরিচ গাছে ১২০ টি মরিচ ধরেছে। মরিচ গাছ থেকে শুরু করে কলা গাছ পর্যন্ত আছে তাঁর সংগ্রহে। একদিন তাঁর ছোট বেলার বন্ধু নার্সারি দেখতে এসে বাংলাদেশ অর্কিড সোসাইটি’র আয়োজনে গুলশান ক্লাবে বৃক্ষ মেলাতে অংশ গ্রহণ করতে বলেন তাঁকে। বন্ধুর কথায় সেই মেলায় অংশগ্রহণ করে ব্যাপক সাড়া পেয়ে মূলত বনসাই জগতে বাণিজ্যিক ভাবে আত্মপ্রকাশ করে ‘নুসাইবা’। এরপর তিনি বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করে সুনাম অর্জন করেন।

তিনি মনে করেন ইট-পাথরের এই শহরে যেখানে সবুজের দেখা পাওয়া মুশকিল, সেখানে এই নার্সারিগুলো একটুখানি সবুজের ছোঁয়া নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়। অন্যদিকে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হয় এতে।

মানুষ হিসেবে আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। সামাজিক দায়বদ্ধতাকে এড়িয়ে কখনও ভাল ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব নয় বলেও মনে করেন তিনি।

নবীন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, সফল হতে হলে যে পথ পাড়ি দিতে হয় তা কখনও মসৃণ থাকে না। ধৈর্য, পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও সফলতার মাধ্যমে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। তাই সফলতার দিকে একটি দীর্ঘ পথ প্রত্যাবর্তনের জন্য ইতিবাচক চিন্তা করা জরুরী। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে যদি আপনি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে চিন্তা করতে পারেন তাহলে আপনি সহজেই আপনার লক্ষ্যে পৌছঁতে পারবেন।

দিল আফরোজের দৃঢ়বিশ্বাস ‘অর্থ নয় একজন মানুষ নিজেই নিজের সবচেয়ে বড় সম্পদ’।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here